ড. রফিকুল ইসলাম একাত্তরে যুদ্ধাপরাধ সংঘটনের অভিযোগের মুখে থাকা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রয়াত এক শিক্ষকের ভাই জানার পর তাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল ও প্রযুক্তি অনুষদের ডিন পুনঃনির্বাচনে নীল দলের বৈঠকে আপত্তি উঠেছে।
Published : 08 Jan 2017, 02:52 AM
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের খাদ্য ও পুষ্টি বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক নাজমা শাহিনের সভাপতিত্বে শনিবার বিকালে মোজাফফর আহমদ মিলনায়তনে ওই বৈঠকে নীল দলের সংশ্লিষ্ট অনুষদ কমিটিতে পর্যালোচনার জন্য প্রস্তাবটি ফেরত পাঠানো হয়।
রোববার নীল দলের কেন্দ্রীয় বৈঠকে প্রকৌশল ও প্রযুক্তি অনুষদের ডিন নির্বাচনে প্রার্থী বাছাইয়ের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হতে পারে বলে বৈঠকে উপস্থিত একাধিক শিক্ষক জানিয়েছেন।
ফলিত রসায়ন ও রাসায়নিক প্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক রফিকুল আওয়ামী লীগ সমর্থক শিক্ষকদের নীল দলের সমর্থন নিয়েই এর আগে এই অনুষদের ডিন হয়েছিলেন।
ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. আবদুর রহিম শনিবার রাতে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ড. রফিকুল যুদ্ধাপরাধ সংঘটনের অভিযোগের মুখে থাকা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের প্রয়াত শিক্ষক রেজাউল করিমের ভাই- সম্প্রতি তথ্যটি নজরে আসায় তার ডিন পুনর্নির্বাচনের প্রস্তাবে আপত্তি ওঠে বৈঠকে। নীল দলের অনেক শিক্ষক তাতে সমর্থন দেন।”
দৈনিক জনকণ্ঠে প্রকাশিত ‘সেই রাজাকার’ শিরোনামের একটি প্রতিবেদন উল্লেখ করে তিনি বলেন, “১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় মাগুরায় রিজু নামে পরিচিত রেজাউল করিম যুদ্ধাপরাধ করেছিলেন বলে অভিযোগ ছিল। মুক্তিযুদ্ধের পর তিনি পালিয়ে চট্টগ্রামে গিয়ে রেজাউল করিম মামুন নাম নেন।”
তার বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগের কথা জানার পর ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে তাকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বরখাস্ত করা হলে তিনি হাই কোর্টে গিয়ে তাতে স্থগিতাদেশ পান। বরখাস্তের বিষয়টি আদালতে নিষ্পত্তি হওয়ার আগে ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর তার মৃত্যু হয়। প্রতিবাদের মুখে গ্রামের বাড়িতে তার দাফন হয়নি, ফেনীতে নিয়ে তাকে দাফন করা হয়।
এ বিষয়ে বৈঠকে উপস্থিত সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মশিউর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “নীল দল মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পক্ষে, বাহাত্তরের সংবিধানের ভিত্তিতে অসাম্প্রদায়িক আদর্শে বিশ্বাস করে।
“প্রধানমন্ত্রী যেখানে নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করছেন, তাদের বিরুদ্ধে লড়ছেন, সেই সময় তাদের কারও পরিবারের সদস্যকে নীল দলের পক্ষ থেকে ডিন প্রস্তাব করা হবে- এটাতো হতে পারে না। নীল দলে ভালো ভালো লোক আরও আছে। তাদের বাদ নিয়ে যুদ্ধাপরাধের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ আছে এমন পরিবারের সদস্যদের কেন ডিন করা হবে?”
‘যুদ্ধাপরাধী দল জামায়াত এবং বিএনপি সমর্থিত সাদা দল থেকে নীল দলে আসা সুবিধাবাদী অনুপ্রবেশকারী গোষ্ঠী’ তাদের অবস্থান পাকাপোক্ত করতে এই প্রস্তাবকে সমর্থন করেন বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
অধ্যাপক মশিউর বলেন, সম্প্রতি মিজানুর রহমান নামে সাদা দল ছেড়ে আসা ওই অনুষদের এক জুনিয়র শিক্ষককে বিশেষ কোটায় সিন্ডিকেট সদস্য করা হয়েছে।
এ ধরনের ‘অনুপ্রবেশকে’ অপ্রত্যাশিত, অনভিপ্রেত ও চেতনাবিরোধী আখ্যায়িত করে ‘সুবিধাবাদী এই গোষ্ঠীর’ মাধ্যমে প্রভাবিত না হতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আ আ আরেফিন সিদ্দিকের প্রতি আহ্বান জানান আওয়ামী লীগ সমর্থক এই শিক্ষক।