রানা প্লাজা ধস: ‘দীর্ঘমেয়াদি উদ্যোগ বাস্তবায়নে পদক্ষেপ নেই’

সাভারের রানা প্লাজা ধসের পর সরকার, মালিকপক্ষ ও বিদেশি ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলোর পক্ষ থেকে নেয়া স্বল্পমেয়াদী উদ্যোগগুলো বাস্তবায়িত হলেও মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদী উদ্যোগ বাস্তবায়নে কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি বলে সিপিডির পর্যবেক্ষণ।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 April 2014, 04:12 PM
Updated : 23 April 2014, 04:12 PM

তাছাড়া এক বছর আগে ঘটে যাওয়া ভয়াবহ ওই দুর্ঘটনায় প্রকৃত হতাহত ও নিখোঁজদের তালিকা তৈরিতেও অসামঞ্জস্যতা পেয়েছে গবেষণা প্রতিষ্ঠানটি।  

রানা প্লাজা ধসের বর্ষপূতির একদিন আগে বুধবার সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি) তা নিয়ে নিজেদের একটি গবেষণা প্রতিবেদন বুধবার প্রকাশ করেছে।

রাজধানীর ব্র্যাক ইন সেন্টারে সিপিডির অতিরিক্ত গবেষণা পরিচালক ড. কে এম মোয়াজ্জেম এ প্রতিবেদন প্রকাশ করে বলেন, সরকারসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময়ে রানা প্লাজার ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য বিভিন্ন অঙ্কের টাকা ক্ষতিপূরণ দেয়ার কথা বললেও প্রকৃতপক্ষে এ অঙ্ক যখন একজন ব্যক্তির জন্য বরাদ্দ হয় তখন তা যথেষ্ট নয়।

“বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন সাময়িক সহায়তা এলেও তাতে কোনো ধারাবাহিকতা নেই। দীর্ঘমেয়াদি কোনো সহযোগিতা নিশ্চিত হয়নি।”

এ ঘটনায় কে কত টাকা ক্ষতিপূরণ পাবে, সে বিষয়েও কোনো সুস্পষ্ট দিক-নির্দেশনা না থাকাসহ তৈরি পোশাকের ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলোর পক্ষ থেকেও উল্লেখযোগ্য কোনো অনুদান আসেনি বলে উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদেনে।

“আহতদের চিকিৎসার ক্ষেত্রেও ধারাবাহিকতা নেই। পূর্ণাঙ্গভাবে অনেকেই চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত রয়েছেন। রানা প্লাজা ধসের ফলে প্রায় ৭০০ শিশু ক্ষতিগ্রস্ত হলেও এদের মধ্যে ২৯৪ জনকে এখনো কোনো সহায়তার মধ্যে আনা হয়নি।”

রানা প্লাজার ঘটনায় আইনি ক্ষেত্রেও কোনো অগ্রগতি হয়নি বলে দাবি করেন ড. মোয়াজ্জেম।

রানা প্লাজার কর্মরত সব শ্রমিকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা, সরকার ও মালিকপক্ষের প্রতিশ্রুত পদক্ষেপগুলো বাস্তবায়ন, দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ, শ্রম মন্ত্রণালয় ও ফায়ার সার্ভিসকে শক্তিশালী করাসহ বেশ কয়েকটি সুপারিশও দিয়েছে সিপিডি।

অনুষ্ঠানে বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন বলেন, “গত ডিসেম্বরে শ্রমিকদের বেতন বৃদ্ধির কারণে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় কয়েকটি বড় ক্রেতা প্রতিষ্ঠান এদেশ থেকে বিনিয়োগ গুটিয়ে নেয়ার কথা জানিয়েছে।

“অ্যাকর্ড এবং অ্যালায়েন্সের নির্দেশনা অনুসারে কারখানার মানোন্নয়ন করতে গেলে অন্তত ২ কোটি টাকার খরচ রয়েছে। সব মিলিয়ে পোশাক শিল্পের মালিকরা ভালো নেই।”

তার এ বক্তব্যে ভিন্নমত পোষণ করে শ্রমিক নেতা নাজমা আক্তার বলেন, “কোনো কারখানা বন্ধ করতে হলে শ্রম আইন অনুসারে শ্রমিকদের পাওনা বুঝিয়ে দিয়ে তারপর বন্ধ করতে হবে। রানা প্লাজার দুর্ঘটনার জন্য তো শ্রমিকরা দায়ী নন।”

শিল্পের অন্য সমস্যাগুলোর সমাধানে মালিকদের সঙ্গে আন্দোলনে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়ে তিনি বলেন, তার আগে শ্রমিকদের সমস্ত ক্ষতিপূরণ বুঝিয়ে দিতে হবে।

রানা প্লাজার নিখোঁজ শ্রমিকদের বিষয়টি সুরাহা হওয়া জরুরি মন্তব্য করে গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি তৌহিদুর রহমান ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকরা কে কত ক্ষতিপূরণ পেয়েছে তার একটি তালিকা তৈরির কথা বলেন।

সিপিডি সভাপতি রেহমান সোবহান, আইন ও সালিশ কেন্দ্রের চেয়াম্যান হামিদা হোসেন, সংসদ সদস্য শিরিন আখতার, নারী পক্ষের শিরিন হক, অ্যাকশন এইডের আজগর আলী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।