খুচরা বাজারে সয়াবিনের দাম এখনও বেশি

দুই সপ্তাহ আগে পাইকারি পর্যায়ে বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম কমলেও খুচরা বাজারে এখনো তার প্রভাব পড়েনি।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 Dec 2014, 01:38 PM
Updated : 19 Dec 2014, 02:58 PM

শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, কোনো কোনো দোকানে নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি টাকায় বোতলজাত সয়াবিন বিক্রি করা হচ্ছে।

তেল পরিশোধনকারী কোম্পানিগুলোর দাবি, বিশ্ববাজারে সয়াবিনের দাম কমার পর এ মাসের শুরু থেকে তারা হ্রাসকৃত দামে পাইকারি পর্যায়ে বোতলজাত সয়াবিন বিক্রি করছেন।

এমনকি আগের দামের স্টিকার লাগানো যেসব তেলের বোতল এখনও খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছে রয়ে গেছে, সেগুলোতেও তারা মূল্য ছাড় দিচ্ছেন।

এদিকে খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, কোনো কোনো কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধি আগের তেল বর্তমানের সমন্বিত দরে বিক্রি করতে বললেও কোম্পানি কোন প্রক্রিয়ায় তাদের ক্ষতি পুষিয়ে দেবে সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কিছু বলেনি।

ক্রেতাদের অভিযোগ, সরকারের যথাযথ বাজার ব্যবস্থাপনার অভাবে পাইকারিতে তেলের দাম কমার সুফল সব ক্ষেত্রে তারা পাচ্ছেন না।

শুক্রবার রাজধানীর মানিকনগর বাজারে গিয়ে দেখা যায়, দেশের শীর্ষ তেল শোধনকারী সিটি গ্রুপের তীর ব্রান্ডের ভোজ্যতেল বিভিন্ন দামে বিক্রি হচ্ছে।

তীর ব্র্যান্ডের ৫ লিটারের সয়াবিন তেলের বোতল হাজী কনফেকশনারী ও মেহেদী স্টোরে বিক্রি হচ্ছে ৫৬৫ টাকায়। মায়ের দোয়া স্টোর বিক্রি করছে ৫৪০ টাকায়।  একই বোতল শামীম ট্রেডার্স বিক্রি করছে কোম্পানি নির্ধারিত খুচরা দামে ৫০৫ টাকায়।

ফ্রেশ, রূপচাঁদা ও ভিওলাসহ অন্যান্য ৫ লিটারের সয়াবিন তেলের অন্য ব্যান্ডগুলো বিক্রির ক্ষেত্রেও একই চিত্র দেখা গেছে।

সিটি গ্রুপের মহাব্যবস্থাপক বিশ্বজিৎ সাহা জানান, বিশ্ব বাজারে সয়াবিন তেলের দাম কমার পর গত ২ ডিসেম্বর তীর ব্রান্ডের এক লিটার সয়াবিন তেলের বোতলের পাইকারি দাম ৯৪ টাকা ধরে এর সঙ্গে ডিলারের চার টাকা ও খুচরা বিক্রেতার চার টাকা যোগ করে সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য ১০২ টাকা ধরা হয়েছে।

আর তীর ব্রান্ডের ৫ লিটারের বোতলের পাইকারি দাম ৪৬৫ টাকা ধরে এর সঙ্গে ডিলারের ২০ টাকা ও খুচরা বিক্রেতার ২০ টাকা যোগ করে ৫০৫ টাকা সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে।

ভোজ্যতেল পরিশোধনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো বর্তমানে খুচরা পর্যায়ে ১ লিটারের বোতলজাত সয়াবিন তেল সর্বোচ্চ ১০২ টাকায় বিক্রি করবে, যা আগে বিক্রি হতো কোম্পানিভেদে ১১৩-১১৬ টাকায়। আর ৫ লিটারের তেল বিক্রি করবে সর্বোচ্চ ৫০৫ টাকায়, যা বিক্রি হতো ৫৬০-৫৬৫ টাকায়।

বিশ্বজিৎ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আগের দরে বাজারে ছাড়া যেসব তেল এখনও খুচরা পর‌্যায়ে অবিক্রিত রয়েছে সেসব তেলেও আমরা রিবেট (বর্তমান দাম ধরে ছাড়) দিচ্ছি।  তাই আমাদের ব্র্যান্ডের কোনো তেল বর্তমানের চেয়ে বেশি দামে বিক্রি হওয়ার কথা না।”

তবে মানিকনগরের মায়ের দোয়া স্টোরের বিক্রেতা ইউসূফ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “কোম্পানি অনেক কথা বলে। কিন্তু সেই সুবিধা পাওয়াটা সহজ না। কোম্পানির সিদ্ধান্তের কারণে এখন আমরাই লোকসানে পড়ছি।”

খুচরা বিক্রেতাদের বক্তব্য, তাদের কাছে থাকা সয়াবিন তেলের বোতলগুলো আগের দামে কেনা। ফলে বর্তমানের কম দামে বিক্রির সুযোগ তাদের নেই। কোম্পানির পক্ষ থেকে এ বিষয়ে তাদের কাছে সুস্পষ্ট কোনো বার্তা দেওয়া হয়নি।

এদিকে খুচরা পর‌্যায়ে অতিরিক্ত দাম না রাখতে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই বিক্রেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।

রাষ্ট্রায়ত্ত বিপণন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান টিসিবির হিসাবে দেখা যায়, বৃহস্পতিবার এক লিটারের বোতলজাত সয়াবিন বাজারে ১০৬ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে।

বাজার ঘুরে দেখা গেছে,  নির্ধারিত নতুন দরে বাজারে সয়াবিন তেল পাওয়া যাচ্ছে। তবে কোথাও কোথাও নির্ধারিত দামের চেয়ে ২ থেকে ১০ টাকা বেশি চাচ্ছেন বিক্রেতারা।

এদিকে বোতলজাত সয়াবিনের দাম কমলেও বেড়েছে খোলা সয়াবিন তেলের দাম।

বাংলাদেশ পাইকারি ভোজ্যতেল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি গোলাম মাওলা দাবি করেন, ১৫ দিনের ব্যবধানে মিলগেটে খোলা সয়াবিন তেলের দাম প্রতি মণে ৩০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বর্তমানে মিল গেটে প্রতি মণ খোলা সয়াবিন বিক্রি হচ্ছে ৩২০০ টাকায়, যা ১৫দিন আগে ২৯০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।

ফলে খুচরা পর্যায়েও খোলা সয়াবিনের দাম কেজিতে ৫ থেকে ৭ টাকা পর্যন্ত বেড়ে প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেল ৯০ থেকে ৯২ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে, যার দাম এক সপ্তাহ আগে ৮০ থেকে ৮৫ টাকা ছিল।

দাম বাড়ার কারণ হিসেবে গোলাম মাওলা বলেন, “শীতের সময় খোলা সয়াবিনের চাহিদা বাড়ে। কারণ পাম অয়েল ও সুপার পাম অয়েল এসময় ঠাণ্ডায় জমে যায়। এই অতিরিক্ত চাহিদার সুযোগ নিচ্ছে মিলগুলো।”

দাম বাড়ানোর পিছনে বন্দরে অপরিশোধিত তেল নিয়মিত খালাস না হওয়ার কথা বলছেন মিল মালিকরা।