অবরোধ-হরতাল: পর্যটক নেই কক্সবাজারে

অস্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিস্থিতি, হরতাল ও অবরোধের কারণে ভরা মৌসুমেও পর্যটকের দেখা মিলছে না কক্সবাজারে।

শংকর বড়ুয়া রুমি, কক্সবাজারে প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 Jan 2015, 02:24 PM
Updated : 21 Jan 2015, 02:24 PM

হাতেগোণা কিছু পর্যটক এলেও তা একেবারে নগণ্য। এতে গত বছরের মতো এবারও কক্সবাজারের পর্যটন শিল্প ব্যাপক আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়বে বলে আশংকা করছেন এ শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা।

পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের মতে,  প্রতিবছর পর্যটন মৌসুমে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত, ঐতিহ্যবাহী বৌদ্ধ মন্দির, ইনানী সৈকত, মহেশখালীর আদিনাথ মন্দির ও প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন পর্যটকের পদচারণায় মুখর থাকে।  

কিন্তু এ বছর হরতাল ও অবরোধে নাশকতার আশংকায় এসব পর্যটন কেন্দ্রে কার্যত শূন্য পড়ে আছে। পর্যটন শিল্প সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জড়িত প্রায় ২০ হাজার শ্রমিক-কর্মচারীর মধ্যে অনেককে বাধ্যতামূলক ছুটি দেওয়া হয়েছে।

অবরোধ শুরু হওয়ার পর রাজধানীতে এক সংবাদ সম্মেলনে উদ্বেগ প্রকাশ করেন ট্যুর অপারেটরদের সংগঠন টোয়াব কর্মকর্তারা।

এই হরতাল-অবরোধের কারণে পর্যাপ্ত পর্যটক না পাওয়ায় চলতি মৌসুমে শত কোটি টাকা ক্ষতির আশঙ্কা করছেন তারা।

এদিকে, কক্সবাজারের পর্যটন শিল্প রক্ষায় জেলা প্রশাসন ১৪ জানুয়ারি সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে মতবিনিময় করে। ওই সভায় পর্যটকদের সার্বিক নিরাপত্তাসহ প্রয়োজনীয় সহায়তার আশ্বাস দেওয়া হয়।

জেলা প্রশাসক মো. রুহুল আমিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, হরতাল-অবরোধের মাঝেও কক্সবাজারের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ব্যাপক উদ্দ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

এর অংশ হিসেবে পর্যটকদের যাতায়ত নিরাপদ করতে মহাসড়কে নিরাপত্তা জোরদার, যাত্রীবাহী পরিবহন ও বিমানের ভাড়া ছাড় দেওয়া, হোটেল-মোটেল ও গেস্ট হাউজের ভাড়া কমানোর পাশাপাশি বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

তিনি আরও জানান, সভায় নেওয়া সিদ্ধান্ত মতে পুলিশ, বিজিবি ও র‌্যাব সদস্যদের পাহারায় পর্যটকসহ যাত্রীবাহী বাসগুলো চলাচল করছে। এরপরও হরতাল-অবরোধের কারণে অল্প সংখ্যক পর্যটক কক্সবাজার আসলেও তা পর্যটনের ভর মৌসুমের জন্য উল্লেখযোগ্য নয়।

কক্সবাজার আবসিক হোটেল-মোটেল গেস্ট হাউস মালিক সমিতির কোষাধ্যক্ষ শফিকুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, নভেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত কক্সবাজারে ভর পর্যটন মৌসুম। ২০১৩ সালের শেষের দিকে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণেও কক্সবাজারে পর্যটকের সংখ্যা আশংকাজনকভাবে কমে গিয়েছিল।

এতে হোটেল-মোটেল ও গেস্ট হাউজসহ পর্যটন শিল্প সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা অর্থনৈতিকভাবে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছিলেন।

এ বছর সেই ক্ষয়ক্ষতি পুষিয়ে নিতে কক্সবাজারের সাড়ে ৪ শতাধিক হোটেল-মোটেল পর্যটকদের জন্য নানা প্রস্তুতি নেয়। গত ডিসেম্বরের থার্টি ফার্স্ট নাইটের আগে ও পরে আশানুরুপ পর্যটক এলেও এখন প্রায় পর্যটক শূন্য।

