কেনার আগে পরখ চলছে হাটে

রাজধানীর বিভিন্ন হাটে পশু আসতে শুরু করলেও সেই অনুপাতে সাড়া পাচ্ছেন না বিক্রেতারা। তাই শুধু দাম হেঁকেই অলস সময় পার করতে হচ্ছে তাদের।

গোলাম মুজতবা ধ্রুববিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 Oct 2014, 11:31 AM
Updated : 1 Oct 2014, 11:31 AM

বিক্রেতারা বলছেন, ক্রেতারা কেনার চেয়ে বাজারঘুরে পছন্দের পশুর দাম যাচাই করতেই এখন ব্যস্ত।

ব্যবসায়ীদের কথার সত্যতা মিলল গাবতলী ছাড়াও কয়েকটি হাট ঘুরে।

রাজধানীর সবচেয়ে বড় হাট গাবতলীতে দেখা গেছে, পশু নিয়ে হাটে ক্রেতার অপেক্ষায় রয়েছেন বিক্রেতারা। কয়েকজন ক্রেতা ঘুরে বেড়াচ্ছেন; পশুর দরদাম করছেন তারা। তবে কেউ পশু কিনছেন না।

মানিকগঞ্জের সিংগাইর এলাকার জাকির বেপারী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, সোমবার রাতে ৬০টি ভারতীয় গরু এনেছেন তিনি। এছাড়াও হাটে এনেছেন ১৪টি উট। একটি উট সাড়ে তিন লাখ টাকায় বিক্রি হলেও কোনও গরু বিক্রি হয়নি।

তিনি বলেন, “সব গরুর তো দাম এক না। একেকটার ধরন একেক রকম। সেই অনুয়ায়ী দাম ওঠানামা কবে। এখনও সেভাবে কাস্টমার আসে নাই। খালি গরু দেইখা চইলা যায়। কয় ঈদের আগের রাইতে কিনুম।”

ধামরাই থেকে আসা পশু ব্যবসায়ী মো. আলী বলেন, “এবার খাসি আর ভেড়া আনমু। অন্যান্য বারের চেয়ে এইবার খাসির দাম ভাল পামু।”

আমিনবাজারের মো. আলী নাঈম বলেন, “এ এলাকাতেই থাকি। সকালে হাটে ঘুইরা গেলাম। কেমুন পশু আইছে তা দেখতে। কিনুম ঈদের আগের রাইতে।”

আগারগাঁওয়ের পশুর হাটের জন্য নির্ধারিত জায়গা ঘুরে দেখা গেছে, সেখানে মাত্র হাট বসানোর প্রস্তুতি চলছে। বাঁশ দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে পশু রাখার জায়গা।

বাশ নিয়ে গরু রাখার জায়গা ঠিক করতে থাকা যুবক আবুল হোসেন বলেন, “হাট বসার আগে গরু, ছাগল যেখানে রাখমু সেই জায়গা ঠিক করা হচ্ছে। দুই একদিনের মধ্যে হাট পশুতে ভরে যাবে।”

খিলগাঁও এলাকার বাসিন্দা টিটু মিয়া জানান, মেরাদিয়া হাটে এখন পশু আসছে, তবে কম। বেচাকেনা এখনও পুরোদমে শুরু হয়নি।

আগামী বৃহস্পতিবারের মধ্যে হাট জমে উঠবে বলে তার আশা।

এদিকে এবার যে কোনও রকম অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে হাটে সতর্ক অবস্থানে থাকবে পুলিশ। পশু চিকিৎসকও প্রস্তুত থাকবে।

রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় কোরবানির পশু কেনা বেচার জন্য ২০টি অস্থায়ী ও একটি স্থায়ী হাট বসছে। ঈদের তিনদিন আগে বসবে অস্থায়ী হাটগুলো।

এর মধ্যে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন এলাকায় ৭টি, দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন এলাকায় ৯টি ও জেলা প্রশাসক ঢাকায় ৪টি অস্থায়ী বৈধ পশুর হাট পরিচালনার অনুমতি দেওয়া হয়েছে বলে জানান ঢাকা মহানগর পুলিশের উপ কমিশনার মো. মাসুদুর রহমান।

