লাভের আশা নেই, খরচ চালাতে পুঁজিতে টান

বিএনপি জোটের টানা অবরোধ ও হরতালে ‘ক্ষতির অঙ্ক পুষিয়ে নিতে’ দোকান খুলছেন রাজধানীর বিভিন্ন ব্যবসাপল্লি, বিপণিবিতান ও ফুটপাতের বিক্রেতারাও। তারা বলছেন, বিক্রি কমেছে পঞ্চাশ থেকে পঁচাত্তর শতাংশ।

কাজী মোবারক হোসেনবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 Feb 2015, 03:15 AM
Updated : 21 Feb 2015, 03:35 AM

শুক্রবার মিরপুরের বেনারসি পল্লি, মোহাম্মদপুরের টাউনহল মার্কেট ছাড়াও বিভিন্ন স্থান ঘুরে এমন চিত্রই মিলল।  

রাজধানীর প্রখ্যাত বেনারসি পল্লিতে রয়েছে ৩৫ থেকে ৪০টি শাড়ির দোকান, যার বেশিরভাগ বেনারসি ও জামদানির। বিয়ের শাড়ি কেনা থেকে শুরু করে সব ধরনের শাড়ি মেলে এই পল্লিতে।

বেনারসি পল্লির প্রথম গলিতে পালকী বেনারসির ব্যবস্থাপক হারিছ আহমেদের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল চলমান অস্থিরতায় তাদের বিক্রির হাল-চাল।

জবাব যা মিলল তাতে লাভের প্রশ্ন তো উঠেই না, বরং ব্যবসা টিকিয়ে রাখাই যেন তাদের দায়।

“আমাদের অবস্থা অত্যন্ত খারাপ। স্বাভাবিক সময়ে যেখানে কম করে হলেও মাসে ৫ থেকে ৭ লাখ টাকা বিক্রি হত, সেখানে এখন বিক্রি হয় ২ থেকে আড়াই লাখ টাকা।”

একই গলির ‘বেনারসি ব্যাংক’ নামে অপর একটি শোরুমে ঢুকে জানা গেল তাদের অবস্থাও খুবএকটা সুবিধার নয়।

‘বেনারসি ব্যাংকের’ ব্যবস্থাপক আশরাফ হোসেন বলেন, “প্রতিদিন দোকান চালাতে যে খরচ, কর্মচারীদের বেতন কোনটাই উঠে আসছে না। আগে প্রতি মাসে যেথানে ১২ থেকে ১৪ লাখ টাকা বিক্রি হত, সেখানে ৪ থেকে ৫ লাখ টাকা বিক্রি হচ্ছে এখন।”

অবরোধ থাকায় দূরের ক্রেতারা আসছেন না বলেও জানান তিনি।

দোকানে বিক্রি কম তাই শাড়ির কারিগররাও পড়েছেন ফেসাদে। আয়রোজগার প্রায় বন্ধ হওয়ার উপক্রম। বেনারসির তাঁতিরা জানিয়েছেন, হরতাল ও অবরোধে নাশকতার কারণে ক্রেতা না পাওয়ায় মালিকরা এখন অর্ডার দিচ্ছেন না।

তাঁতি ছাহেব আলীর সঙ্গে কথা হয় বেনারসি গলিতে, যিনি এসেছিলেন দোকানে শাড়ির অর্ডার নিতে।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বললেন, “আমার ১০টি ফ্রেমে প্রতিমাসে অন্তত ২০ থেকে ২২ পিছ শাড়ি নামতো। এখন ১০টার জায়গায় ফ্রেমই চলে দুটি।”

মিরপুর বটতলার তাঁতি মো. মোন্না জানালেন, কাজ না পেলে রিকশা চালিয়ে সংসারের খরচ জোগান।

“আমি আগে সপ্তাহে দুই পিস শাড়ি নামাতাম, এখন এক পিস নামাই। কারিগরকে উপকরণ না দিতে পারলে ওদের তো আর করার কিছু নাই। প্রোডাকশানের কাজ করার পর কাজ না থাকলে রিকশা চালাই।”

