চিনির দামে কারসাজি: পাইকারি-খুচরায় ব্যাপক তফাৎ

রোজা সামনে রেখে রাজধানীর বাজারগুলোতে চিনির দর নিয়ে চলছে কারসাজি; পাইকারি পর্যায়ের চেয়ে খুচরায় কেজিপ্রতি ১৫ টাকা বেশি দরেও বিক্রি করতে দেখা গেছে।

সালাহউদ্দিন ওয়াহিদ প্রীতমবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 May 2017, 04:38 PM
Updated : 26 May 2017, 04:38 PM

নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যটির পাইকারি দরের সঙ্গে খুচরা দরের বিশাল তফাতের পেছনে যৌক্তিক কোনো কারণ খুঁজে পাওয়া যায়নি। এর জন্য পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতারা পাল্টাপাল্টি অভিযোগের খেলায় রয়েছেন।

নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দর নির্ধারণ ও বাজার পর্যব্ক্ষেণের দায়িত্বে থাকা সংস্থার পক্ষ থেকে কোনো তৎপরতা দেখা যায়নি। এই বিষয়ে যৌক্তিক কোনো ব্যাখ্যাও দেয়নি ট্যারিফ কমিশন।

শুক্রবার ঢাকার মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেট ও মহাখালী কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা যায়, বিভিন্ন ব্র্যান্ডের প্যাকেটজাত চিনি বিক্রি হচ্ছে কেজি প্রতি ৭২ টাকায়; খোলা চিনি বিক্রি হচ্ছে বাজার ভেদে ৬৮-৭০ টাকায়।

মোহাম্মদপুরের মুদি দোকানি এম এ রবির দাবি, পাইকারি বাজারে তাদেরকে চিনি ৬৬-৬৮ টাকায় কিনতে হচ্ছে। তাই তাদের বিক্রি করতে হচ্ছে ৭০-৭২ টাকায়।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “প্রতি সপ্তাহে অল্প অল্প কইরা গত এক মাস ধইরা চিনির দাম বাড়তাসে। এক মাস আগে দাম ছিল ৫৭-৫৮ টাকা, এখন ৭০-৭২ টাকা।”

তবে খুচরা বিক্রেতাদের দাবি নাকচ করে পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলছেন, খরচ ও লাভ যোগ করে খুচরা বাজারে চিনির দাম হওয়া উচিত সর্বোচ্চ ৬২ টাকা।

বাংলাদেশ চিনি ব্যাবসায়ী সমিতির সহ সভাপতি দেলোয়ার হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা মিল থেকে চিনি কিনি ৫৭ টাকায়। আমি যতদূর জানি, গতকালও পাইকারি ব্যাবসায়ীরা ৫৮ টাকা কেজি দরে চিনি বিক্রি করেছেন।

“আমার মতে খুচরা বাজারে চিনির দাম হওয়া উচিত ৬০ থেকে ৬২ টাকা।”

চিনির দাম বাড়ার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, “গরমের কারণে চিনির চাহিদা কিছুটা বেড়েছে। মিলে সমস্যা থাকার কারণে মাঝখানে কিছু দিন আমাদের মাল ডেলিভারিতেও ঝামেলা হয়েছিল।

“খুচরা ব্যবসায়ীরা এর সুযোগ নিচ্ছেন।”

বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় চিনি পরিশোধক সিটি গ্রুপের মহাব্যাবস্থাপক বিশ্বজিৎ সাহা বলেন, “আমরা নিয়মিত ৫৭ টাকা কেজিতে চিনি বিক্রি করছি।

“খুচরা বাজারে যে চিনির দাম বাড়ছে এর পুরো দায় ব্যবসায়ীদের। বাংলাদেশে বর্তমানে চিনির কোনো সংকট নেই।”

চিনির বাজারের কারসাজি নিয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশনের অত্যাবশ্যকীয় পণ্য বিপণন মনিটরিং সেলের গবেষণা কর্মকর্তা মাহমুদুল হাসান বলেন, “মিলগুলোর চিনি বিক্রি করার বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা রয়েছে। মিলগুলো সেই নির্দেশনা মানছে কি না আমরা সেটা দেখি।

“চিনি একবার মিল গেট থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর ডিস্ট্রিবিউটর লেভেলে কি দামে বিক্রি হচ্ছে তা দেখা আমাদের আওতায় পড়ে না।”

শুক্রবার বাজারে সিটি কর্পোরেশনের নির্ধারিত দামের চেয়ে কিছুটা বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে সব মাংস। বাজার ভেদে গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৫০০ থেকে ৫৫০ টাকা (সিটি কর্পোরেশন নির্ধারিত মূল্য ৪৭৫ টাকা), খাসির মাংস ৭৫০ (সিটি কর্পোরেশন নির্ধারিত মূল্য ৭২০ টাকা), মুরগী (দেশী) ৩৫০ থেকে ৪০০, পাকিস্তানি কর্ক ২২০-২৫০ ও ব্রয়লার ১৪৫ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে।

মাছের মধ্যে ইলিশ (আকার ভেদে) ৭০০-৫০০ টাকা, রুই (আকার ভেদে) ৩০০-৪০০ টাকা, কাতল (আকার ভেদে) ২৮০-৪০০ টাকা, শিং ৪০০-৬০০ টাকা, মাগুর ৫০০ টাকা, পাবদা ৫৫০ টাকা, কাঁচকি ৩৬০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গিয়েছে।

সবজির মধ্যে করলা (উচ্ছে) ৫০ টাকা, পটল ৫০ টাকা, ঝিঙ্গা ৫০ টাকা, চিচিঙ্গা ৫০ টাকা, পটল ৫০ টাকা, বরবটি ৬০ টাকা, বেগুন ৮০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে।