তারা বলছেন, বাজার পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করেই তারা চামড়া কেনাবেচা করতে আগ্রহী।
আন্তর্জাতিক বাজারে চামড়ার দাম পড়ে যাওয়া, বিভিন্ন দেশে চামড়াজাত পণ্যের কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়া এবং নানা ধরনের শুল্কের কারণে ব্যবসায় মন্দা চলছে জানিয়ে এই দাবি তুলেছেন তারা।
ট্যানারি মালিকরা সারা বছরই কম-বেশি চামড়া সংগ্রহ করলেও কোরবানির ঈদেই একসঙ্গে সবচেয়ে বেশি চামড়া কেনার সুযোগ হয় তাদের। ট্যানারি ব্যবসায়ীরা জানান, সারা বছর দেশে যে পরিমাণ কাঁচা চামড়া প্রক্রিয়াজাত করা হয়, তার অর্ধেকই সংগ্রহ করা হয় এই সময়টাতে।
বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএ) চেয়ারম্যান মো. শাহীন আহমেদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এখন আন্তর্জাতিক বাজার মন্দা, চামড়ার দাম পড়ে যাচ্ছে । আবার দাম যখন বেশি থাকে তখন পশ্চিমা ফ্যাশন হাউজগুলো তাদের পোশাকে চামড়ার ব্যবহার কমিয়ে দেয়। তখন বিক্রি কম হয়।
“এছাড়া সম্প্রতি চীন ও দক্ষিণ কোরিয়ায় অনেক চামড়া পণ্যের কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। তার ওপর রয়েছে নানা ধরনের করের ঝক্কি। এসব বিবেচনা করেই আমরা চামড়ার দাম বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়ার পক্ষে।”
গত বছর সরকার নির্ধারিত দাম অনুযায়ী ব্যবসায়ীরা ঢাকায় প্রতি বর্গফুট লবণযুক্ত গরুর চামড়া কেনেন ৮৫-৯০ টাকায়। আর ঢাকার বাইরে তা কেনা হয় ৭৫-৮০ টাকায়।
সারাদেশে প্রতি বর্গফুট খাসির চামড়ার দাম গত বছর ছিল ৫০-৫৫ টাকা। বকরির চামড়া ৪০-৪৫ টাকা এবং মহিষের চামড়া ৪০-৪৫ টাকায় বেঁধে দেওয়া হয়েছিল।
অবশ্য তার আগের বছর কোরবানির পশুর চামড়ার দাম ঠিক না করে তা বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল।
তবে ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের দাবির সঙ্গে গত কয়েক মাসের আন্তর্জাতিক বাজার দরের মিল পাওয়া যায়নি।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) প্রাথমিক পণ্যের মাসিক আন্তর্জাতিক বাজার দর পর্যালোচনায় দেখা গেছে, এপ্রিলে দাম কমলেও গত অগাস্ট থেকে চামড়ার দাম বেড়েছে।
ট্যানারি মালিকদের এই ইচ্ছের কারণে মৌসুমি ব্যবসায়ীদের ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। কারণ ট্যানারিগুলোয় কোরবানির পশুর চামড়ার একটা বড় জোগান আসে এ ধরনের ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে।
চামড়ার দাম বাজারের ওপর ছেড়ে দিলে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের যে স্বার্থহানী হবে তা শাহীনও স্বীকার করেছেন।
আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠকে চামড়ার দামের ব্যাপারে সুস্পষ্ট সিদ্ধান্ত আসবে।
কোরবানির ঈদের মৌসুমে চামড়ার ব্যবসায় বিপুল অর্থের লেনদেন হয়। ব্যাংকগুলোও লগ্নি করে ব্যাপক অর্থ।
শাহীন আহমেদ জানান, এবছর ব্যাংকগুলো থেকে প্রায় ৪০০ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে ট্যানারিগুলো।
এদিকে গণমাধ্যমের খবর, ট্যানারি মালিকরা ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়ায় কলমানি সুদের হার বেড়ে গেছে। গত জুলাই মাসে এ হার ছিল ৬ দশমিক ৬৮ শতাংশ, বর্তমানে এ হার প্রায় ৮ শতাংশের কাছাকাছি।
তবে বড় উৎসবের আগে কলমানি সুদের হার বেড়ে যাওয়াকে স্বাভাবিক বলছেন ব্যাংকাররা।
মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের হেড অব ট্রেজারি শামসুল ইসলাম বলেন, “উৎসবের সময় কলমানি মার্কেটে লেনদেন স্বাভাবিকের তুলনায় একটু বেশি হয়। গড়ে কলমানি মার্কেটে এ সময় দৈনিক গড়ে ৫-৬ হাজার কোটি টাকা লেনদেন হলেও সম্প্রতি এ লেনদেন দাঁড়িয়েছে প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকায়।
“এসময় সাধারণ মানুষ ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে নগদ টাকা ধরে রাখার প্রবণতা বেড়ে যায়। আর ৪০০ কোটি টাকা তো দৈনিক এ লেনদেনের সামান্য অংশ । তাদের (ট্যানারি মালিক) ঋণ নেয়ার কারণেই কলমানি সুদের হার বেড়ে গেছে এমনটা বলা যাবে না, তবে সুদের হার বাড়ার এটি একটি কারণ।”
এ বছর সরকার চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি থেকে ৬২ কোটি ৫০ লাখ ডলার আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে।