বিএনপি জোটের লাগাতার হরতালে এ পর্যন্ত এক লাখ ২৭ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিজিএমইএ সভাপতি আতিকুল ইসলাম।
Published : 11 Feb 2015, 10:53 PM
এ প্রেক্ষাপটে সহিংসতা বন্ধ এবং জানমালের নিরাপত্তা দাবিতে শনিবার প্রতীকী অনশনে বসার ঘোষণা দিয়েছে তৈরি পোশাক ও বস্ত্র খাতের উদ্যোক্তারা।
বিজিএমইএ সভাপতি জানিয়েছেন, কারওয়ান বাজারে বিজিএমইএ ভবনের সামনে তারা ওই কর্মসূচি পালন করবেন।
বুধবার বিকালে এক জরুরি সভায় এসব সিদ্ধান্ত হয়। বিজিএমইএ, বিকেএমইএ ও বিটিএমএ যৌথভাবে এ সভার আয়োজন করে।
পরে জানানো হয়, শনিবার সকাল ১১টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ওই প্রতীকী অনশনে বিজিএমইএ, বিকেএমইএ, বিটিএমএ’র সদস্যরা অংশ নেবেন। একইসঙ্গে বস্ত্র ও পোশাকখাত সংশ্লিষ্টরাও অংশ নেবে।
সভায় নিজেদের মধ্যে ঐক্য গড়ে তোলা এবং হরতাল-অবরোধ বন্ধে আদালতের শরণাপন্ন হওয়ার বিষয়ে মত দিয়েছেন পোশাক ও বস্ত্র খাতের ব্যবসায়ীরা।
সভায় আতিকুল ইসলাম ২০১৩ সালের শেষ ৬ মাসের সঙ্গে ২০১৪ সালের শেষ মাসের রপ্তানির তুলনামুলক চিত্র তুলে ধরেন।
একইসাথে এসময়ে ভিয়েতনাম ও ভারতের আন্তর্জাতিক বাজারে রপ্তানির সঙ্গে বাংলাদেশের রপ্তানি প্রবৃদ্ধিরও একটি তুলনামুলক চিত্র তুলে ধরেন বিজিএমইএ সভাপতি।
এছাড়া চলমান অবরোধ ও হরতালে দেশের তৈরী পোশাক ও বস্ত্র শিল্পে এবং এসব শিল্পের সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত শিল্পগুলোতে কি ক্ষতি হয়েছে তার খাত ভিত্তিক চিত্র তুলে ধরেন আতিকুল ইসলাম।
তিনি জানান, হরতাল-অবরোধের কারণে এক লাখ ২৭ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া ভাবমুর্তির যে ক্ষতি হয়েছে তা অপরিমেয়।
মুক্ত আলোচনায় অংশ নিয়ে সরকার ও বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটের ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করেন ব্যবসায়ীরা।
সভায় ৩২ জন ব্যবসায়ী বক্তব্য রাখেন।
বিটিএমএ সভাপতি তপন চৌধুরী বলেন, “আমরা যে ব্যবসায়ী, অনেক সময় তার চেয়ে রাজনৈতিক পরিচয় বড় হয়ে যায়। বিশেষ জায়গায় গিয়ে আমাদের চেহারা পাল্টে যায়। দয়া করে আপনারা ব্যবসায়ী থাকেন। তাহলে আমাদের সমস্যা আমরা সমাধান করতে পারবো। নতুবা পারবো না।”
বিকেএমইএর ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আসলাম সানি বলেন,“রাজনীতিবিদরা চোখে পাথর দিয়ে রাজনীতি করছেন। আমাদের এখন প্রয়োজন ঐক্যের।”
বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি মোস্তফা গোলাম কুদ্দুস বলেন, “অনশন করে কিছু হবে না। এটি হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা। দরকার অ্যালোপ্যাথিক চিকিৎসা। রাজনৈতিক সমস্যা রাজনৈতিকভাবে সমাধান হতে হবে। এজন্য সংলাপ দরকার। আসেন আমরা সংলাপে বসানোর জন্য প্রস্তুত হই।”
আরেক সাবেক সভাপতি টিপু মুন্সী বলেন, “সরকারের দায়িত্ব আমাদের নিরাপত্তা দেওয়া। আমাদের একটাই কথা আমাদের নিরাপত্তা দিতে হবে। কিভাবে সরকার দেবে সেটা আমাদের বিষয় নয়, সরকার আলোচনা করে নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে নাকি দাবি মেনে করবে সেটা সরকারের বিষয়।”
আব্দুস সালাম মুর্শেদী বলেন, “ব্যবসায়ীদের ব্যবসায়ী হিসেবে ঐক্য গড়ে তুলতে হবে। কোন পক্ষের স্বার্থ রক্ষা করে কথা বললে ব্যবসার সমস্যা সমাধান হবে না। সেজন্য প্রস্তুতি নিন।”
শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন বলেন, “এখন যা হচ্ছে তা একেবারেই এখান থেকে হচ্ছে তা আমি বিশ্বাস করতে চাই না। এর সাথে আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র আছে। আমাদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রতিকার হচ্ছে।”
এফবিসিসিআইর সাবেক সহ-সভাপতি মো. জসিমউদ্দিন বলেন, “হরতাল অবরোধ গণতান্ত্রিক অধিকার হলে, আমাদেরও গণতান্ত্রিক অধিকার হরতাল-অবরোধ না মানা। আমরা মানবো না, দররকার হলে আদালতে চলেন।”
ডিসিসিআইর সাবেক সভাপতি আসিফ ইব্রাহিম বলেন,“রাজনীতিবিদরা ব্যবসায়ীদের সম্পর্কে এমন ধারণা করে, এতো আমার, ওতো আমার সাথে আছে ইত্যাদি। এসব কারণে আমরা কোথাও থেকে সমাধান পাচ্ছি না। এজন্য আমাদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।”
সভায় ব্যবসার সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে আনা, ব্যবসায়িক স্থাপনা ও শিল্পের পন্যবাহী যানবাহনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য সরকারের প্রতি জোর দাবি জানানো হয়।