হোটেল-মোটেল ও গেস্ট হাউজ শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আলী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, হরতাল-অবরোধের কারণে কক্সবাজারে পর্যটক শূন্যতা বিরাজ করছে। মালিকপক্ষ অনেক শ্রমিককে বাধ্যতামূলক ছুটি দিয়েছেন। ফলে হোটেল-মোটেল ও গেস্ট হাউজের সঙ্গে জড়িত প্রায় ১০ হাজার শ্রমিক-কর্মচারী অসহায় দিনযাপন করছেন।

কক্সবাজার খাবার হোটেল ও রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক রফিক উদ্দিন জানান, পর্যটক শূন্যতার কারণে হোটেল-মোটেল জোন এলাকার প্রায় ৩ শতাধিক প্রতিষ্ঠানের ১০ হাজারের বেশি শ্রমিক-কর্মচারী বেকার সময় কাটাচ্ছে।

হোটেল ওশান প্যারাডাইজের জনসংযোগ কর্মকর্তা সায়ীদ আলমগীর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, সোমবার (১৯ জানুয়ারি) তাদের মোট ২০০ কক্ষের মধ্যে মাত্র ২০টি কক্ষ বুকিং হয়েছে। পর্যটক খরায় লোকসানের মধ্যদিয়ে হোটেল চালাতে হচ্ছে।

গত বছরও অস্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে কক্সবাজারে পর্যটক কম আসায় হোটেলটিকে প্রায় ৩০ কোটি টাকার বেশি ক্ষতি হয়ে হয়েছিল বলে জানান তিনি। 

সৈকত ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সভাপতি খাইরুল আমিন জানান, অবরোধের কারণে কক্সবাজারের সমুদ্র সৈকত প্রায় পর্যটন শূন্য। অল্প সংখ্যক পর্যটক এলেও তা পর্যটনের ভর মৌসুমের জন্য উল্লেখযোগ্য নয়।

এখানকার রেস্তোরা, পর্যটন এলাকার দোকান এবং আবাসিক হোটেল মালিকরাই এখন নানা ক্ষতির আশংকায় দিন কাটাচ্ছেন বলে জানান তিনি।

ট্যুর অপারেটর এসোসিয়েশন কক্সবাজার (টোয়াক) কর্মকর্তা ও ট্যুর গাইড বেলাল আবেদিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, গত ১৭ জানুয়ারী টেকনাফ হতে কেয়ারী সিন্দাবাদ জাহাজ যোগে ৬০/৭০ জন পর্যটক সেন্টমার্টিন ভ্রমণে গেছেন।

অন্যান্য সময় পর্যটনের ভর মৌসুমে ৬/৭টি জাহাজযোগে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৩ থেকে ৫ হাজার পর্যটক সেন্টমার্টিন যেত। আর এবার ১৮ ও ১৯ জানুয়ারি সেন্টমার্টিনের উদ্দ্যেশে কোনো জাহাজ ছেড়ে যায়নি পর্যাপ্ত যাত্রী না থাকায়।

কক্সবাজার ট্যুরিস্ট পুলিশের ওসি সত্যজিত বড়ুয়া বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, সমুদ্র সৈকতে পর্যটক এখন একবারে নেই বললেই চলে। হরতাল-অবরোধের পর থেকেই পর্যটকের এ আকাল দেখা দিয়েছে।

হরতাল-অবরোধের মাঝেও কক্সবাজারের আইন-শৃংখলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে দাবি করে কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তোফায়েল আহমদ জানান, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক ও কক্সবাজার টেকনাফ সড়কে যানবাহন চলাচল নির্বিঘঘ্ন রাখতে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।

পুলিশসহ আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের পাহারায় এসব যানবাহনের পাশাপাশি পর্যটকবাহী পরিবহনগুলো চলাচলে বিশেষ ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে।

সেন্টমার্টিন ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নুরুল আমিন জানান, সেন্টমার্টিন দ্বীপের অধিবাসীদের জীবিকার প্রধান মাধ্যম সমুদ্রে মাছ ধরা হলেও গত ২০ বছর ধরে এক্ষেত্রে পর্যটন শিল্প অন্যতম ভূমিকা পালন করছে।

কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে সেন্টমার্টিনে পর্যটক আসা ব্যাপকভাবে কমে গেছে।