কাঁচা মরিচের ‘ঝাল’ কমল অভিযানে

চট্টগ্রামে রোজার বাজারে কাঁচা মরিচের দাম বাড়িয়ে বিক্রেতাদের ‘লাল হওয়ার’ চেষ্টায় ছেদ পড়েছে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানের কারণে।   

মিঠুন চৌধুরীমিঠুন চৌধুরীবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 June 2015, 11:37 AM
Updated : 19 June 2015, 11:37 AM

রোজার প্রথম দিন শুক্রবার সকালে চট্টগ্রামের প্রধান কাঁচাবাজার রিয়াজ উদ্দিন বাজারে প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছিল ৬০ টাকায়। দুই ঘণ্টার অভিযান শেষে সেই মরিচের দামই ২০ টাকায় নেমে আসে।

সকাল ১০টায় এই অভিযানের শুরু করেন চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আশরাফুল আলম। সোয়া ১১টার দিকে তার সঙ্গে যোগ দেন চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মেজবাহ উদ্দিন নিজে।

বেশি দামে মরিচ বিক্রির অভিযোগে তিন বিক্রেতাকে মোট ৪৫ হাজার টাকা জরিমানা করেন তারা। পাঁচজনকে আটক করে দেওয়া হয় বিভিন্ন মেয়াদের কারাদণ্ড।

অভিযানের শুরুতেই কাঁচা মরিচ ও শসার আড়ত মেসার্স বায়েজিদ স্টোরে যায় ভ্রাম্যমাণ আদালত। সেখানে প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ ৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছিল।

বিক্রেতা মো. আতাহার ভ্রাম্যমাণ আদালতকে জানান, বগুড়া থেকে ‘বেশি দামে’ মরিচ কিনতে হয়েছে।

তার বক্তব্য শুনে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বগুড়ার পাইকার বেপারীর সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেন। এরপর ওই আড়তে থাকা তিন বস্তা কাঁচা মরিচ বিক্রি করার নির্দেশ দেন ৩০ টাকা কেজি দরে।

অভিযানের শেষ দিকে ওই আড়তে গিয়ে দেখা যায় ৫০ টাকা কেজি দরে এক বস্তা মরিচ বিক্রি করা হয়েছে। এরপর বিক্রেতা মো. আতাহারকে আটক করে ভ্রাম্যমাণ আদালত।

মেম্বার বাণিজ্যালয় নামে আরেক আড়তে কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছিল ৪৫ টাকা কেজি দরে।

নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আশরাফুল আলম বলেন, “পরশু এই আড়তে ২০-২৫ টাকায় মরিচ বিক্রি হয়েছে। সরবরাহও ভাল। অতিরিক্ত মুনাফার জন্য দুই দিনের ব্যবধানে মরিচের দ্বিগুণ দাম নেওয়া হচ্ছে।”

বেশি দাম রাখায় মেম্বার বাণিজ্যালয়ের মালিক মো. জসিম উদ্দিনকে ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

এরপর মেসার্স মিতালী বাণিজ্যালয়কে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করে ভ্রাম্যমান আদালত।

ইলিয়াস মিঞা সওদাগরের আড়তে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছিল মানভেদে ৩৫ থেকে ৪৫ টাকা কেজি দরে। ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্দেশের পর বিক্রেতা ৩০ টাকা ও ৪২ টাকা কেজিতে বিক্রি শুরু করেন।

ততক্ষণে অভিযানের খবর পুরো বাজারে ছড়িয়ে পড়েছে। মুক্তা বাণিজ্যালয় ও নিউ সুমন ট্রেডার্সে গিয়ে দেখা যায়, তারা কাঁচা মরিচ বিক্রি করছে মানভেদে ২০ থেকে ৩০ টাকা কেজিতে।

জেলা প্রশাসক মেজবাহ উদ্দিন অভিযানে যোগ দেন বেলা ১১টার দিকে।  

বাজারে ঘুরে ঘুরে তিনি খুচরা বিক্রেতাদের কাছে কাঁচা মরিচের দাম জানতে চান। আমিন নামের এক বিক্রেতা জানান, আরমান ট্রেডার্সের কাছ থেকে ৪৫ টাকা কেজি দরে কিনে প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ তিনি বিক্রি করছেন ৫০ টাকায়।

এরপর আরমান ট্রেডার্স থেকে বিক্রেতা মো. জনি ও আমিনকে আটক করা হয়। তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে আড়তদার সেলিম বাণিজ্যালয়ের ব্যবস্থাপক রতন চক্রবর্তীকেও আটক করে ভ্রাম্যমাণ আদালত।

আবদুল মান্নান নামের এক খুচরা বিক্রেতা জেলা প্রশাসককে জানান, ৪৪ টাকা কেজি দরে তিনি এক মণ মরিচ কিনেছেন পেয়ারা বাবা বাণিজ্যালয় থেকে।

আবদুল মান্নানকে সঙ্গে নিয়ে ওই আড়তে গেলে আড়তের লোকজন প্রথমে দাবি করে, মান্নানের কাছে তারা মরিচ বিক্রিই করেনি। আবার পরে বলে, সকালে গাড়ি কম আসায় মরিচের দাম বেশি ছিল।

এরপর জেলা প্রশাসকের নির্দেশে পেয়ারা বাবা বাণিজ্যালয়ের ব্যবস্থাপক মো. রফিককে আটক করা হয়।

অভিযান শেষে জেলা প্রশাসক সাংবাদিকদের বলেন, “ঘণ্টাখানেকের মধ্যে ৬০ টাকার কাঁচা মরিচ ২০ টাকায় বিক্রি হল। যখনই বাজার মনিটরিং অভিযান শুরু হল, তখনই দাম কমে গেছে। এ থেকে বোঝা যায় তারা কম দামেই বিক্রি করতে পারত।”

তিনি জানান, বিক্রির হিসাব রাখতে এই ব্যবসায়ীরা তিন রকমের খাতা রাখে। এর একটির সঙ্গে অন্যটির মিল নেই।

“এটা অমানবিক ও অনৈতিক কাজ। খুচরা এবং পাইকারিতে দামের অনেক ব্যবধান। পণ্যমূল্য টাঙিয়ে রাখার নিয়ম থাকলেও তারা তা মানে না। পুরো রোজার মাসই আমাদের অভিযান চলবে।”

আশরাফুল আলম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “দেশে কোনো প্রাকৃতিক বিপর্যয় নেই, মহাসড়কেও কোনো ভোগান্তি নেই; তারপরও অতিরিক্ত মুনাফার লোভে এমন দামে বিক্রি হচ্ছে।”

তিনি জানান, আরমান ট্রেডার্সের জনিকে ১৫ দিন, এবং আতাহার, রতন, আমিন ও রফিককে ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিচারে সাত দিন করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

রিয়াজ উদ্দিন বাজারের নিয়মিত ক্রেতা শামসুদ্দিন বলেন, “ব্যবসার নামে এখানে জনসাধারণের পকেট কাটা চলে। এরকম অভিযান প্রতিদিন চললে ভালো হয়।”