নতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় এগোতে হবে ‘নতুন করে’

ব্যবসা-বিনিয়োগের পরিবেশ উন্নয়নে নতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বাংলাদেশ যখন সবকিছু নতুন করে ঢেলে সাজাচ্ছে, সে সময় বৈঠক করল বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট ক্লাইমেট ফান্ডের (বিআইসিএফ) কারিগরি উপদেষ্টা কমিটি।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 April 2017, 03:52 PM
Updated : 1 May 2017, 07:38 PM

২০০৭ সালে গঠিত বিআইসিএফ এখন দ্বিতীয় ধাপ পার করছে, যারা নীতি-নির্ধারণী, শিল্প অবকাঠামোর দিক দিয়ে বাধা অপসারণ এবং খাতভিত্তিক দ্ক্ষতা বৃদ্ধি ও রপ্তানি বহুমুখীকরণের লক্ষ্যে বাণিজ্য সহায়ক পরিবেশ তৈরিতে সরকারকে সহায়তা দিয়ে আসছে।

যুক্তরাজ্যের আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থা (ডিএফআইডির) অর্থায়নে পরিচালিত এই প্রকল্পে সহায়তায় নবগঠিত বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে বিশ্ব ব্যাংক।

বিআইসিএফ-এর ১২ সদস্যের কারিগরি পরামর্শক পর্ষদে সরকার, দেশি- বিদেশি বিনিয়োগকারী, আঞ্চলিক ব্যবসায়ী, নারী উদ্যোক্তা ও পেশাজীবী, গণমাধ্যম ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি রয়েছেন। বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান কাজী এম আমিনুল ইসলাম এর প্রধান।

 

রোববার পর্ষদের প্রথম সভায় বেসরকারি উদ্যোক্তাদের তাদের বিষয়গুলো তুলে ধরার পাশাপাশি সরকারকে লক্ষ্য অর্জনে সহযোগিতার আহ্বান জানান আমিনুল ইসলাম।

তিনি বলেন, “এখন চ্যালেঞ্জগুলো ভিন্ন হওয়ায় আমাদেরকেও নতুনভাবে সবকিছু করতে হবে।”

এসডিজির লক্ষ্য এত বিপুল যে চ্যালেঞ্জগুলো ‘বহুবিধ’ বলে মন্তব্য করেন তিনি।

আমিনুল ইসলাম বলেন, “আমরা এমডিজি অর্জন করেছি। কিন্তু তার মানে এটা নয় যে, আমরা এমনি এমনিই এসডিজি অর্জন করব।

“আমাদের একসঙ্গে দুই লক্ষ্য অর্জনে কাজ করতে হবে… ২০২১ সাল নাগাদ মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ার দেশের লক্ষ্য এবং এসডিজি অর্জনের বৈশ্বিক লক্ষ্য। তাই আমাদের মানসম্পন্ন প্রবৃদ্ধি দরকার, যা এমডিজি থেকে পুরোপুরি ভিন্ন।”

“আমাদের বেসরকারি খাতকে উদ্দীপ্ত করতে হবে, যাতে তারা কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে পারে।”

আগামী বিশ্ব ব্যাংকের ‘ডুয়িং বিজনেস’ সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান একশ’র মধ্যে (১৭৮ থেকে) নিয়ে আসার লক্ষ্যে গত জানুয়ারিতে ব্যবসার পরিবেশ উন্নয়নে ব্যাপক সংস্কারের ঘোষণা দেয় বিডা।

বিনিয়োগকারীদের স্বল্প সময়ে দ্রুত সেবা দিতে আগামী বছরের জুনে সম্পূর্ণ অনলাইনভিত্তিক ‘ওয়ান স্টপ সার্ভিস’ চালু করতে যাচ্ছে বিডা।

বিআইসিএফ’র সদস্য সচিব ও জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ মাশরুর রিয়াজ বলেন, বিডার লক্ষ্য অর্জন করার মতো।

“এটা অসম্ভব নয়। তারা যদি এটা অর্জন করতে পারে তাহলে বিশ্বের কাছে একটা অনেক বড় বার্তা যাবে যে, ব্যবসার পরিবেশ উন্নয়নে বাংলাদেশ ব্যাপক কাজ করছে।”

“পুরোপুরি মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ার দিকে বাংলাদেশ খুব সঠিকভাবে এগোচ্ছে।”

বর্তমানে বছরে কর্মসংস্থান সৃষ্টি ১২ লাখ থেকে ২২ লাখে নেওয়াসহ বেশ কিছু লক্ষ্য বাংলাদেশকে অর্জন করতে হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

পাশাপাশি রপ্তানি বর্তমানের ৩১০০ কোটি ডলার থেকে ৫৫০০ কোটি ডলারের কাছাকাছি নিতে হবে বলে অভিমত তার।

“রপ্তানি বহুমুখীকরণসহ আরও কিছু বাধা ভাঙতে হবে।”

.