এছাড়াও গাবতলীর স্থায়ী পশুর হাটে বেচাকেনা চলবে কোরবানির পশু।

পুলিশ জানিয়েছে, হাট সংলগ্ন এলাকায় থাকবে সিসি ক্যামেরা, ওয়াচটাওয়ার, জাল নোট শনাক্ত করার মেশিন। এছাড়াও সাদা পোশাকে হাটে দায়িত্ব পালন করবে গোয়েন্দারা।

তাছাড়া ঢাকার বাইরের বিভিন্ন জেলা থেকে পশুর গাড়ি যেন নিরাপদে আসতে পারে, মহাসড়কে যেন চাঁদাবাজি করে কেউ অরাজকতা তৈরি না করতে পারে সেজন্য সতর্ক দৃষ্টি রাখবে পুলিশ।

হাটে কেউ যেন অসুস্থ পশু বিক্রি করতে না পারে সেজন্য পশু কর্মকর্তাও দায়িত্ব পালন করবেন বলে জানিয়েছেন ঢাকার কেন্দ্রীয় পশুসম্পদ হাসপাতালের প্রধান ভেটেনারি অফিসার ডা. এবিএম শহীদুল্লাহ।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, কোরবানির ঈদ যেন যথযথ মর্যাদার সঙ্গে দেশবাসী পালন করতে পারে সেজন্য সীমিত জনবল নিয়ে পশু চিকিৎসকরা হাট বসার দিন থেকে ঈদের দিন পর্যন্ত অফিস আওয়ারে হাটে থাকবে।”

উত্তরে সাত, দক্ষিণে নয়

ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন এলাকার সাতটি অস্থায়ী পশুর হাটের মধ্যে রয়েছে, উত্তরা আজমপুর সরকারি প্রাইমারি স্কুল মাঠ, আগারগাঁও বস্তির খালি জায়গা, মিরপুর ইস্টার্ন হাউজিংয়ের খালি জায়গা, বারিধারা জে-ব্লকের খালি জায়গা, উত্তরা ১১ ও ১৩ নম্বর সেক্টরের সোনারগাঁও জনপথ সংলগ্ন খালি জায়গা, বনানী রেলওয়ে স্টেশন সংলগ্ন খালি জায়গা, খিলক্ষেত বনরূপা আবাসিক প্রকল্পের খালি জায়গা।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের নয়টি অস্থায়ী হাটের মধ্যে রয়েছে, লালবাগের রহমতগঞ্জ খেলার মাঠ, খিলগাঁওয়ের মেরাদিয়া বাজার, নারিন্দায় সাদেক হোসেন খোকা খেলার মাঠ, উত্তর শাজাহানপুর রেলগেট বাজার সংলগ্ন মৈত্রী সংঘের মাঠ, গেন্ডারিয়ার ধুপখোলা ইস্ট অ্যান্ড ক্লাব মাঠ, ব্রাদার্স ইউনিয়ন সংলগ্ন বালুর মাঠ, পোস্তগোলা শ্মশানঘাট সংলগ্ন খালি জায়গা, কামরাঙ্গীরচর ইসলাম চেয়ারম্যানের বাড়ির মোড় হতে দক্ষিণ দিকে বুড়িগঙ্গা নদীর বাঁধ সংলগ্ন এলাকা ও লালবাগের মরহুম হাজী দেলোয়ার হোসেন খেলার মাঠ, বেড়ি বাঁধ ও তারপাশের খালি জায়গা।

এছাড়া ঢাকার জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে চারটি হাটের ইজারা দেওয়া হয়েছে।

সেগুলোর মধ্যে রয়েছে, কদমতলী এলাকার শ্যামপুর বালুর মাঠ, দনিয়া কলেজ সংলগ্ন খালি মাঠ, বাড্ডা মেরাদিয়া এলাকার ইন্দুলিয়া-দাউদকান্দি-বাঘাপুর এলাকার খালি জায়গা।