বাঁশের কাঠামোয় টেলিযোগাযোগ টাওয়ার ইডটকোর

টেলিযোগাযোগ টাওয়ার তৈরির ইতিহাসে প্রথমবারের মতো বাঁশের কাঠামোয় টাওয়ার স্থাপন করেছে টেলিযোগাযোগ অবকাঠামো প্রতিষ্ঠান ‘ইডটকো বাংলাদেশ’।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 March 2017, 01:22 PM
Updated : 28 March 2017, 01:22 PM

রাজধানীর উত্তরার ৫ নম্বর সেক্টরের একটি বাড়ির ছাদে সম্প্রতি উদ্ভাবনীমূলক এ টাওয়ার স্থাপন করা হয়েছে।

মঙ্গলবার ওয়েস্টিন হোটেলে আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্ভাবনীমূলক এই টাওয়ারের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়।

এ উদ্যোগের প্রশংসা করে অনুষ্ঠানে টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি চেয়ারম্যান শাহজাহান মাহমুদ বলেন, “বাংলাদেশে প্রায় ৩০ হাজার টাওয়ার রয়েছে। আগামীতে নতুন প্রযুক্তি ফোর-জি এলটিই আসছে, আরো টাওয়ার প্রয়োজন হবে। আমার টাওয়ার শেয়ারিং নীতিমালা তৈরি করছি, শিগগিরই কিছু কোম্পানি এই টাওয়ার তৈরির কাজ করবে।

“টেলিকম সেক্টরে সেবাগুলো নির্দিষ্ট করে দেওয়া হবে; যেমন অপারেটররা শুধু টেলিকম সেবা দেবে, আগামীতে তারা টাওয়ার বা লাইন স্থাপন করতে পারবে না। এর ফলে এ খাতে সেবা আরো ভাল হবে।”

বাঁশের কাঠামোয় টাওয়ার সফলতা পেলে টাওয়ার নীতিমালায় এ বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত করা হবে জানিয়ে বিটিআরসি চেয়ারম্যান বলেন, “যাতে ভবিষ্যতে এসব টাওয়ার তৈরিতে কোম্পানিগুলো উৎসাহ পায়।”

ইডটকো গ্রুপের সিইও সুরেস সিধু বলেন, “টেকসই প্রাকৃতিক সম্পদ বাঁশকে টেলিযোগাযোগ অবকাঠামো নির্মাণে ব্যবহার করে পরিবেশের উপর এর প্রভাব কমানোর উদ্দেশ্যেই মূলত আমরা এ উদ্যোগটি নেই। বাংলাদেশের রাজধানীর অধিবাসীদের জীবনমান উন্নয়নে আমাদের অগ্রগণ্য ভূমিকার আরেকটি নিদর্শন হবে এই টাওয়ার।”

বুয়েটের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক সৈয়দ ইশতিয়াক আহমেদের নেতৃত্বে একটি গবেষক দল টেলিযোগাযোগ অবকাঠামোর নকশা এবং নির্মাণে গতানুগতিক স্টিলের অবকাঠামোর বিকল্প উপাদান হিসাবে বাঁশের সক্ষমতার উপর গবেষণা কাজটি পরিচালনা করেন।

অধ্যাপক সৈয়দ ইশতিয়াক আহমেদ বলেন, “প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধ বাংলাদেশে বাঁশ একটি সহজলভ্য উপাদান। প্রযুক্তিগত অগ্রগতিতে অবদান রাখতে এ ধরনের প্রাকৃতিক সম্পদের ব্যবহার এ দেশের পরিবেশের সাথেও সামঞ্জস্যপূর্ণ।”

অনুষ্ঠানে বিটিআরসি ভাইস চেয়ারম্যান আহসান হাবীব খানসহ ইডটকো গ্রুপের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, কাঁচা বাঁশকে নমনীয় এবং প্রসারণীয় শক্তি দিয়ে কংক্রিটের ওজন বহন করার উপযোগী করলে এটি টেলিযোগাযোগ অবকাঠামো তৈরিতে সক্ষম উপাদানে পরিণত হয়।

এটি প্রতি ঘণ্টায় ২১০ কিলোমিটার পর্যন্ত বাতাসের গতিতে টিকে থাকতে পারে এবং সঠিক রক্ষণাবেক্ষণ করলে এর আয়ুষ্কাল প্রায় ১০ বছর পর্যন্ত হবে বলে আশা করছে নির্মাণকারীরা।

বাঁশের তৈরি একটি টাওয়ার নির্মাণ করতে সময় লাগে ১২ দিন। গতানুগতিক স্টিলের টাওয়ারের চেয়ে এটি তৈরিতে কম জ্বালানি ব্যয় হয়। এ টাওয়ারে একই সঙ্গে সর্বোচ্চ আটটি এন্টেনা স্থাপন করা সম্ভব, যার প্রতিটিই একই সঙ্গে কার্যকর থাকবে।

এ টাওয়ারটির আরেকটি সুবিধা হল, বাঁশের ওজন প্রাকৃতিকভাবে হালকা হওয়ার কারণে এটি সহজেই বহন করা যায় এবং ভবনের উপর অতিরিক্ত কোনো চাপ সৃষ্টি না করেই স্থাপন করা যায়।

চলতি বছরে ইডটকো ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় তাদের পরিকল্পনার বাস্তবায়ন হিসাবে আরো কিছু বাঁশের টাওয়ার স্থাপন করবে বলে অনুষ্ঠানে জানানো হয়।  

২০১৮ সালে প্রতিষ্ঠানটি যেসব দেশে তাদের কার্যক্রম রয়েছে এবং প্রাকৃতিক সম্পদ বাঁশের সহজলভ্যতা রয়েছে সেসব দেশে এই সল্যুশন নিয়ে যাবে বলে জানায় ইডটকো।

২০১২ সালে প্রতিষ্ঠিত ইডটকো এশিয়ার প্রথম আঞ্চলিক ও সমন্বিত টেলিযোগাযোগ অবকাঠামো কোম্পানি, যা টাওয়ার ভাড়া দেওয়া, কো-লোকেশন, বিল্ড-টু-স্যুট, জ্বালানি, ট্রান্সমিশন ও রক্ষণাবেক্ষনসহ (ওঅ্যান্ডএম) সব ধরনের অবকাঠামো সেবা দিয়ে থাকে।