রোজায় যেমন হোটেল-রেস্তোরাঁ চায় নগর কর্তৃপক্ষ

রাজধানী ঢাকার হোটেল-রেস্তোরাঁগুলোর বাহ্যিক চাকচিক্য থাকলেও নোংরা রান্নাঘর আর অপরিচ্ছন্ন পরিবেশনা নিয়ে অভিযোগ দীর্ঘদিনের।

ফয়সাল আতিকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 May 2017, 11:08 AM
Updated : 22 May 2017, 12:37 PM

আসন্ন রোজার মাসকে সামনে রেখে সোমবার ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে এক মতবিনিময় সভায় করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তার বয়ানেও উঠে আসে এমন অভিজ্ঞতার কথা। তিনি হোটেল-রেস্তোরাঁর পরিবেশ ঠিক রাখতে কিছু নির্দেশনা  দেন।

সভায় রোজার মাসে নিরাপদ সেহরি, ইফতার নিশ্চিত করতে হোটেল-রেস্তোরাঁকে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বনের আহ্বান জানানো হয় নগর কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে।

অন্যান্য বছর রোজায় ভেজাল বিরোধী অভিযানে ভেজাল, নোংরা ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের জন্য রেস্তোরাঁগুলোকে জরিমানা করা হলেও এবার জরিমানার পাশাপাশি কারাদণ্ডের ব্যবস্থা থাকবে বলেও সভায় হুঁশিয়ার করেছেন মেয়র সাঈদ খোকন।

মতবিনিময়ে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শেখ সালাহউদ্দিন বলেন, “সারা বছর হোটেল রেস্তোরাঁগুলোর পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে গিয়ে যে অভিজ্ঞতা হয়েছে তা বাইর থেকে দেখা চিত্রের চেয়ে ভিন্ন।

“কিছু কিছু রেস্টুরেন্টের বাইরে অনেক চাকচিক্য। রেস্টেুরেন্টের ব্যবস্থাপক অনেক চৌকস। লাইটিং, ডেকোরেশন দেখে ভেতরের নোংরা পরিস্থিতি সম্পর্কে ধারণা পাওয়া সম্ভব নয়। কিন্তু তাদের অনেকের রান্নাঘরের পরিস্থিতি অত্যন্ত নোংরা থাকে। সেই পরিস্থিতি দেখে যে কারোর খাবার গ্রহণের ইচ্ছে দূর হয়ে যাবে।”

বিভিন্ন অভিযানে গিয়ে দেখা পরিস্থিতির বর্ণনা করে এই চিকিৎসক বলেন, “রান্নাঘরে বহুদিন ধরে টাইলস ভাঙা অবস্থায় থাকে, একই স্থানে বছরের পর বছর ধরে নোংরা পানি জমে থাকে। সেখানে কি পরিমাণে ব্যাক্টেরিয়া ও জীবাণু জন্মে সেটা হিসাব করা কষ্টসাধ্য। রেস্টুরেন্টকর্মীদের পরিষ্কার পরিচ্ছিন্নতার অবস্থা অত্যন্ত বাজে, রান্নাঘর আর পাশের টয়লেটে পরিস্থিতি একাকার থাকে।”

হোটেল ব্যবস্থাপকরা জেনে-বুঝেই বেশি লাভের আশায় খাবারে ভেজাল মেশায় বলেও দাবি করেন তিনি।

“কিছু কিছু হোটেল ব্যবসায়ী ও মালিক রোজার মাসে অধিক মুনাফার আশায় খাদ্যে ভেজাল মেশান, আবার খাবারের দামও বাড়িয়ে দেন। পুরোনো পোড়া তেল ব্যবহারসহ অনেক অসদুপায় অবলম্বন করেন। এটা রোজার চেতনাবিরোধী।”

সভায় নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের সদস্য আব্দুল বাতেন মিয়া শরবত, পানীয়, ফলের জুস অবশ্যই নিরাপদ পানি দিয়ে তৈরির কথা বলেন।

ডিএসসিসির নির্দেশনা

>> বাবুর্চিসহ সব রেস্তোরাঁকর্মীকে গ্লাভস ও মাথায় চুল ঢাকার মতো বিশেষ টুপি পরিধান করতে হবে।

>> রান্নার সঙ্গে যুক্তদেরকে কাজ শুরুর আগে হাত পরিষ্কার করে নিতে হবে।

>> রান্নঘর প্রতিদিন ডিটারজেন্ট দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে।

>> থালা-বাসন ও খাবার রাখার অন্যান্য পাত্র ধোয়ার ক্ষেত্রে চূড়ান্ত পর্যায়ে ব্যবহার করতে হবে খাবার উপযোগী পানি।

>> ছোঁয়াচে রোগে আক্রান্ত কর্মীদের ছুটি দিতে হবে। সুস্থ হয়ে তারা কাজে যোগ দেবে।

>> খাবারের কাছে হাঁচি-কাশি দেওয়া যাবে না।

>> রেস্তোরাঁর ডাস্টবিন অবশ্যই ঢেকে রাখতে হবে, যাতে আবর্জনায় মাছি বসার সুযোগ না পায়।

>> বেনামী কোনো কোম্পানির খাবার উপাদান কিংবা মেয়াদোত্তীর্ণ (প্যাকেটজাত) খাবার পরিবেশন করা যাবে না।

>> অনুমোদনহীন খাবার রঙ ব্যবহার করা যাবে না।

নিরাপদ খাবার নিশ্চিত করতে প্রথম রোজা থেকে ঢাকায় হোটেল-রেস্তোরাঁয় অভিযান পরিচালনা করবে সিটি করপোরেশন। অভিযানে এসব নির্দেশনা মানা হচ্ছে কিনা তা দেখা হবে বলে সভায় জানানো হয়।   

রেস্টুরেন্ট ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও এফবিসিসিআইর পরিচালক খন্দকার রুহুল আমিন, রেস্টুরেন্ট ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের ঢাকা দক্ষিণ অঞ্চলের সভাপতি শাহ সুলতান খোকন, ফল ব্যবসায়ী সমিতির মহাসচিব ফারুক সিদ্দিক, মতি সরদার জামে মসজিদের ইমাম আবু আইয়ুব আনসারি, সাকুরা বারের প্রতিনিধি জিয়াউল হক, ওয়ারি ক্লাবের প্রতিনিধি আব্দুর রব প্রমুখ মতবিনিময়ে অংশ নেন।