বেনাপোলে জমছে পণ্য, বাড়ছে ক্ষতি

বিএনপিসহ বিরোধী জোটের টানা অবরোধে বেনাপোল স্থলবন্দর থেকে আমদানিকৃত পণ্য খালাস না হওয়ায় বিপুল পণ্যজট দেখা দিয়েছে।

আসাদুজ্জামান আসাদ, বেনাপোল প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 Jan 2015, 06:46 PM
Updated : 23 Jan 2015, 06:57 PM

বন্দরের পণ্যাগার ঠাঁই না হওয়ায় খোলা আকাশের নিচে নামিয়ে রাখা হচ্ছে কোটি কোটি টাকার আমদানিকৃত পণ্য। এছাড়াও খালাসে জায়গা না পেয়ে বন্দর এলাকার বিভিন্ন সড়কে সারিবদ্ধভাবে রাখা হয়েছে শত শত ভারতীয় পণ্যবাহী ট্রাক।

এদিকে দিনের পর দিন আমদানি পণ্য নিয়ে ট্রাক আটকে থাকায় ক্ষতির আশঙ্কায় উদ্বিগ্ন আমদানিকারক ও ব্যবসায়ীরা।

বেনাপোল কাস্টমস ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরোয়াডিং (সিঅ্যাণ্ডএফ) এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক জামাল হোসেন জানান, বেনাপোল বন্দরে প্রতিদিন গড়ে ৩৫০টি ভারতীয় ট্রাক আমদানি পণ্য নিয়ে আসে। অন্যদিকে প্রায় ৫০০ বাংলাদেশি ট্রাক আমদানি পণ্যের চালান নিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানের উদ্দেশ্য বন্দর ছাড়ে।

“কিন্তু লাগাতার অবরোধে আমদানি পণ্য নিয়ে বন্দর ছেড়ে যাওয়া ট্রাকের সংখ্যা অর্ধেকে নেমে এসেছে। এতে বন্দরে আমদানি পণ্যের জটলা স্মরণকালের রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে।”

বেনাপোল বন্দরের সহকারী-পরিচালক (ট্রাফিক) মনিরুল ইসলাম জানান, বেনাপোল স্থলবন্দরের পণ্যধারণ ক্ষমতা ৪৭ হাজার মেট্রিক টন। অবরোধ হরতালে পণ্য খালাস না হওয়ায় তা বেড়ে ৮০ হাজার মেট্রিক টনে দাঁড়িয়েছে।

“এ কারণে বন্দরের ৩৬টি গুদাম, পাঁচটি ইয়ার্ড, একটি ট্রান্সশিপমেন্ট এবং দুটি টার্মিনালের কোথাও কোনো জায়গা নেই।”

বন্দরের দুটি টার্মিনালে মোট এক হাজার ট্রাকের ধারণক্ষমতা থাকলেও পণ্য খালাস না হওয়ায় প্রায় দুই হাজার ভারতীয় ট্রাকের জটলা তৈরি হয়েছে বলে জানান সিঅ্যাণ্ডএফ এজেন্ট নেতা জামাল হোসেন।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, দুটি টার্মিনালেই আমদানি করা বিভিন্ন গাড়ির চ্যাসিস ও নতুন গাড়ি রাখায় সমস্যা আরও প্রকট হয়েছে। এর ফলে টার্মিনালে মাত্র  ৪০০টি পণ্যবোঝাই ট্রাকের জায়গা হয়েছে।

বেনাপোলে কপোতাক্ষী এজেন্সিজের মালিক মশিয়ার রহমান বলেন, একটি ট্রাক বন্দরে একদিন অপেক্ষা করলে আমদানিকারককে দুই হাজার টাকা করে অতিরিক্ত ট্রাক ভাড়া গুণতে হয়। গুদামে পর্যাপ্ত জায়গা না থাকায় পণ্য খালাস করতে সাত থেকে ১০ দিন সময় লেগে যাচ্ছে।

এদিকে ভারতীয় ট্রাক থেকে পণ্য খালাস হলেও অবরোধে নাশকতার শঙ্কায় সেগুলো গন্তব্যে পরিবহন হচ্ছে না। লাগাতার অবরোধের প্রথম থেকেই পণ্যবোঝাই বিভিন্ন বাস-ট্রাকে পেট্রোল বোমা মেরে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটছে, যাতে প্রাণহানি হয়েছে বেশ কয়েকজন চালক ও সহকারীর।

বেনাপোল বন্দর আমদানি-রপ্তানিকারক সমিতির যুগ্ম সম্পাদক মহসিন মিলন বলেন, ঝুঁকির কারণে চালকরা ট্রাক ভাড়া নিচ্ছে দ্বিগুণ করে। এছাড়া বন্দরের গুদামে নির্দিষ্ট সময়ের বেশি সময় পণ্য রাখলে দ্বিগুণ-তিনগুণ হারে ভাড়া দিতে হয়।

এর পুরোটাই আমদানিকারককে বহন করতে হয় বিধায় ব্যবসায়ীরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেন তিনি।

এদিকে দিনের পর দিন ট্রাক নিয়ে বেনাপোল বন্দরে আটকে থাকায় থাকা-খাওয়াসহ বিভিন্ন বিষয়ে ভোগান্তিতে পড়েছেন ভারতীয় ট্রাক চালক ও তাদের সহকারীরা। সমস্যার সমাধান না হলে পণ্য নিয়ে বেনাপোলে আসা বন্ধ করে দেওয়ার হুমকিও দিয়েছেন তারা।

ভারতের ঝাড়খণ্ডের লরি চালক অসিত মণ্ডল, হাওড়ার নগেন পাল এবং পশ্চিমবঙ্গের আরিফ মণ্ডল প্রত্যেকেই পণ্য নিয়ে এসে খালাসের অপেক্ষায় বেনাপোলে ৪/৫ দিন নানা ভোগান্তিতে পার করেছেন। এ রকম শত শত ভারতীয় ট্রাক চালক দিনের পর দিন অপেক্ষা করছেন বেনাপোল বন্দর এলাকায়।

ফেডারেশন অব ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অল ইন্ডিয়ার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দিলিপ দাস বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ভারতীয় ট্রাক চালক ও তাদের সহকারীরা বেনাপোল বন্দরে অবস্থান করলেও তাদের সেখানে থাকার কোন সুব্যবস্থা নেই। চালকরা প্রতিনিয়ত লাঞ্ছিত হচ্ছে। বিষয়টি বার বার বলার পরও বেনাপোল বন্দর কর্তৃপক্ষ কোনো সমাধান দিতে পারেনি”

২৫ জানুয়ারির মধ্যে সমস্যার সুষ্ঠু সমাধান না পেলে ২৬ জানুয়ারি থেকে রপ্তানি পণ্য নিয়ে কোনো ট্রাক বেনাপোলে যাবে না বলে জানান দিলিপ দাস।

ওপারের ব্যবসায়ীদের অভিযোগ প্রসঙ্গে বন্দরের সহকারী-পরিচালক (ট্রাফিক) মনিরুল ইসলাম বলেন, “বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। এ ব্যাপারে বন্দর ব্যবহারকারী সবার সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি সুরাহার চেষ্টা করা হচ্ছে।”