পদ্মা সেতুর ব্যয় বাড়বে: মুহিত

পদ্মা সেতুর অর্থায়নে নতুন পরিকল্পনা নেওয়া হবে এবং তাতে ব্যয় বাড়বে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 July 2012, 05:01 AM
Updated : 16 July 2012, 05:01 AM
ঢাকা, জুলাই ১৬ (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)- পদ্মা সেতুর অর্থায়নে নতুন পরিকল্পনা নেওয়া হবে এবং তাতে ব্যয় বাড়বে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।
বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়ন বাতিলের প্রেক্ষাপটে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের ঘোষণা সরকারের পক্ষ থেকে দেওয়া হলেও এই বিষয়ে সার্বিক পরিকল্পনা এখনো চূড়ান্ত হয়নি বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী।
সচিবালয়ে সোমবার আন্তর্জাতিক কৃষি উন্নয়ন তহবিলের (আইএফএডি) প্রেসিডেন্ট কানায়ো এফ নয়ানজের সঙ্গে বৈঠকের পর পদ্মা সেতু প্রকল্প নিয়ে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন মুহিত।
তিনি বলেন, মুহিত বলেন, “পদ্মা সেতুর জন্য একটি নতুন অর্থায়ন কাঠামো প্রণয়ন করতে হবে। দেখতে হবে, অন্যান্য বন্ধু সহযোগীরা কে কী দেয়। তবে দেরি হওয়ার কারণে খরচ বাড়বে।”
সর্বমোট ব্যয় ২৯০ কোটি ডলার ধরে পদ্মা সেতু নির্মাণে বিশ্ব ব্যাংক, এডিবি, আইডিবি ও জাইকার সঙ্গে চুক্তি করেছিল সরকার।
এই প্রকল্পে সবচেয়ে বেশি ১২০ কোটি ডলার দেওয়ার কথা ছিল বিশ্ব ব্যাংকের, যদিও দুর্নীতির বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ পাওয়া গেছে দাবি করে তারা প্রকল্প থেকে সরে দাঁড়িয়েছে।
২০০৪ সালে পদ্মা সেতু নিয়ে একটি সমীক্ষা করে জাইকা। তাতে এই সেতু নির্মাণে মোট ৮ হাজার ৫৮৮ কোটি টাকা ব্যয় হবে বলে ধরা হয়।
২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় পদ্মা সেতু প্রকল্প অনুমোদন পায়। সে সময় এতে ব্যয় ধরা হয় ১০ হাজার ১৬১ কোটি টাকা বা ১৪৭ কোটি ২৭ লাখ ডলার।
এরপর ২০০৯ সালে তিন দফা এ প্রকল্পের ব্যয় বাড়ে। জানুয়ারি মাসে ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ১৮০ কোটি ডলার। আগস্টে বেড়ে হয় ২০০ কোটি ডলার, ডিসেম্বরে তা আরো বেড়ে ২৪০ কোটি ডলারে দাঁড়ায়।
২০১০ সালের ডিসেম্বরে দেশের সবচেয়ে বড় অবকাঠামো এই প্রকল্পের ব্যয় বেড়ে হয় ২৬০ কোটি ডলার। সর্বশেষ বিশ্ব ব্যাংক, এডিবি, জাইকা ও এডিবি’র সঙ্গে ঋণচুক্তির সময় এর ব্যয় আরো বেড়ে ২৯০ কোটি ডলারে গিয়ে ঠেকে।
গত মাসে বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়ন বাতিলের পর মন্ত্রিসভা দেশীয় অর্থে প্রায় ৬ কিলোমিটার দীর্ঘ পদ্মা সেতু নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতুর রূপরেখাও সংসদে তুলে ধরেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
অর্থমন্ত্রী বলেন, “পদ্মা সেতুর অর্থায়ন ও বাস্তবায়ন নিয়ে এখনো চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। হলে আমি সংবাদ সম্মেলন করে আপনাদের (সাংবাদিক) জানাব।”
