উত্তরের সঙ্গে দর কষাকষির সিদ্ধান্ত দক্ষিণের 

উত্তরের দেশগুলো থেকে সাহায্য ও বাণিজ্য বৃদ্ধির উপায় বের করার প্রস্তাব রেখে দক্ষিণ গোলোর্ধের অর্থাৎ এশিয়া-আফ্রিকান দেশগুলোর সহযোগিতা উন্নয়নের কয়েকটি কৌশল চূড়ান্ত করার মধ্য দিয়ে ঢাকায় দুই দিনব্যাপী সাউথ-সাউথ শীর্ষ সম্মেলন রোববার শেষ হয়েছে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 May 2015, 06:41 PM
Updated : 18 May 2015, 06:41 PM

এক মেরুকেন্দ্রিক বিশ্ব রাজনীতিতে চীন-ভারত প্রভাবিত দক্ষিণের দেশগুলোর মধ্যে সহযোগিতা জোরদারের দৃশ্যমান প্রচেষ্টা আফ্রিকা ও এশিয়ার দেশগুলোর এই সম্মেলন।

রোববার সোনারগাঁও হোটেলে সম্মেলনের উদ্বোধন করেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সোমবার সন্ধ্যায় সম্মেলন শেষে সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, দক্ষিণের দেশগুলোর উন্নয়নের জন্য উত্তরের তথা উন্নত দেশগুলোর সহায়তা প্রয়োজন। দীর্ঘদিন ধরে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হচ্ছে।

“কিন্তু উন্নত দেশগুলো স্বল্পোন্নত দেশগুলোর(এলডিসি) উন্নয়নে সহায়তার যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, তা তারা দিচ্ছে না। তাদের কাছ থেকে আমাদের মতো দেশগুলোর যে সহায়তা পাওয়া উচিত, তা কিন্তু আমরা পাচ্ছি না।”

“তারা ওয়াদা করেছিল যে, তাদের মোট সম্পদের দশমিক ৭ শতাংশ আমাদের মতো দেশগুলোর উন্নয়নে দেবে। কিন্তু তারা দিচ্ছে মাত্র দশমিক ২ শতাংশ।”

মূলত এনিয়ে উত্তরের দেশগুলোর সঙ্গে দর কষাকষির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে ঢাকায় দুই দিনের সম্মেলনে, যা জুলাই মাসে ইথিওপিয়ার রাজধানী আদ্দিস আবাবায় অনুষ্ঠেয় সাউথ-সাউথ কোঅপারেশনের তৃতীয় আন্তর্জাতিক সম্মেলনে জোরালোভাবে উপস্থাপন করা হবে বলে জানান মুহিত।

একইসঙ্গে এলডিসিগুলোকে নিজেদের উন্নয়নের পথ তৈরির তাগিদও দেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।

“উন্নয়নের জন্য অর্থায়নটা হলো বড় চ্যালেঞ্জ। অভ্যন্তরীণ সম্পদ সংগ্রহ ও বৈদেশিক সহায়তার পাশাপাশি তাই পারস্পরিক কারিগরি ও প্রযুক্তি সহায়তাও এখন জরুরি।”

“আর এ সহায়তা শুধু সরকার থেকে সরকার পর্যায়ে নয়, বেসরকারি পর্যায়ের ভূমিকাও যেন থাকে সে ব্যাপারেও গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। তবে এর মধ্যেও সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে বাণিজ্য।

“বাণিজ্যই হলো প্রধান। আর বাণিজ্য বৃদ্ধি মানেই উন্নয়ন।”

অর্থমন্ত্রী বলেন, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনী শক্তি এ তিনটি টেকসই উন্নয়নের চাবিকাঠি। দক্ষিণ-দক্ষিণ ও ত্রিমুখি সহযোগিতার মাধ্যমে উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে এ তিনের বিনিময় দরকার। এতে বাংলাদেশসহ স্বল্পোন্নত দেশগুলো লাভবান হবে।

সম্মেলনের প্রতিপাদ্য ছিল- বর্তমান ও আগামী দিনের উন্নয়ন চাহিদার আলোকে দক্ষিণ-দক্ষিণ ও ত্রিমুখী সহযোগিতা উন্নয়ন, অর্থায়ন এবং প্রযুক্তি হস্তান্তর কিভাবে আরও সম্প্রসারণ করা যায় তার উপায় উদ্ভাবন।

বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) জাতিসংঘের দক্ষিণ-দক্ষিণ সহযোগিতা কার্যালয় (ইউএনওএসএসসি) এবং জাতিসংঘের উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি) যৌথভাবে এ সম্মেলনের আয়োজন করে।

সম্মেলনে উত্তর ও দক্ষিণের ৪৫টি দেশ ও ১৩টি উন্নয়ন সংস্থার মোট ১৫০ জন প্রতিনিধি অংশ নেন। এর মধ্যে ৩টি দেশের মন্ত্রী, সরকারের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তা, উন্নয়ন সংস্থার প্রতিনিধি, পেশাজীবী এবং জাতিসংঘের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তারাও ছিলেন।

সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী অবুল হাসান মাহমুদ আলী, জাতিসংঘে বাংলাদেশ মিশনের স্থায়ী প্রতিনিধি ও সাউথ-সাউথ কো-অপারেশন কমিটির সভাপতি এ কে আবদুল মোমেন এবং অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সচিব মোহাম্মদ মেজবাহউদ্দিন বক্তব্য রাখেন।