প্রতিবেশী দেশগুলোর বিষয়ে নয়া দিল্লির নীতি কাজে লাগিয়ে বাণিজ্য বাড়াতে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের পরামর্শ দিয়েছেন ভারতের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ভি কে সিং।
Published : 24 Aug 2014, 06:08 PM
রোববার ঢাকায় ভারত-বাংলাদেশ বাণিজ্য সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, “আমরা নিজেরা লাভবান হওয়ার পথ খুঁজে না পেলে কোনো কিছুই এগোবে না।”
ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে বাণিজ্যের অনেক ক্ষেত্রেই সহযোগিতা বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে মন্তব্য করে ভি কে সিং বলেন, “ব্যবসায়ী সমাজ কাজে লাগাতে পারে, আমাদের এমন ভালো সুযোগ রয়েছে।”
দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বিষয়ক এ সম্মেলনের যৌথ আয়োজক ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (আইবিসিসিআই) এবং কলকাতাভিত্তিক ইন্ডিয়ান চেম্বার অফ কমার্স (আইসিসি)।
ভারতে বিজিপি সরকার গঠনের পর পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের আনুষ্ঠানিক সফরের পর ঢাকায় এলেন প্রতিমন্ত্রী। দেশটির সাবেক এই সেনাপ্রধান অবসরে যাওয়ার পর রাজনীতিতে নেমেই মন্ত্রিসভায় এলেন।
এই সম্মেলনে ভি কে সিংয়ের নেতৃত্বে অংশ নেয়া ভারতীয় দলে রয়েছেন মেঘালয়ের মুখ্যমন্ত্রী মুকুল সাংমা এবং ত্রিপুরার বাণিজ্য ও শিল্পমন্ত্রী তপন চক্রবর্তী।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর অর্থনীতি বিষয়ক উপদেষ্টা মসিউর রহমান। ঢাকায় ভারতের হাই কমিশনার পঙ্কজ শরণ ও দুই দেশের ব্যবসায়ী নেতারাও বক্তব্য রাখেন।
সম্মেলনে ব্যবসায়ী নেতারা ভারতের সঙ্গে বাণিজ্যে বিভিন্ন বাধার কথা তুলে ধরেন।
চীনের পর বাংলাদেশের সঙ্গে বৈদিশিক বাণিজ্য ভারতেরই বেশি। তবে দুই দেশের বাণিজ্য ঘাটতি প্রায় সাড়ে ৪০০ কোটি ডলার।
ব্যবসায়ীদের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় ভি কে সিং বলেন, ভারতের সম্পর্কে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের ধারণা না থাকাতেই এমন হচ্ছে।
“আমাদের পরস্পরের বাজার সম্পর্কে বুঝতে হবে। একইসঙ্গে ভারতে ব্যবসায়ীদের যোগাযোগের বাধাগুলোও শিথিল করতে হবে।”
তার দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর সঙ্গেও বাংলাদেশের ব্যবসায়িক সম্পর্ক গড়ে তোলার ভালো সুযোগ রয়েছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
এসময় তিনি অরুণাচল প্রদেশে ১৬ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের উদাহরণ টেনে বলেন, প্রতিবেশীরা এখনো এই বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ নিচ্ছে না।
বাংলাদেশসহ অন্য প্রতিবেশী দেশগুলোর এক্ষেত্রে আরো এগিয়ে আসার প্রয়োজন রয়েছে বলেও মন্তব্য করেন ভারতের প্রতিমন্ত্রী।
ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে যৌথ বাণিজ্যেরও অনেক সুযোগ রয়েছে বলে মনে করেন তিনি।
“আমাদের শক্তিশালী গার্মেন্ট ও পণ্য উৎপাদন খাত রয়েছে। দুই দেশের বাজারের সামর্থ্য যুক্ত হলে আমাদের কেউ হারাতে পারবে না। এজন্য নিজেরা লাভবান হওয়ার জন্য আমাদের ব্যবসায়িক যোগাযোগ বাড়ানো এবং পরস্পরের সামর্থ্য ব্যবহারের প্রয়োজন।”
বিভিন্ন ক্ষেত্রে দুই দেশ যোথ বিনিয়োগও করতে পারে উল্লেখ করে তিনি এজন্য কার্যকর প্রস্তাব নিয়ে এগিয়ে আসতে ব্যবসায়ীদের প্রতি আহ্বান জানান।
প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা মসিউর রহমান পারস্পরিক সহযোগিতা বাড়াতে চিরাচরিত কূটনৈতিক কাঠামোর বাইরে বেরিয়ে আসতে ব্যবসায়ীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
“কূটনৈতিক সম্পর্কের বাইরেও আমাদের কিছু করতে হবে। সব সময়ই ভারতকে আমাদের কিছু বলা উচিত, আমি এই ধরনের ভূমিকা পছন্দ করি না। ভারতেরও এ বিষয়ে বলা উচিত।”
“তা না হলে আমাদের মধ্যে পারস্পরিক বোঝাপড়া ও আত্মবিশ্বাসের কোনো উন্নতি হবে না। দুই দেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত চুক্তিগুলোও অঅগের মতোই রয়ে যাবে।”
মেঘালঢের মুখ্যমন্ত্রী মুকুল সাংমা তার রাজ্যের কঠিন শিলা ও চুনাপাথর উত্তোলন খাতে বাংলাদেশের সঙ্গে যৌথ বিনিয়োগ প্রস্তাব আহ্বান করেন। এছাড়া তিনি পর্যটন শিল্প নিয়ে পৃথক সম্মেলন করারও পরামর্শ দেন তিনি।
অন্যদিকে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে বাণিজ্য বাড়ানোর ব্যাপারে বেশ কিছু প্রস্তাব তুলে ধরেন ত্রিপুরার বাণিজ্য ও শিল্পমন্ত্রী তপন চক্রবর্তী।
এসবের মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশের আশুগঞ্জ বহুমুখী কাজে ব্যবহার, আগরতলা ও কলকাতার সঙ্গে বাস চালু, ভারতীয় পণ্য পরিবহনে চট্টগ্রাম বন্দরের ব্যবহারের অনুমতি দেয়া এবং বাংলাদেশের স্থলবন্দরগুলোর অবকাঠামো উন্নয়ন।