মিরপুর ১০ নম্বর গোলচত্বর থেকে ১১ নম্বরের দিকে একটু হাঁটলেই এই বেনারসি পল্লি। দোকানদারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, সাধারণ দিনগুলোতে শুক্রবার তাদের বেচাবিক্রি সবচেয়ে বেশি হতো। অন্যান্য বাজারেও একই অবস্থা বলে জানালেন তারা।

ঘুরতে ঘুরতে মোহাম্মদপুরের টাউন হল মার্কেটে গিয়ে দেখা গেল সেখানেও ক্রেতাদের উপস্থিতি কম। মনোহারি ও ক্রোকারিজের দোকানগুলো প্রায় ক্রেতাশূন্য।

কথা হলো আল সুরেশ্বরী ক্রোকারিজের বিক্রেতা জাহাঙ্গীর হাসানের সঙ্গে। তিনি জানালেন, “গাড়ি আসলে বেচাকেনা হয়, গাড়ি না আসলে কম হয়।”

রাজনৈতিক অস্থিরতায় ব্যক্তিগত গাড়ির মালিকরা আগের মতো না আসায় বিক্রি কমেছে বলে তার অভিমত।

তবে জানুয়ারি মাসের তুলনায় এখন গাড়ি একটু বেশি আসছে বলে জানালেন জাহাঙ্গীর। তিনি বলেন, “অবরোধের আগে যেখানে দৈনিক ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা বিক্রি হতো, এখন সেটা ১৫ থেকে ১৬ হাজার হয়।”

একই মার্কেটের মনোহারি দোকানি অনন্ত জেনারেল স্টোরের মালিক নুরুল হুদা বলেন, “এটা মূলত পার্কিং মার্কেট, তাই আগের তুলনায় ব্যবসা কম। বেচাকেনা প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে।”

দোকানের মালামাল আনার জন্য বাহিরে যেতে হয় না জানিয়ে তিনি বলেন, “হরতাল অবরোধে এই মার্কেটের দোকানপাট খোলা থাকে। ফলে ডিস্ট্রিবিউটররা মাল দিয়ে যান, মালের কোন ঘাটতি নাই।”

প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনতে এ মার্কেটে আসা শফিকুল ইসলাম জানালেন, তিনি সবসময় প্রয়োজনীয় সব জিনিসপত্র এখান থেকে কেনেন। হরতাল অবরোধের কারণে এখন কম আসেন। ফলে বাসার আশপাশ থেকে কিনে ফেলেন।

তবে হরতাল-অবরোধে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের দাম না বাড়ায় স্বস্তি প্রকাশ করেছেন তিনি ।

হরতাল অবরোধে বিক্রি কমেছে স্যানিটারি ব্যবসায়ীদেরও। মিরপুর-১ এর দারুস সালাম রোডের নিউ ঝরণা স্যানিটারির মালিক আলমাস খান বলেন, “স্বাভাবিক সময়ে সপ্তাহে ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকার মালামাল বিক্রি হতো। এখন হয় ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা।”

“বিক্রি কমে যাওয়ায় দোকান খরচ চালানো কষ্ট হচ্ছে। ৩ জন কর্মচারী কাজ করছেন এখানে। তাদের বেতন দেওয়া হচ্ছে পুঁজি থেকে। দোকানের খরচ চালাতেই পুঁজি থেকে ২০-২৫ হাজার টাকা খরচ করতে হচ্ছে।”

রাজনৈতিক অস্থিরতার প্রভাব পড়েছে ফুটপাতের ব্যবসায়ও।

ধানমণ্ডির সোবহানবাগ মসজিদ সংলগ্ন চায়ের দোকানদার মো. ইউসূফ মিয়া বলেন, “মহল্লা ও মার্কেটের লোকজন এবং রিকশা চালকরা দোকানে আসে। তাই আমার বেচাকেনা সবসময় একই রকম। তবে এখন পথচারী দোকানে আসে না বললেই চলে।”