আনিসুলের নামে কোনো মামলা না থাকলেও মিন্টু ১৬টি মামলার তথ্য দিয়েছেন নির্বাচন কমিশনে।
গত রোববার ছিল ঢাকা ও চট্টগ্রামের তিন সিটিতে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন। এর মধ্যে ঢাকা উত্তরে এখন পর্যন্ত মেয়র পদের লড়াইয়ে আছেন মোট ২১ জন।
বাছাই ও প্রত্যাহার শেষে ৯ এপ্রিল প্রার্থীদের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করবে ইসি।
আদালতের আদেশে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে প্রার্থীদের শিক্ষাগত যোগ্যতাসহ সাত দফা তথ্য দেওয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। বিধান রয়েছে হলফনামার তথ্য জনসম্মুখে প্রচারেরও।
মোহাম্মদী গ্রুপসহ ২২ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জড়িত ‘ব্যবসায়ী’ আনিসুল হক হলফনামায় জানিয়েছেন, তার নামে কোনো মামলা নেই।
তিনি যে ৭৫ লাখ ৮২ হাজার টাকা বার্ষিক আয়ের তথ্য দিয়েছেন তার মধ্যে বাড়ি ভাড়া থেকে ২ লাখ ৪০ হাজার টাকা, ব্যবসায় ২৫ লাখ টাকা, শেয়ারে ১ লাখ ৬১ হাজার টাকা, এফডিআর মুনাফাসহ অন্যান্য খাতে ৪৫ লাখ ৮৯ হাজার টাকা আয়ের তথ্য রয়েছে।
হলফনামার তথ্য অনুযায়ী, আনিসুলের নিজের নামে ২১ কোটি ৭৬ লাখ টাকার অস্থাবর সম্পদ রয়েছে।
এর মধ্যে নগদ টাকা ১ কোটি ৯৫ লাখ টাকা, বন্ড, ঋণপত্র ও কোম্পানির শেয়ার বাবদ ১১ কোটি ৪৮ লাখ টাকা, স্থায়ী আমানত ৩ কোটি ৫৩ লাখ টাকা, স্বর্ণ ও অলঙ্কার মিলিয়ে ১১ লাখ ১১ হাজার টাকার তথ্য রয়েছে। তিনি ঋণ দিয়েছেন ৫ কোটি ৩৬ লাখ টাকা।
এছাড়া স্ত্রী ও ছেলেমেয়ের নামে ৭ কোটি টাকারও বেশি সম্পদ রয়েছে বলে আনিসুল জানিয়েছেন।
তার স্থাবর সম্পত্তির মধ্যে ৩ কোটি ৫৭ লাখ টাকার অকৃষি জমি, স্ত্রীর নামে ৭০ লাখ টাকার বাড়ি/অ্যাপার্টমেন্ট এবং ছেলে ও দুই মেয়ের নামে ৩.৮৫ কাঠা জমির তথ্য হলফনামায় এসেছে।
আনিসুল হকের বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নামে ঋণের পরিমান ১৫১ কোটি টাকার বেশি এবং এর সবই নিয়মিত ঋণ বলে তিনি উল্লেখ করেছেন।
এছাড়া তার জামানতবিহীন দায়ের পরিমাণ ৫ কোটি ২৯ লাখ টাকা।
হলফনামায় আনিসুল নিজের শিক্ষাগত যোগ্যতা উল্লেখ করেছেন ‘এমএ’।
পেশায় ব্যবসায়ী আবদুল আউয়াল মিন্টু ১৪টি প্রতিষ্ঠানের মালিকানা ও বিভিন্ন পদে রয়েছেন।
হলফনামায় দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, মিন্টুর বিরুদ্ধে ১৩টি মামলা রয়েছে, যার মধ্যে তিনি পাঁচটিতে জামিনে রয়েছেন। বাকিগুলো ‘পেন্ডিং’ রয়েছে বলে তিনি কমিশনকে জানিয়েছেন।
