মেহেরপুরে আম রপ্তানিতে হতাশা

রপ্তানির লক্ষ্যে আম উৎপাদন করে বেচতে না পেরে হতাশায় ভুগছেন মেহেরপুরের চাষিরা।

মেহেরপুর প্রতিনিধিতুহিন আরন্যবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 June 2017, 06:45 AM
Updated : 17 June 2017, 06:45 AM

ঢাকায় নেওয়ার পর কোয়ারেন্টাইন কর্মকর্তারা ‘২০ শতাংশ আম বাতিল করায়’ এই সংকট তৈরি হয় বলে জানান বাংলাদেশ আম রপ্তানিকারক সমিতির উপদেষ্টা মঞ্জুরুল ইসলাম।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, ঢাকার সেন্ট্রাল প্যাক হাউজের কোয়ারেন্টাইন কর্মকর্তারা ২০ শতাংশ আম বাদ দেওয়ায় রপ্তানি খরচ বেড়ে যাচ্ছে। এ কারণে কিছু আম ৮৫ টাকা কেজি দরে কিনলেও সেটা অতিরিক্ত।

আবার আম চাষিরা গত বছরের মতো এ বছরও ৯৫ টাকা দাবি করছে।

রপ্তানি উপদেষ্টা মঞ্জুরুল বলছেন, “গত বছর মেহেরপুর থেকে প্যাক করে সরাসরি রপ্তানি করা হয়েছিল। তাতে কী সমস্যা হয়েছিল সে বিষয়ে আমরা কিছু জানি না।”

এখন ২০ শতাংশ আম বাদ দেওয়ায় যে সংকট দেখা দিয়েছে তা সমাধানের একটা উপায় হল – দাম ৮৫ টাকার চেয়ে নিচে নামিয়ে আনা অথবা রপ্তানি মূল্য গতবারের তুলনায় বেশি হওয়া।

রপ্তানি উপদেষ্টা মঞ্জুরুল বলেন, “ইউরোপে ভালো মূল্য পাওয়া গেলে আমরা আবার মেহেরপুরে আম কিনতে আসব।”

তবে আম চাষিদের স্থানীয় বাজারে বিক্রি করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে বলে তিনি জানিয়েছেন।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক এস এম মোস্তাফিজুর রহমান সংকটের বিষয়টি অবগত আছেন জানিয়ে বলেন, কৃষি মন্ত্রণালয় ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে সমস্যাটি সমাধানের চেষ্টা চলছে।

এদিকে আম পেকে গাছ থেকে পড়ে পড়ে নষ্ট হওয়ায় প্রতিনিয়ত চাষিদের লোকসানের পাল্লা ভারি হচ্ছে। রপ্তানির প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে বেশি ব্যয় হয় বলে তা স্থানীয় বাজারে বিক্রি করলে খরচ উঠবে না।

আম চাষি শাহিনুর রহমান বলেন, রপ্তানির জন্য উৎপাদিত প্রতিটি আমে ব্যাগ পরাতে হয়। পরিচ্ছন্নতা ও স্বাস্থ্যসম্মত প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতেও অনেক ব্যয় হয়। আবার রোজার কারণে স্থানীয় বাজারে চাহিদা কম।

তিনি প্রায় ৫০ মেট্রিকটন আম উৎপাদন করেছেন জানিয়ে বলেন, এর মধ্যে মাত্র চার মেট্রিকটন আম তিনি বেচতে পেরেছেন। এখন আর রপ্তানিকারকদের পাওয়া যাচ্ছে না।

“বাকি আম নিয়ে কী করব বুঝতে পারছি না। এখন আমাকে প্রায় ২০ লাখ টাকা লোকসান গুনতে হবে বলে মনে হচ্ছে।”

একই হতাশার কথা জানালেন বুড়িপোতা গ্রামের আম চাষি সিরাজুল ইসলাম।

“কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পরামর্শ অনুযায়ী আমি প্রায় পাঁচ লাখ আমে ব্যাগ পরিয়েছি। এর মধ্যে মাত্র পাঁচ টন আম কিনেছেন রপ্তানিকারকরা।”

একই সংকটে পড়েছেন আমঝুপি গ্রামের খলিল জোয়ার্দার, মামুন, আমদাহ গ্রামের চাষি হারন-অর রশিদসহ জেলার ৭০ জন আম চাষি।

মেহেরপুরে এ বছর ৭০ জন চাষি রপ্তানির জন্য ২০০ মেট্রিকটন আম উৎপাদন করেছেন বলে জানান কৃষি কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান।

এসব আম বাংলাদেশের রপ্তানিকারকদের মাধ্যমে সংগ্রহ করে ওয়ালমার্ট। তারা জার্মান, ফ্রান্স, সুইজারল্যান্ড, আমেরিকা ও ইংল্যান্ডসহ কয়েকটি দেশে আম সরবরাহ করে বলে জানান রপ্তানি উপদেষ্টা মঞ্জুরুল।