বিআইসিএফের কর্মসূচি ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, এর তিনটি দিক রয়েছে।

“প্রথমত মূল ব্যবসা পরিচালনার পরিবেশের উন্নয়ন, দ্বিতীয়ত শিল্প অবকাঠামোয় বেসরকারি বিনিয়োগকে সহায়তা এবং তৃতীয়ত খাতভিত্তিক দক্ষতা ও রপ্তানি বহুমুখীকরণ।”

তিনি বলেন, সূচক উন্নয়নে কী করতে হবে সে বিষয়ে তারা প্রাথমিক বিশ্লেষণ করেছেন।

“মাঠ পর্যায়ে কী করা দরকার তা বের করতে কাজ অব্যাহত রাখবে বিআইসিএফ। নতুন কী করা দরকার সে বিষয়ে দুই বছরে আমরা আরেকবার নজর দেব।”

‘মানসিকতার পরিবর্তন জরুরি’

বিডার সংস্কার পরিকল্পনা বাস্তবায়নই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ মন্তব্য করে এক্ষেত্রে সরকারি সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয়ের অভাবকে প্রধান বাধা হিসেবে চিহ্নিত করেছেন বৈঠকে অংশগ্রহণকারীরা।

উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যদের মধ্যে ঢাকা চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি আবুল কাসেম খান, ফরেন ইনভেস্টরস চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি রূপালী চৌধুরী, চিটাগং চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির পরিচালক মাহফুজুল হক শাহ, আইডিএলসি ফাইন্যান্স লিমিটেডের সিইও আরিফ খান, বিজনেস ইনিশিয়েটিভ লিডিং ডেভেলপমেন্টের উপদেষ্টা আসিফ ইব্রাহিম, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রধান সম্পাদক তৌফিক ইমরোজ খালিদী এবং মেট্রোপলিটন চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি নিহাদ কবির বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
সেবা প্রদানে সরকারি কর্মকর্তাদের মানসিকতা ও আচরণ পরিবর্তনের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন তারা।

মাহফুজুল হক শাহ বলেন, দীর্ঘ দিন বললেও সুরাহা না হওয়ায় তিনি হতাশ।

এনবিআর ও চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের মধ্যে সমন্বয়ের ঘাটতির ওপর আলোকপাত করে তিনি বলেন, “আমি নিজে গত পাঁচ থেকে ছয় বছর ধরে চট্টগ্রাম বন্দরের সমস্যাগুলো নিয়ে বলে আসছি। কিন্তু সেগুলোর বিষয়ে কখনোই নজর দেওয়া হচ্ছে না।

“আমরা পরিকল্পনা করি, কিন্তু বাস্তবে এর প্রয়োগ দেখি না। আমি হতাশ।”

রপ্তানি লক্ষ্য অর্জনের প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, “এভাবে চললে কেমন করে তা সম্ভব, তা আমি বিশ্বাস করতে পারি না।”

সরকারি কর্মকর্তাদের আচরণ এবং দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনের ওপর গুরুত্ব আরোপ করে তৌফিক ইমরোজ খালিদী বলেন, “তাদের আচরণ বা অদক্ষতা এবং দুর্নীতি-এর কোনোটিই আমরা মেনে নিতে পারি না।

“সিভিল সার্ভেন্টদের এটা বোঝা গুরুত্বপূর্ণ যে, তারা সেখানে আছে সেবা দেওয়ার জন্য এবং টেবিলের সামনের মানুষটি আসলে তাদের সেবা কিনছে, তাদের কাছে কোনো সুবিধা চাইছে না।”

আসিফ ইব্রাহিম বলেন, তার অভিজ্ঞতা হচ্ছে কোনো সংস্কারের বিষয় এলে আমলারা সব সময় খুব আগ্রহ দেখান এবং বাস্তবায়ন করে ফেলতে চান।

“কিন্তু সেটা যখন বাস্তবায়নের সময় আসে তখন আন্তঃমন্ত্রণালয় সমন্বয় আর হয়ে ওঠে না।”

“সহজে সমাধান করা যায় এমন বিষয়ের ওপরই আমরা নজর দিই। কিন্তু বাস্তবে নতুন কিছুর ক্ষেত্রে আমরা অনেক প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হই। সবার আগে মানসিকতার পরিবর্তনের ওপর নজর দেওয়া দরকার।”

নিহাদ কবির বলেন, অনুমোদন দেওয়ার দায়িত্বে যেসব সরকারি কর্মকর্তা থাকেন তারা সব সময় আইন অনুযায়ী চলেন না। তিনি একজন ক্ষমতাবান ন্যায়পাল চান, যার কাছে মানুষ অভিযোগ জানাতে পারে।

বিআইসিএফের উদ্যোগকে ‘গুরুত্বপূর্ণ ও সময়োপযোগী’ মন্তব্য করে এর প্রশংসা করেন আরিফ খান।

এই সংস্কারের পক্ষে রাজনৈতিক সমর্থন রয়েছে জানলে সরকারি কর্মকর্তারা আরও গুরুত্ব দিয়ে কাজ করবেন বলে মন্তব্য করেন তিনি।

বিডা চেয়ারম্যান বলেন, তারা বুঝতে পেরেছেন তাদের টার্গেট ‘গতানুতিক নয় এবং এখানে ব্যর্থতার সুযোগ নেই’।