এছাড়া আগের তিন মামলার মধ্যে দুটিতে অব্যাহতি পেয়েছেন মিন্টু, একটির কার্যক্রম হাই কোর্টের আদেশে স্থগিত।
৫ কোটি ১৮ লাখ টাকা বার্ষিক আয়ের যে তথ্য মিন্টু হলফনামায় দিয়েছেন তার মধ্যে কৃষি থেকে ৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা, বাড়ি-অ্যাপার্টমেন্ট ভাড়া থেকে ৯ লাখ ৪ হাজার টাকা, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের পরিচালক হিসাবে পরিতোষিক হিসেবে ৯৩ লাখ টাকা, শেয়ারে ২৪ লাখ ৩০ হাজার টাকা; নিজের পেশা থেকে বার্ষিক ২ লাখ ৭২ হাজার টাকা ও অন্যান্য খাতে তিন লাখ ৩৮ লাখ ৩৭ হাজার টাকা আয়ের কথা বলা হয়েছে।
মিন্টু নিজের নামে ৫৩ কোটি ৯৬ লাখ টাকা এবং স্ত্রীর নামে 8 কোটি ৩৬ লাখ টাকার অস্থাবর সম্পদ থাকার কথা বলেছেন।
এছাড়া তার নিজের নামে রয়েছে ৪ কোটি ৫০ লাখ টাকার কৃষি-অকৃষি জমি, স্ত্রীর নামে রয়েছে ৫০ লাখ টাকার অকৃষি জমি এবং যৌথ মালিকানায় ৬১ লাখ টাকার বাড়ি রয়েছে।
মিন্টুর অস্থাবর সম্পত্তির মধ্যে রয়েছে নগদ টাকা ৮ লাখ ৫০ হাজার টাকা, ব্যাংকে জমা ৬৮ লাখ ৮৯ হাজার টাকা এবং বন্ড ও কোম্পানির শেয়ার মিলিয়ে আছে ৪০ কোটি ৯৮ লাখ টাকা।
তার বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নামে ঋণের পরিমাণ ২২৯ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। আর বিভিন্ন খাতে মিন্টুর দায়ের পরিমাণ দেখানো হয়েছে ৬ কোটি টাকা।
মিন্টু তার শিক্ষাগত যোগ্যতার ঘরে লিখেছেন ‘এমএসসি’।
আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য ও মেয়র প্রার্থী সারাহ বেগম কবরীকে বাংলাদেশের মানুষ চেনে চলচ্চিত্র অভিনেত্রী হিসাবে।
হলফনামায় নিজের চলচ্চিত্র প্রযোজনা সংস্থা ‘কে প্রোডাকশন’ এর কথা কবরী উল্লেখ করেছেন।
নারায়ণগঞ্জের এই সাবেক সাংসদ তার বার্ষিক আয়ের হিসাবে কৃষিখাত থেকে ২ লাখ ৪০ হাজার টাকা, ব্যবসা থেকে ৫ লাখ ৪২ হাজার ৪৪২ টাকা, শেয়ার সঞ্চয়/ব্যাংক আমানতে ২ লাখ ১ হাজার ৭৫ টাকা, পেশা থেকে ৪ লাখ ২৯ হাজার টাকা ও অন্যান্য থেকে ৫ লাখ ৬৭ হাজার ৫৬ টাকার তথ্য দিয়েছেন।
কবরীর অস্থাবর সম্পদের মধ্যে রয়েছে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা ৭২ লাখ ৪৪ হাজার ৩৫ টাকা, ২৮ লাখ ৩৪ হাজার টাকার বৈদেশিক মুদ্রা, ১৬ লাখ ৮৮ হাজার ৯৫৭ টাকার স্থায়ী আমানত এবং ১ লাখ ২০হাজার টাকার স্বর্ণ।
