এক বছরে সাইবার হামলা বেড়েছে ৪৪ শতাংশ: পলক

বাংলাদেশে ইন্টারনেটে ডাটা ব্যবহারের হার বাড়ার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সাইবার আক্রমণের ঘটনা বাড়ছে বলে জানিয়েছেন তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 March 2017, 10:11 AM
Updated : 9 March 2017, 11:03 AM

সাইবার আক্রমণে জড়িত হ্যাকাররা ব্যক্তি ও রাজনৈতিক পর্যায়ে প্রতিশোধপরায়ণ কোনো উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে এসব কাজ করছে বলেও মনে করেন তিনি।

বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীর বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল ভবনে ‘আন্তর্জাতিক সাইবার নিরাপত্তা সম্মেলনে’ অতিথির বক্তব্যে গত এক বছরে সাইবার আক্রমণ বাড়ার পরিসংখ্যান তুলে ধরেন প্রতিমন্ত্রী।

পলক বলেন, “ডাটা ব্যবহারের সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে সাইবার অ্যাটাকও। গত এক বছরেই তো ৪৪ শতাংশ বেড়েছে।

“হ্যাকাররা ক্রমেই প্রতিশোধপরায়ণ হয়ে উঠছে। ব্যক্তি পর্যায় তো বটেই, এখন তাদের লক্ষ্য আরও বড়। বড় কোনো রাজনৈতিক এজেন্ডা নিয়ে তারা একের পর এক সাইবার অ্যাটাক চালাচ্ছে।”

হ্যাকাররা রাষ্ট্রীয় খাতে ‘বড় হুমকি হয়ে উঠছে’ মন্তব্য করে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের এই প্রতিমন্ত্রী বলেন, “সাইবার সিকিউরিটি নিঃসন্দেহে বড় এক চ্যালেঞ্জ আমাদের জন্য।

“সাইবার নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী করতে আমাদের নতুন ধারণা গ্রহণ করতে হবে। পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপের মাধ্যমে আরও দক্ষ জনশক্তি গড়ে তুলতে হবে আমাদের।”

তথ্যপ্রযুক্তি খাতে সুযোগ, প্রকল্প আর উদ্যোগ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে হুমকিও বাড়তে থাকায় নিরাপত্তা ঝুঁকিতে থেকে মানুষ একসময় প্রযুক্তির উপর থেকে আস্থা হারাতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন পলক।

এমনকি বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল ও সরকারের ওপর থেকেও মানুষ আস্থা হারাতে পারে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “যেকোনো মুহূর্তে সাইবার অ্যাটাক হতে পারে। কাঠামোগত পরিবর্তনের পাশাপাশি আমাদের জনশক্তিরও আরও বেশি দক্ষতা প্রয়োজন।”

অনুষ্ঠানে ‘চ্যালেঞ্জ সাইবার থ্রেটস: কান্ট্রি, ওয়ার্ল্ড, সাইবার সিকিউরিটি’ শিরোনামে একটি সমীক্ষাও উপস্থাপন করেন পলক।

দেশের প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে নিজ উদ্যোগে সাইবার নিরাপত্তা বিষয়টি সুসংহত করার আহ্বান জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী পলক বলেন, “সরকারি-বেসরকারি প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের সবারই এখন এই বিষয়টিকে প্রাধান্য দেওয়া উচিত।

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক। (ফাইল ছবি)

“বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর কম্পিউটারাইজেশন, অপারেশনস-যাই বলি না কেন, খুব দ্রুত নিজেদের সাইবার নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও শক্তিশালী করতে হবে।”

বাংলাদেশে ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির প্রসঙ্গও উঠে আসে তার আলোচনায়।

কনফারেন্সের বিশেষ অতিথি ছিলেন লিথুনিয়ার সাবেক অর্থমন্ত্রী রিমাতাস জাইলিয়াস।

‘সাইবার ওয়ার্ল্ড ইজ গোয়িং ওয়াইল্ড’ শিরোনামে মূল বক্তব্য উপস্থাপনের সময় তিনি বিশ্ব অর্থনীতিতে সাইবার হুমকির বিষয়টি নিয়ে নানা তথ্য-উপাত্ত উপস্থাপন করেন।

রিমাতাস জাইলিয়াস বলেন, “তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলো যখন প্রযুক্তি খাতে উন্নতির দিকে ধাবিত হচ্ছে, তখনই তাদের বড় বাধা সাইবার থ্রেট। আর তা ক্রমেই বাড়ছে। বিশ্ব অর্থনীতিতে সাইবার নিরাপত্তার বিষয়টি এখন গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।”

সাম্প্রতিক সময়ের এক সমীক্ষায় সাইবার আক্রমণের ঘটনায় বিশ্বের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে ৬৬০ মিলিয়নের মতো রেভিনিউ হারাতে হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের অধীনে পরিচালিত লিভারেজিং আইসিটি ফর এমপ্লয়মেন্ট অ্যান্ড গভার্নেন্স (এলআইসিটি) প্রকল্পের বাংলাদেশ গভর্নমেন্ট ইনসিডেন্স রেসপন্স টিমের প্রথম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে আয়োজন করা হয় এই সেমিনার।

এতে ফায়ার আই, এনআরডিএস, সিএ টেকনোলজিস, মাইক্রোসফট, সিসকো, রিভে সিস্টেমস ও ওয়ান ওয়ার্ল্ড ইউএসএর মতো সাইবার নিরাপত্তা বিষয়ক সংস্থাগুলো অংশ নেয়।