বিশ্ব ব্যাংকের কাছে ধরনা দেবে না বলে সিদ্ধান্ত হলেও সংস্থাটি ‘ভুল’ বুঝে তাদের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করবে বলেও আশা করছেন তিনি।
বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নের ব্যাপারে সরকার হাল ছেড়ে দিয়েছে কি না- এ প্রশ্নের উত্তরে মুহিত বলেন, “না, না। তা হবে কেন? বিশ্ব ব্যাংকের সঙ্গে এখনো আলোচনা চলছে। ওয়াশিংটনে আমাদের নির্বাহী পরিচালক বিশ্ব ব্যাংকের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন।”
“এছাড়া বিশ্ব ব্যাংক যাতে পদ্মা সেতু প্রকল্পে ফিরে আসে সেজন্য এডিবি, জাইকা ও আইডিবিকে আমরা তৎপরতা চালাতে বলেছি,” বলেন তিনি।
পদ্মা সেতুর জন্য দেশে তহবিল সংগ্রহের বিষয়ে চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি জানিয়ে মুহিত বলেন, তবে নিজস্ব অর্থে পদ্মা প্রকল্প বাস্তবায়নের ঘোষণা দেওয়ার পর সারাদেশে ব্যাপক সাড়া মেলায় অনুদান সংগ্রহে ব্যাংক হিসাব খোলা হচ্ছে।
জনগণের ব্যাপক সাড়া পেয়ে আগ্রহীদের কাছ থেকে অনুদান সংগ্রহের জন্য দুটি ব্যাংক হিসাব খোলার সিদ্ধান্ত সোমবারই মন্ত্রিসভার বৈঠকে হয়েছে।
ব্যাংক হিসাব খোলার প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী বলেন, “প্রধানমন্ত্রী কিছু না জানাতেই মানুষ টাকা-পয়সা দিচ্ছে। সাড়া দেশের মানুষ ব্যাপক সাড়া দিয়েছে। পরশু দিন আমি সিলেটে ছিলাম। সেখানে পাঠানটুলা স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীরা আমাকে ২৫ হাজার টাকার একটি চেক দিয়েছে। মন্ত্রিসভার বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর হাতে আমি সেই চেক তুলে দিয়েছি।”
২৯০ কোটি ডলারের পদ্মা প্রকল্পেও ৬০ কোটি ডলার অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে দেওয়ার কথা ছিল বলে জানান অর্থমন্ত্রী। অনুদানের অর্থ কোনোভাবেই অন্য খাতে ব্যয় হবে না বলে জানিয়েছেন তিনি।
“যিনি যে টাকাই দিক না কেন, সবই বাজেটের মাধ্যমে খরচ হবে,” বলেন মুহিত।
দুর্নীতির বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ পাওয়ার দাবি করে গত ২৯ জুন ২৯০ কোটি ডলারের পদ্মা প্রকল্পে ১২০ কোটি ডলার ঋণ দেওয়ার চুক্তি বাতিলের ঘোষণা দেয় বিশ্ব ব্যাংক।
এরপর থেকে বিষয়টি নিয়ে দেশে আলোচনা চলছে। গত সেপ্টেম্বরে বিশ্ব ব্যাংকের সঙ্গে জটিলতা শুরুর পর মালয়শিয়ার সঙ্গেও আলোচনা এগিয়ে নেয় সরকার।
এর মধ্যেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা দেন, নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু তৈরি করা হবে। গত ৮ জুলাই সংসদে দেওয়া বক্তব্যে অর্থায়নের রূপরেখাও ঘোষণা করেন তিনি।
দেশের বহু প্রতীক্ষিত পদ্মা সেতু প্রকল্পে এডিবির ৬১ কোটি, জাইকার ৪০ কোটি এবং আইডিবির ১৪ কোটি ডলার দেওয়ার কথা ছিল।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম/এসএইচএ/এমআই/২২০৫ ঘ.