এছাড়া স্থাবর সম্পদের মধ্যে রয়েছে গুলশানে একটি ৬ তলা বাড়ি। শিক্ষাগত যোগ্যতার জায়গায় কবরী লিখেছেন, তিনি অষ্টম শ্রেণী পাস।
উত্তরে মিন্টুর ছেলে তাবিথ আউয়ালও শেষ মুহূর্তে প্রার্থী হয়েছেন। বাবা বিএনপির রাজনীতিতে থাকলেও তাবিথ সরাসরি কোনো দলের সঙ্গে নেই।
মাল্টিমোড গ্রুপের উপ প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা তাবিথ আউয়ালের নামে কোনো মামলা নেই। তিনি নিজেও ১৭টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জড়িত।
হলফনামায় তিনি নিজের বার্ষিক আয় দেখিয়েছেন সোয়া কোটি টাকা।
তার অস্থাবর সম্পত্তির তালিকায় রয়েছে ১৪ কোটি ৮১ লাখ টাকার বন্ড ও শেয়ার। অন্যান্য খাতে রয়েছে আরও ১৫ কোটি ২৫ লাখ টাকার সম্পদ। তার স্ত্রীর নামে রয়েছে ৬০ ভরি স্বর্ণ।
জাতীয় পার্টি সমর্থিত মেয়র প্রার্থী বাহাউদ্দিন আহমেদ তার শিক্ষাগত যোগ্যতার জায়গায় লিখেছেন- ‘অক্ষরজ্ঞান সম্পন্ন’।
সংসদে বিরোধী দলে থাকা জাতীয় পার্টির এই সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ব্যবসা ও ঠিকাদারীর সঙ্গে যুক্ত।
বাড়ি ভাড়া ও অন্যান্য খাত থেকে তিনি বছরে আয় দেখিয়েছেন ৫ লাখ ২৯ হাজার ২০০ টাকা। তার অস্থাবর সম্পদের মধ্যে রয়েছে নগদ ৪ লাখ ৪৫ হাজার ৯০৫ টাকা, ব্যবসায়ী মূলধন ১২ লাখ ৭৮ হাজার ৮৭ টাকা এবং ১ লাখ ৮০ হাজার টাকার স্বর্ণ। এছাড়া স্ত্রীর নামে রয়েছে ৩৫ ভরি স্বর্ণ।
বাহাউদ্দিনের স্থাবর সম্পদের মধ্যে একটি দ্বিতল ভবন, ২২টি আধাপাকা গুদাম ও ঢাকায় একটি ফ্ল্যাটের কথা হলফনামায় বলা হয়েছে।
বিতর্কিত ব্যবসায়ী মুসা বিন শমসেরের ছেলে ববি হাজ্জাজ দলের অমতে ঢাকা উত্তরের মেয়র প্রার্থী হয়ে ইতোমধ্যে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের বিশেষ উপদেষ্টার দায়িত্ব থেকে বাদ পড়েছেন।
এমবিএ ডিগ্রিধারী ববি তার হফলনামায় পেশার ঘরে শিক্ষকতার কথা লিখেছেন। তবে একইসঙ্গে ডেটকো প্রাইভেট লিমিটেডের পরিচালক পদেও আছেন তিনি।
শিক্ষকতা থেকে ববি হাজ্জাজের বার্ষিক আয় ৪ লাখ ১৪ হাজার টাকা। এছাড়া সঞ্চয়পত্র/ব্যাংক আমানত হিসাবে ২ লাখ ১৩ হাজার ৫৭২ টাকার তথ্য দিয়েছেন তিনি।
তার অস্থাবর সম্পদের মধ্যে রয়েছে নগদ ৬০ হাজার টাকা, ৫ হাজার ৯৮৯ ডলার, ব্যাংকে জমা ৬৯ হাজার ৬২৫ টাকা, ৫০ হাজার টাকার বন্ড ও একটি গাড়ি।
স্ত্রীর নামে জমা রয়েছে ২ লাখ ৪ হাজার ১০২ টাকা ও ১০০ ভরি স্বর্ণ।
স্থাবর সম্পদের মধ্যে ববি হাজ্জাজের নামে একটি ফ্ল্যাট রয়েছে।