আদালতে বাল্যবিয়ে, ধর্ষণ মামলার আসামির জামিন

‘বিশেষ প্রেক্ষাপটে’ বিয়ের বয়স কমিয়ে আইন পাস হওয়ার পর দুই পরিবারের সম্মতিতে প্রথম বাল্যবিয়ে হলো চট্টগ্রামের একটি আদালতে, যার ফলে স্বামী হওয়া যুবকটি ধর্ষণ মামলায় জামিনে মুক্তি পেয়েছেন।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 March 2017, 03:07 PM
Updated : 31 March 2017, 06:09 PM

বুধবার চট্টগ্রামের শিশু আদালতে দুই পরিবারের সদস্যদের উপস্থিতিতে কাজী ডেকে এনে ওই বিয়ে দেওয়া হয়। এর পর ধর্ষণের মামলার আসামি গোলাম মোস্তফাকে (২৫) জামিনে মুক্তির নির্দেশ দেন বিচারক জান্নাতুল ফেরদৌস।

ওই আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী অতিরিক্ত পিপি এম এ ফয়েজ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, মোস্তফার সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক থেকে অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়েটি অন্তঃসত্ত্বা হয়।

“ওই অবস্থায় মেয়েটি বিয়ের প্রস্তাব দিলে মোস্তফা তখন রাজি হয়নি। পরে মেয়েটি ধর্ষণের মামলা করলে মোস্তফা গ্রেপ্তার হয়।”

এর মধ্যে মেয়েটি একটি কন্যা শিশুর জন্ম দেয়। এখন উভয়পক্ষ তাদের বিয়েতে আগ্রহ প্রকাশ করে। তাদের সম্মতিতেই বিয়ে দেওয়া হয়েছে।

আদালত সূত্র জানায়, নগরীর আকবর শাহ থানার বেলতলী ঘোনা এলাকার নেভি মতিনের কলোনির বাসিন্দা মোস্তফা। মেয়েটি তার প্রতিবেশী।

মোস্তফার বাবার নাম আবুল কালাম। মেয়েটির বাবা একজন রিকশাচালক।

২০১৪ সালের ২০ অক্টোবর মোস্তফাকে বিয়ের প্রস্তাব দেয় মেয়েটি। মামলার নথি অনুযায়ী, তখন তার বয়স ছিল ১৩ বছর আট মাস। সে হিসাবে মা হওয়া মেয়েটির বয়স এখনও ১৮ বছরের কম।

২০১৫ সালের ২৫ মে আকবর শাহ থানায় মোস্তফার বিরুদ্ধে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণের অভিযোগ এনে মামলা করে মেয়েটি। পরদিন চট্টগ্রামের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৩ এ হাজির করা হলে আদালত মোস্তফাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

গত ৮ জানুয়ারি সমঝোতা প্রস্তাব দিয়ে আদালতে হলফনামা জমা দেয় মেয়েটি। এরই প্রেক্ষিতে বুধবার উভয় পক্ষের উপস্থিতিতে আদালতে বিয়ে পড়ানো হয়। আদালতে একজন কাজী উপস্থিত হয়ে তিন লাখ টাকা কাবিনে তাদের বিয়ে পড়ান। এসময় মেয়েটির কোলে তার এক বছর চার মাস বয়সী শিশুটিও ছিল।

আদালতের সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মেয়েটি পিটিশন জমা দিয়ে আদালতকে জানায়, তার বয়স ১৮ বছর হয়েছে।”

গত ২৭ ফেব্রুয়ারি সংসদে পাস হওয়া বাল্য বিবাহ নিরোধ আইনে ছেলে ও মেয়ের বিয়ের ন্যূনতম বয়স আগের মতো ২১ ও ১৮ বছর বহাল থাকলেও ‘বিশেষ প্রেক্ষাপটে’ কম বয়সেও বিয়ের সুযোগ তৈরি হয়।

আইনের বিশেষ বিধানে বলা হয়, “এই আইনের অন্যান্য বিধানে যাহা কিছুই থাকুক না কেন, কোনো বিশেষ প্রেক্ষাপটে অপ্রাপ্তবয়স্ক কোনো নারীর সর্বোত্তম স্বার্থে আদালতের নির্দেশনাক্রমে এবং মাতা-পিতার সম্মতিক্রমে বিধি দ্বারা নির্ধারিত প্রক্রিয়া অনুসরণক্রমে বিবাহ সম্পাদিত হইলে উহা এই আইনের অধীন অপরাধ বলিয়া গণ্য হইবে না।”

নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৩ এর রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী নজরুল ইসলাম সেন্টু বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “অনেক সময় মানবিক বিষয় সামনে এসে দাঁড়ায়। তখন সেটাই বিবেচনা করতে হয়।”

ওই বিয়ের পর আদালতে ধর্ষণ মামলার ইতি ঘটেছে বলে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হলে ২৯ মার্চ ওই আদালতের বিচারক জান্নাতুল ফেরদৌস বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন।

এদিন বিচারক বলেন, “এখানে কি সাংবাদিকরা উপস্থিত আছেন? আপনাদের উদ্দেশ্যে বলছি- ওই মামলা কিন্তু শেষ হয়নি। মামলা এখনো আছে। ছেলেটিকে শুধু জামিন দেওয়া হয়েছে।

“পরে পরিবারের পরিস্থিতি দেখে মামলার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।”