শ্রমিক নিরাপত্তার কথা শুধু বাংলাদেশে কেন, প্রশ্ন বাণিজ্যমন্ত্রীর

বিদেশি সংস্থা ও ক্রেতারা বাংলাদেশে তৈরি পোশাক খাতের শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিয়ে সোচ্চার হলেও প্রতিযোগী দেশগুলোর বিষয়ে কোনো উচ্চবাচ্য করে না বলে অভিযোগ করেছেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 April 2017, 12:45 PM
Updated : 28 April 2017, 04:15 PM

রাজধানীতে শুক্রবার এক অনুষ্ঠানে উপস্থিত আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) আবাসিক প্রতিনিধি ও কানাডার হাই কমিশনারকে সামনে রেখে এ অভিযোগ করেন তিনি।

তোফায়েল বলেন, বিদেশিরা কেবলমাত্র বাংলাদেশে শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিয়ে, কারখানার কর্মপরিবেশ নিয়ে কথা বলে।

“বিশ্বের অন্যান্য দেশ নিয়ে কথা বলছে না কেন? তারাওতো আমেরিকা, কানাডা, ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশে পণ্য রপ্তানি করে। ভিয়েতনাম, চীন, ইন্ডিয়াতে গিয়ে তারা এসব বিষয়ে কথা বলে না।

“কোনো একটা দেশ সম্পর্কে একটি শব্দও উচ্চারণ করে না অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্স।”

জাতীয় পেশাগত নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্য দিবস উপলক্ষে রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন(কেআইবি) মিলনায়তনে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বাণিজ্যমন্ত্রী।

রানা প্লাজা ধসের ঘটনার পর শ্রমিকদের অধিকার এবং কারখানার নিরাপত্তা ও কর্মপরিবেশ নিয়ে বিদেশি ক্রেতারা ধারাবাহিকভাবে চাপ সৃষ্টি করলে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের দাম না বাড়ানোর সমালোচনা করেন বাণিজ্যমন্ত্রী।

তিনি বলেন, ওই ঘটনার পর জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে বিরূপ প্রচারের মধ্যে ক্রেতা শ্রমিকদের সুবিধার কথা চিন্তা করে পণ্যের দাম বৃদ্ধি করেনি।

“আমরা অনুরোধ করেছি, তাও তারা করেনি।তাদের (শ্রমিকদের) স্বার্থ দেখার জন্যতো পণ্যের দাম বাড়াতে হবে। সেটা করলে আমরা কারখানা মালিকদের বেতন বাড়ানোর চাপ দিতে পারতাম।”

অনেকে ‘বিদেশি বন্ধুদের’ কাছে ভুল তথ্য পরিবেশন করে, যা দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের স্বার্থের বিরুদ্ধে ভূমিকা রাখে বলে অভিযোগ করেন তোফায়েল।

চার বছর আগের রানা প্লাজা ধসের পর কারখানার নিরাপত্তা ও কর্মপরিবেশে উন্নয়নে নেওয়া পদক্ষেপ তুলে ধরে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, “আমাদের কারখানা পরিদর্শনের জন্য জনবল দ্বিগুণ করা হয়েছে। অনেক কাজ আমরা করেছি, এসব করে সাসটেইনেবিলিটি কমপ্যাক্টের মধ্যে এসেছি।”

ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনালের একটি গবেষণার প্রসঙ্গ টেনে তোফায়েল আহমেদ বলেন, “তারা দেখিয়েছে, শ্রমিকরাও বলছে তাদের ট্রেড ইউনিয়ন নেতা নিজেদের মধ্য থেকে নির্বাচিত হোক, কোনো বহিরাগত নয়। এটা একটি ভাল উদ্যোগ বলেই আমি মনে করি।”

অনুষ্ঠানে শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, “দেশে বর্তমানে শ্রমিকদের ৮৩ লাখ অর্থনৈতিক ইউনিট আছে। সংবাদপত্রসহ সব জায়গায় শ্রমিকদের নিরাপত্তা ও কর্মপরিবেশের বিষয় আছে।

“কিন্তু আমরা সব সময় ফ্যাক্টরির দিকে তাকাই। এর বাইরে লক্ষ লক্ষ শ্রমিক সেদিকেও আমাদের নজর দিতে হবে। সেটা কেবল মানুষকে সচেতন করে সম্ভব।”

শ্রম প্রতিমন্ত্রী জানান, দেশের কল-কারখানার জন্য ৩২২ জন পরিদর্শক আছেন, ১৬০টি পদ খালি আছে।

“আমরা রিকুইজিশন দিয়েছি। মোট ৪৭৫ জন পরিদর্শক দিয়ে সারা বাংলাদেশে পরিদর্শন সম্ভব নয়। সব কারখানা পরিদর্শন করতে হলে লাখখানেক পরিদর্শক দরকার।”

অনুষ্ঠানে কানাডার হাই কমিশনার বেনোয়া-পিয়েরে লাঘামি বলেন, “বাংলাদেশে শ্রমিকদের স্বার্থ রক্ষায় অনেক কাজ হলেও কিছু করার এখনো বাকি আছে। কারখানায় শ্রমিকদের স্বাস্থ্যের সুরক্ষা এবং কর্মক্ষেত্রের নির্যাতন বন্ধ করতে হবে।”

তৈরি পোশাক শিল্পমালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, “শ্রমিকরা আহত কিংবা নিহত হোক সেটা আমরা মালিকরা কখনো চাই না।

“আমরা কারখানার কর্মপরিবেশ ঠিক করছি। শ্রমিকদের জীবন হুমকিতে থাকবে এমন কারখানা আমরা কোনোভাবে চালাতে দিব না।”

অনেকে দেশ-বিদেশে ভুল তথ্য দেওয়ার কারণে গার্মেন্টস শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হয় বলে মন্তব্য করে সিদ্দিকুর বলেন, “শ্রমিকরাও ক্ষতিগ্রস্ত হন। আমরা কেউই যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হই- সেদিকে সবার খেয়াল রাখা দরকার।”

শ্রম মন্ত্রণালয়ের সচিব মিকাইল শিপারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের মহাপরিদর্শক মো. সামছুজ্জামান ভূইয়া  ও আইএলও কান্ট্রি ডিরেক্টর শ্রীনিবাস বি রেড্ডি বক্তব্য দেন।