সমিতির নতুন সভাপতি হয়েছেন দুর্যোগ বিজ্ঞান ও ব্যবস্থাপনা বিভাগের অধ্যাপক এ এস এম মাকসুদ কামাল, যিনি গত তিন মেয়াদে সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। এবার সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন আইন বিভাগের অধ্যাপক মো. রহমত উল্লাহ, যিনি গত কমিটিতে সদস্য হিসেবে ছিলেন।
তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় অধ্যাপক মাকসুদ কামাল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তিযুদ্ধে চেতনার ধারক শিক্ষকরা নীল দলকে বিজয়ী করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠদান ও উন্নয়নসহ সামগ্রিকভাবে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় থাকায় নীল দলের নিরষ্কুশ জয় হয়েছে।”
বিএনপি-জামায়াতপন্থি শিক্ষকদের সাদা দল গতবার একটি সদস্য পদে জয় পেলেও এবার সব পদেই তাদের প্রার্থীদের ভরাডুবি হয়েছে।
সাদা দলের সভাপতি পদপ্রার্থী অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “শিক্ষকরা যাদের ভালো মনে করেছেন, তাদের ভোট দিয়েছেন। শিক্ষকরা তাদের পেশাগত স্বার্থ রক্ষায় ভোট দিয়েছেন।”
গত দুই বছর ধরে আওয়ামীসমর্থকদের থেকে আলাদা হয়ে নিজস্ব প্যানেলে নির্বাচন করা বামপন্থি শিক্ষকদের গোলাপী দল থেকেও কেউ জয়ের দেখা পাননি।
ভোটারদের এই রায় মেনে নিয়েছেন জানিয়ে গোলাপী দলের সভাপতি পদপ্রার্থী অধ্যাপক এম এম আকাশ বলেন, “এটা গণতন্ত্রের রায়, এটা মেনে নিয়েছি। যে শিক্ষকরা আমাদেরকে ভোট দিয়েছেন, তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাব ভবনে বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা থেকে উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট দেন সমিতির সদস্যরা। ভোট চলে দুপুর ২টা পর্যন্ত। গণনার পর বিকালে ফল ঘোষণা করেন এ ভোটের নির্বাচন কমিশনার রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. তোফায়েল আহমেদ চৌধুরী।
তিনি জানান, সমিতির ১ হাজার ৯৫০ জন ভোটারের মধ্যে ১ হাজার ৫০২ জন এবার ভোট দিয়েছেন। অর্থাৎ, ভোট পড়েছে ৭৭ শতাংশ।
গত তিন মেয়াদে সমিতির নেতৃত্বে ছিলেন নীল দলের অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ ও মাকসুদ কামাল। ভোটাররা এবারও নীল দলেই আস্থা রেখেছেন।
বিজয়ীদের অভিনন্দন জানিয়ে নির্বাচন কমিশনার বলেন, “নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করা চেষ্টা করেছি। এই নির্বাচনে যারা আমাকে সহযোগিতা করেছেন তাদের আমি কাছে কৃতজ্ঞ।”
সভাপতি
মাস্টারদা সূর্যসেন হলের হলের প্রাধ্যক্ষ মাকসুদ কামাল নীল দলের প্রার্থী হিসেবে শিক্ষক সমিতির সভাপতি হওয়ার পথে ৮৯০ ভোট পেয়েছেন।
তার সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় থাকা ব্যবস্থাপনা বিভাগের সিরাজুল ইসলাম ৩৫৯ ভোট এবং অর্থনীতির অধ্যাপক এম এম আকাশ ১৭৩ ভোট পেয়েছেন।
সহ-সভাপতি
এই পদে নীল দলের প্রার্থী ব্যাংকিং অ্যান্ড ইন্স্যুরেন্স বিভাগের শিবলী রুবাইয়াতুল ইসলাম ৭৯৫ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। তার প্রতিদ্বন্দ্বী সাদা দলের প্রার্থী প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের লায়লা নূর ইসলাম ৪৫৪ ভোট এবং গোলাপী দলের প্রার্থী সমাজ বিজ্ঞানের নেহাল করিম ১৫২ ভোট পেয়েছেন।
সাধারণ সম্পাদক
নতুন সাধারণ সম্পাদক রহমত উল্লাহ কবি জসিম উদ্দিন হলের প্রাধ্যক্ষ। নীল দলের এই প্রার্থী ৭৩২ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন।
এই পদে সাদা দলের প্রার্থী পরিসংখ্যান, প্রাণপরিসংখ্যান ও তথ্য পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষক মো. লুৎফর রহমান ৫৮৮ ভোট পেয়েছেন। গোলাপী দলের প্রার্থী আইন বিভাগের শিক্ষক শেখ হাফিজুর রহমান কার্জন পেয়েছেন ১০২ ভোট।
যুগ্ম-সম্পাদক
টেলিভিশন ও চলচ্চিত্র বিভাগের অধ্যাপক আবু জাফর মো. শফিউল আলম ভুঁইয়া নীল দল থেকে ৮৮৪ ভোট পেয়ে যুগ্ম-সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন।
সাদা দলের প্রার্থী সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের গোলাম রব্বানী ৩৮০ ভোট এবং গোলাপী দলের প্রার্থী পালি অ্যান্ড বুদ্ধিস্ট বিভাগের সুমন কান্তি বড়ুয়া ১২০ ভোট পেয়েছেন।
কোষাধ্যক্ষ
নীল দলের প্রার্থী ফলিত গণিত বিভাগের চেয়ারম্যান মো. আব্দুস ছামাদ ৮১৬ পেয়ে সমিতির নতুন কোষাধ্যক্ষ হয়েছেন। তার সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় থাকা সাদা দলের প্রার্থী মার্কেটিং বিভাগের মো. মোর্শেদ হাসান খান ৪৬৭ ভোট পেয়েছেন। আর গোলাপী দলের প্রার্থী ব্যবস্থাপনা বিভাগের মোহাম্মদ মহিউদ্দীন পেয়েছেন ১২০ ভোট।
সদস্য
দশটি সদস্য পদে নির্বাচিত সবাই নীল দলের প্রার্থী। তাদের মধ্যে গতবারের সভাপতি অর্থনীতি বিভাগের ফরিদ উদ্দিন আহমেদ এবারের নির্বাচনের সবচেয়ে বেশি- ৯৯৭ ভোট পেয়েছেন।
নবনির্বাচিত বাকি নয় সদস্য হলেন- লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি ইনস্টিউটিটের পরিচালক মো. আফতাব আলী শেখ (৯৫৭ ভোট), খাদ্য ও পুষ্টি বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের মো. নিজামুল হক ভূঁইয়া (৮৮৩ ভোট), দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ইনস্টিটিউটের মাহবুবা নাসরীন (৮১৪ ভোট), রোবটিক্স ও মেকাটনিক্স বিভাগের চেয়ারম্যান লাফিফা জামাল (৭৯৯ ভোট), ইংরেজি বিভাগের তাজিন আজিজ চৌধুরী (৭৯৭ ভোট), পালি অ্যান্ড বুদ্ধিস্ট বিভাগের চেয়ারম্যান বিমান চন্দ্র বড়ুয়া (৭৮৪ ভোট), উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের মো. ইমদাদুল হক (৭৭৬ ভোট), বাংলার বায়তুল্লাহ কাদেরী (৭৪৭ ভোট), ক্লিনিক্যাল ফার্মেসি ও ফার্মাকোলজি বিভাগের এস এম আব্দুর রহমান (৬৮৫ ভোট)।