শ্রমিকদের অধিকার রক্ষার আহ্বান এইচআরডব্লিউর

শ্রমিকদের অধিকার রক্ষায় তাদের পণ্য প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের নাম প্রকাশ করতে জার্মানির তৈরি পোশাক ও জুতার ব্যান্ডগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 March 2015, 11:36 AM
Updated : 28 March 2015, 11:36 AM

বাংলাদেশ ও কম্বোডিয়ার মতো যেসব দেশ থেকে তারা পণ্য কেনে সেসব দেশের ওই সব কারখানার তালিকা প্রকাশ করার আহ্বান জানিয়েছে মানবাধিকার সংস্থাটি।

হিউম্যান রাইচস ওয়াচের জার্মানির পরিচালক ভেনজেল মিচালস্কি বলেন, “জার্মান পোশাক ব্রান্ডগুলোর উচিত গ্লোবাল সাপ্লাই চেইনস স্বচ্ছতার মাধ্যমে শ্রমিকদের অধিকার ও নিরাপত্তার প্রতি শ্রদ্ধা দেখানো।”

জার্মানির প্রধান ব্রান্ডগুলোর অন্যতম এডিডাস ২০০৭ সাল থেকে পোশাক সরবরাহকারীদের তালিকা প্রকাশ করছে বলেও এইচআরডব্লিউর বিবৃতিতে বলা হয়েছে।

এতে বলা হয়, সম্প্রতি সংস্থার এক প্রতিবেদনে কম্বোডিয়ায় পোশাক শ্রমিকদের অধিকার রক্ষায় সরকারি পদক্ষেপের ঘাটতির কথা উঠে এসেছে। কারখানার কর্মপরিবেশ ও শ্রমিক অধিকার নিয়ে ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলোর পদক্ষেপ নেওয়ার প্রয়োজন রয়েছে।

কম্বোডিয়ার ওই সব কারখানায় এডিডাস, আরমানি, গ্যাপ, এইচঅ্যান্ডএম, জো ফ্রেশ ও মার্কস অ্যান্ড স্পেনসারের মতো ব্রান্ডের পোশাক তৈরি হত।

কম্বোডিয়ার অনেক কারখানায় শ্রমিকদের মাতৃত্বকালীন ছুটি ও অন্যান্য সুবিধা দেওয়া এড়াতে এবং তাদের বাগে রাখতে দুই বছরের কম সময়ের চুক্তিতে নিয়োগ দেওয়া হয়।

চুক্তি অনুযায়ী মেয়াদ শেষে চাকরি হারানোর ভয়ে শ্রমিকরা নিজেদের অধিকার নিয়ে কথা বলতে পারেন না।

অনেক ব্রান্ডই কম্বোডিয়ার ওই সব কারখানা থেকে পোশাক কিনলেও এ ব্যবস্থার অবসানে তারা যথাযথ পদক্ষেপ নেয় না।

হিউম্যান রাইচস ওয়াচ বলছে, পোশাক সরবরাহকারীদের তালিকা প্রকাশ করে গার্মেন্ট ব্রান্ডগুলো তাদের সাপ্লাই চেইনের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে পারে। পাশাপাশি সরবরাহকারীর কারখানায় বাজে কর্মপরিবেশ ও অন্যান্য সমস্যা বিষয়েও তারা সতর্ক হবে।

২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল সাভারের রানা প্লাজা ধসের পর স্বচ্ছতার অভাব ধরা পড়ে। ওই ঘটনায় হাজারের বেশি পোশাক শ্রমিক নিহত এবং আরো কয়েক হাজার আহত হন।

রানা প্লাজার ধ্বংসস্তূপ থেকে পোশাক বের করে তাতে বিদেশি ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের ব্রান্ড লেবেল সবার সামনে তুলে ধরে বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন ও শ্রমিক অধিকার নিয়ে কর্মরতরা।

ওই সব প্রতিষ্ঠানের কাছে হতাহতদের জন্য ক্ষতিপূরণের পাশাপাশি পোশাক খাতে সংস্কারের জন্য বিদেশি ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলোর সহায়তার দাবি জানায় তারা।

“যাই হোক বিপর্যয়ের আগে রানা প্লাজার সমস্যার দিকে নজর না দেওয়ার পিছনে অন্যতম কারণ ছিল ব্রান্ডগুলোর সাপ্লাই চেইনের স্বচ্ছতার অভাব,” বলা হয়েছে এইচআরডব্লিউর প্রতিবেদনে।

রানা প্লাজায় জার্মানির অন্যতম পোশাক ব্রান্ড কেআইকের পোশাক তৈরি হচ্ছিল বলে অভিযোগ করে শ্রমিক সংগঠন ও শ্রমিক অধিকারকর্মীরা।

২০১৪ সালের ২ এপ্রিল কেআইকের এক বিবৃতিতে বলা হয়, রানা প্লাজার কোনো গার্মেন্ট কারখানার সঙ্গে তাদের সরাসরি কোনো ব্যবসা ছিল না।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচকে এক চিঠিতে রানা প্লাজায় হতাহতদের সহায়তায় গঠিত তহবিলে অর্থ দেওয়ার কথা জানায় কেআইকে।

তাজরিন ফ্যাশনসেও কেআইকের পোশাক তৈরি হচ্ছিল বলে অভিযোগ শ্রমিকদের। ২০১২ সালের নভেম্বরে আশুলিয়ায় এই পোশাক কারখানায় অগ্নিকাণ্ডে শতাধিক শ্রমিক নিহত হন।

ক্লিন ক্লথস ক্যাম্পেইনের তথ্য অনুযায়ী, তাজরিনে অগ্নিকাণ্ডের পরের মাসে ওই কারখানায় তাদের পোশাক তৈরির কথা স্বীকার করে কেআইকে। ওই ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তায় গঠিত তহবিলে অর্থ দেওয়ার অঙ্গীকারও করেছিল তারা।

২০১২ সালের সেপ্টেম্বরে করাচিতে আলী এন্টারপ্রাইজের একটি কারখানায় অগ্নিকাণ্ডে ২৬২ জন নিহত হওয়ার পর ক্ষতিগ্রস্তদের পরিবার সেখানে কেআইকের পোশাক বানানো হচ্ছিল অভিযোগ করে তাদের বিরুদ্ধে জার্মানির আদালতে যায়। প্রতিষ্ঠানটির কাছে ক্ষতিপূরণ দাবি করে তারা।

ব্যবসা ও মানবাধিকার বিষয়ক জাতিসংঘের নির্দেশনা অনুযায়ী ‘ব্যবসায়িক কারণে প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম, পণ্য বা সেবায় মানবাধিকারের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়লে তা রোধ বা প্রশমণে’ দায়িত্ব রয়েছে কোম্পানিগুলোর। ওই ঘটনার জন্য প্রত্যক্ষভাবে দায় না থাকলেও তাদের তা করতে হবে।

“যেখানে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দেখবে যে, তাদের কারণে বিরূপ পরিস্থিতি হয়েছে বা এর পিছনে তাদের ভূমিকা রয়েছে সেক্ষেত্রে বৈধভাবে তার প্রতিকারে তাদের কাজ করতে হবে বা তাতে সহায়তা করতে হবে।”