বুধবার সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের খেলার মাঠে নবায়নযোগ্য শক্তি নিয়ে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, “ওপেন এন্ডেড না হয়ে গবেষণা হবে কনটেক্সচুয়াল। কী গবেষণা করলে দেশ লাভবান হবে, মানুষ লাভবান হবে, সেটা চিন্তা করে এবং মানুষের কাছে প্রয়োগযোগ্য হবে ...।
“আমরা অনেক দূরের অবশ্যম্ভাবী বিষয় নিয়ে ভাবব, সেটাও আমাদের স্বপ্নের বাইরে থাকবে না; কিন্তু আমাদের মাটির কাছে যেগুলো আছে সেগুলোকে সমাধান করব। দুয়ের সমন্বয়ে কাজ করলে আমরা কেবল নিজেদের পথচলাটাকে সহজ করব না, পৃথিবীর অন্য অনেক দেশের পথচলাকে সহজ করে দেব।”
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শক্তি ইনস্টিটিউট আয়োজিত সপ্তদশ নবায়নযোগ্য শক্তি ও সবুজ জ্বালানি এক্সপোর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অতিথির বক্তব্যে ‘কনটেক্সচুয়াল রিসার্চ’ প্রসঙ্গেও কথা বলেন তৌফিক-ই-এলাহী।
“বিসিএসআইআরে গিয়ে বললাম, আমরা সূর্য থেকে পাক (রান্না) করব কীভাবে, সেটা করে দেন। আমাদের দেশের মায়েরা গ্রামে ফুয়েল নিয়ে পাকের জন্য, হয়তো কাঠখড়, না হয় কেরোসিন, কেউ আবার ইলেকট্রিসিটির দ্বারস্থ হয়।
ইনোভেশন, ইনকিউবেশন ও এন্ট্রাপ্রেনিওরশিপ- এ তিনের সমন্বয় সাধনের উপর গুরুত্ব দিয়ে নিজেদের আবিষ্কারকে সংরক্ষণ ও বাণিজ্যিক পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার কথা বলেন প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি উপদেষ্টা।
খাবার অপচয়ের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, “একটা হিসাব দেখেছিলাম, পৃথিবীর উন্নত দেশগুলোতে খাদ্য অপচয়ের পরিমাণ এক-তৃতীয়াংশ। তার বিপরীতে আফ্রিকায় এখন দুর্ভিক্ষ চলছে। সে কারণে আমরা যদি আমাদের চিন্তার মধ্যে পরির্বতন আনতে পারি, তাহলে অনেক দূর এগিয়ে যেতে পারব।”
পৃথিবীর প্রতি দায়িত্বশীলতার পাশাপাশি পরিবেশের প্রতি লক্ষ্য রেখে সাশ্রয়ী হওয়ার ওপর জোর দেন তৌফিক-ই-এলাহী।
“আমার যদি বেশি হয়, তাহলে অন্যের সঙ্গে শেয়ার করব। এই দৃষ্টিভঙ্গিটা আমাদের খুব প্রয়োজন। জীবনের প্রতি ক্ষেত্রে আমার চারপাশ নিয়ে ভাবি, পরিবেশ আছে, সেটাকে সুন্দর রাখার চেষ্টা করি; তাহলে কিন্তু আমরা শুধু নিজেদের সমাধান করব না, পৃথিবীতে নেতৃত্ব দিতে পারব।”
অনুষ্ঠানে উপস্থিত জার্মানির নেগাওয়াট রেভল্যুশনের প্রতিষ্ঠাতা ম্যাথিয়াস গেলবারকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, “তিন বছর আগ থেকে আমরা নবায়নযোগ্য শক্তিকে কৃষি কাজের সেচের ক্ষেত্রে ব্যবহারের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। আমার সেচের জন্য সোলার প্যানেল বসানোর কাজ করছি।”
একইসঙ্গে গ্রামের মানুষের জন্য সুপেয় পানির ব্যবস্থা করার ক্ষেত্রে সৌরবিদ্যুৎ ব্যবহারের উদ্যোগ নিয়ে কাজ চলছে বলে জানান জ্বালানি উপদেষ্টা।
উদ্বোধনীতে অতিথি বাংলাদেশ সৌরশক্তি সমিতির সভাপতি অ্যাপক মুহাম্মদ ইব্রাহীম বলেন, “গৃহস্থালিতে সৌরবিদ্যুৎ সিস্টেম বসানোর সংখ্যার জন্য বিশ্বসভায় বাংলাদেশের একটা অবস্থান আছে, সেটা নিয়ে আমরা বড়াই করতেই পারি। কিন্তু সেটার যোগান কিন্তু সীমাবদ্ধ। একারণে এটাকে টেকসই একটা পর্যায়ের নেওয়ার জন্য গ্রিডে যুক্ত করা নিয়ে ভাবতে হবে।”
২০২১ সালের মধ্যে নবায়নযোগ্য শক্তি থেকে ২০০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পেতে সরকারি লক্ষ্যমাত্রার বিষয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, “আমাদের নবায়নযোগ্য শক্তির বড় অংশ আসে বায়ু থেকে। সেটার বাইরে সৌরশক্তি থেকে অধিকমাত্রায় বিদ্যুৎ প্রাপ্তির বিষয় নিয়ে গবেষণা করার সময় এখন এসেছে।”
উদ্বোধনীর অনুষ্ঠানের সভাপতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, “নিজের পরিবেশ নিজে ঠিক রাখা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। সেটার সঙ্গে সঙ্গে অপচয়ও রোধ করতে হবে। দেখা যায়, আমরা একটা অংশ অপচয়ের কারণে অন্যরা সেটা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।”
এ সময় জার্মানির নেগাওয়াট রেভল্যুশনের প্রতিষ্ঠাতা ম্যাথিয়াস গেলবার বলেন, “নবায়নযোগ্য শক্তির ব্যবহারের দিকে ঝোঁকার পাশাপাশি আমাদের আচরণগত পরিবর্তনটার জরুরি। সেটা করতে পারলে, আমাদের জ্বালানির ব্যবহার কয়েকগুণ কমে যাবে।”
তিনি বলেন, “বাংলাদেশ গৃহস্থালিতে সৌরশক্তির সিস্টেম বসানোর ক্ষেত্রে চ্যাম্পিয়ন, আমার আশা তারা কৃষিখাত, সুপেয় পানির প্রাপ্তিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সৌরশক্তি ব্যবহারে চ্যাম্পিয়ন হবে।”
অনুষ্ঠানের শুভেচ্ছা বক্তব্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শক্তি ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক সাইফুল হক জানান, চার দিনব্যাপী এক্সপোতে নবায়নযোগ্য শক্তি নিয়ে বিভিন্ন প্যানেল আলোচনার পাশাপাশি থাকছে কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের নিয়ে বিতর্ক এবং নবায়নযোগ্য শক্তি অলিম্পিয়াড। পাশাপাশি চলবে নবায়নযোগ্য শক্তি উৎপাদনকারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রদর্শনী।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে শ্রেডা চেয়ারম্যান হেলাল উদ্দিন, এনার্জি অ্যান্ড পাওয়ার রিসার্চ কাউন্সিলের চেয়ারম্যান আনওয়ারুল ইসলাম শিকদার, বিআইএফএফএল-এর নির্বাহী পরিচালক ফরমানুল ইসলাম বক্তব্য দেন।
আয়োজনের মিডিয়া পার্টনার হিসাবে রয়েছে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম।