বিনিয়োগের গন্তব্য হিসেবে বাংলাদেশের প্রশংসায় কানাডা

মানসম্পন্ন পণ্য উৎপাদনে সক্ষমতার দিক থেকে বিনিয়োগ ও বাণিজ্যের অন্যতম আদর্শ স্থান হিসেবে বাংলাদেশের প্রশংসা করেছেন কানাডায় এক সেমিনারের আলোচকরা।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 April 2015, 04:06 PM
Updated : 5 April 2015, 04:33 PM

অটোয়ায় কানাডার ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট রিসার্চ সেন্টারে বাংলাদেশ হাই কমিশনের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত ‘বাংলাদেশ: বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সুবিধা’ শীর্ষক সেমিনারে এই মনোভাব ব্যক্ত করেন তারা।

এতে কানাডার ফেডারেল এমপিসহ উচ্চপদস্থ সরকারী নীতি নির্ধারক,  বিশবিদ্যালয়ের শিক্ষক, থিঙ্ক ট্যাঙ্ক, কর্পোরেট সিইও, ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ, আমদানিকারক, বিনিয়োগকারী ও রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার নির্বাহীরা অংশ নেন।

সাত জন প্যানেল স্পিকার ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে বাংলাদেশের অভূতপূর্ব অর্থনৈতিক অগ্রগতি, ব্যবসা-বাণিজ্যের সুবিধা এবং বৈদেশিক বিনিয়োগকারীদের জন্য সরকারের দেওয়া নানা সুবিধার কথা তুলে ধরেন তারা।

কানাডার পররাষ্ট্র, বাণিজ্য ও উন্নয়ন বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দক্ষিণ, দক্ষিণ-এশিয়া ও ওশেনিয়া অঞ্চলের মহাপরিচালক পিটার ম্যাক-আর্থার বলেন, কানাডা-বাংলাদেশ দ্বিপাক্ষীয় প্রায় ২ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়েছে, যা ভবিষ্যতে আরও বৃদ্ধি পাবে।

বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতির প্রসংশা করে তিনি বলেন, ২০৫০ সালের মধ্যে দেশটি পৃথিবীর ২৩তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবে।

বাংলাদেশের সঙ্গে ব্যবসার ইতিবাচক অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেন যুক্তরাষ্ট্রের পোশাক ক্রেতা প্রতিষ্ঠান ‘হ্যাগার কানাডা’র প্রেসিডেন্ট ব্রায়ান মেইন।

তিনি বলেন, রানা প্লাজা ট্রাজেডির পরে ও আগে বাংলাদেশ সম্পর্কে অনেক নেতিবাচক প্রচারণা করা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে গুণগত মানসম্পন্ন পণ্য উৎপাদনে সক্ষম আর প্রতিশ্রুতিশীল শ্রম ও উদ্যোক্তা গোষ্ঠীর অবদানে বাংলাদেশ আজ পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম পোশাক রপ্তানিকারক দেশ হিসেবে স্থান করে নিয়েছে।

এসময় কানাডায় রপ্তানির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ কী কী সুবিধা পেতে পারে তার বিস্তারিত তুলে ধরেন কানাডার ট্রেড ফ্যাসিলিটেশন অফিসের (টিএফও) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা স্টিভ টিপম্যান।

কানাডার ফেডারেল পার্লামেন্টের সাংসদ ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সংক্রান্ত কমিটির সদস্য দেবীন্দর শোরি বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্প্রসারণে অভিবাসী বাংলাদেশীদের ভূমিকার কথা তুলে ধরেন।

কানাডার ‘গো-গ্লোবাল’ নীতির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এক্ষেত্রে বাংলাদেশ কানাডার অন্যতম অংশীদার হতে পারে।

কানাডার বৃহত্তম রিটেইলার কোম্পানী লবল’জ এর সিনিয়র ডিরেক্টর এল্যান ব্রান্ডন বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানির ক্ষেত্রে তাঁর কোম্পানীর সংকল্পের কথা পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, ভবিষ্যতে বাংলাদেশ থেকে তাদের ক্রয় আরও বৃদ্ধি পাবে।

সেমিনারে স্বাগত বক্তব্যে কানাডায় নিযুক্ত বাংলাদেশের হাই কমিশনার কামরুল আহসান বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বে বিগত ছয় বছরে ৬ দশমিক ২ শতাংশ বার্ষিক প্রবৃদ্ধি বজায় রেখে বাংলাদেশের অর্থনীতি এগিয়ে চলেছে।

তৈরি পোশাক শিল্পের সাথে সাথে বিশ্বমানের ওষুধ, সমুদ্রগামী ছোট জাহাজ, সফটওয়্যারসহ বিভিন্ন আইটি সেবা, চামড়াজাত শিল্প, হালকা প্রকৌশল সামগ্রী, ইলেক্ট্রনিক্স ও ফাইন সিরামিক পণ্যও বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক বাজারে রপ্তানি করছে ।

বাংলাদেশের অবকাঠামো খাতে ব্যাপক বিনিয়োগের সুযোগ রয়েছে বলে উল্লেখ করেন হাইকমিশনার।

বাংলাদেশ ফরেন ট্রেড ইন্সটিটিউটের ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোস্তফা আবিদ খান বাংলাদেশের শুল্ক ও কর কাঠামো এবং বৈদেশিক বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন সুবিধার কথা তুলে করেন।

শ্রম কল্যাণ ও শ্রমিক অধিকার রক্ষায় বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের বিষয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, আইএলও এবং এ্যাকর্ড-এ্যালায়েন্সের সহযোগিতায় ইতোমধ্যেই বাংলাদেশে ৭০ শতাংশ পোশাক কারখানার পূর্ণাঙ্গ পরিদর্শন ও আন্তর্জাতিক নিরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে।

তিনি কানাডার সংসদ, সরকার এবং কর্পোরেট খাতের উদ্যোক্তাদের প্রতি বাংলাদেশে বিনিয়োগ ও বাণিজ্যের ক্ষেত্রে সহযোগিতা বৃদ্ধির আহ্বান জানান।

পরে সেমিনারে অংশগ্রহণকারীদের প্রশ্ন নিয়ে উন্মুক্ত আলোচনা করেন প্যানেল বক্তারা।

এ পর্যায়ে কানাডার ফেডারেল পার্লামেন্টের সাংসদ এবং কানাডা-বাংলাদেশ পার্লামেন্টারি ফ্রেন্ডশিপ গ্রুপের সভাপতি ম্যাথ্যু ক্যালওয়ে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি ও মানবসম্পদ উন্নয়নের প্রশংসা করেন।

হাই কমিশনারের সভাপতিত্বে সেমিনারে আগত অতিথিদের ধন্যবাদ জানান হাই কমিশনের কাউন্সিলর ইসরাত আহমেদ। সেমিনার আলোচনাপত্র উপস্থাপন করেন প্রথম সচিব (বাণিজ্যিক) দেওয়ান মাহমুদ।