জলের দরে ফরাসিদের হাতে ভারতীয় অ্যাম্বাসেডর

দেশি-বিদেশি নামি গাড়ির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে শেষ পর্যন্ত আর টিকতে পারল না ভারতীয় গাড়ির ঐতিহ্যবাহী ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 Feb 2017, 09:12 AM
Updated : 12 Feb 2017, 10:34 AM

নির্মাতা প্রতিষ্ঠান হিন্দুস্তান মোটরস অনেকটা পানির দামেই, মাত্র এক কোটি ২০ লাখ ডলারে (৮০ কোটি রুপি) তাদের এই আইকনিক ব্র্যান্ডটি ফরাসি কোম্পানি পুজোর কাছে বিক্রি করে দিয়েছে বলে বিবিসির খবর।

এক সময় ভারতে মর্যাদার প্রতীক হয়ে ওঠা এই গাড়ি দেশটির মন্ত্রীদের কাছে খুবই প্রিয়। কিন্তু লোকসানের মুখে ২০১৪ সালে হিন্দুস্তান মোটরস অ্যাম্বাসেডর উৎপাদন বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়।

হিন্দুস্তান মোটরসের মালিক সিকে বিড়লা শিল্পগোষ্ঠী জানিয়েছে, তারা ইতোমধ্যে  পুজোর সঙ্গে ৮০ কোটি রুপির চুক্তি চূড়ান্ত করেছে।

বিড়লার একজন মুখপাত্র জানিয়েছেন, চুক্তি অনুযায়ী অ্যাম্বাসেডরের ব্র্যান্ড ও ট্রেডমার্ক ফরাসি ওই কোম্পানির কাছে বিক্রি হয়ে গেছে।

ষাট ও সত্তরের দশকে যারা ভারতে বেড়ে উঠেছেন, তাদের কাছে অ্যাম্বাসেডর কেবল একটি গাড়ি নয়, এটা ভারতীয় শহুরে দৃশ্যপটের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ।

তেমন দৃষ্টিনন্দন না হলেও সীমিত সামর্থ্যের মধ্যে চার চাকার এই চওড়া গাড়ি দীর্ঘদিন বেশিরভাগ ভারতীয়র কাছে ছিল কাঙ্ক্ষিত বাহন। অনেকের কাছে এখনও এই গাড়ি ফেলে আসা তারুণ্যের স্মারক।

পুজো ভারতের বাজারে অ্যাম্বাসেডরকে নতুন করে চালু করবে, নাকি তাদের অন্য কোনো পরিকল্পনা আছে- তা এখনও স্পষ্ট নয়।

ব্রিটিশ গাড়ির ব্র্যান্ড মরিস অক্সফোর্ডের আদলে ১৯৫৮ সালে অ্যাম্বাসেডর বাজারে আনে হিন্দুস্তান মোটরস। হুগলির উত্তরপাড়ার কারখানায় তৈরি করা এ গাড়ি দ্রুত সারা দেশে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।

একসময় মন্ত্রী-আমলা থেকে শুরু করে নায়ক-নায়িকা সবাই এ গাড়িতেই চড়তেন; ভারতে সেডান মানেই ছিল গোলগাল চেহারার এই অ্যাম্বাসেডর। আশির দশক প‌র্যন্ত ভারতের বাজারে ছিল তার একচ্ছত্র আধিপত্য।

১৯৮০ সালে মারুতি ৮০০ বাজারে এলে অ্যাম্বাসেডর প্রথম চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে। অবশ্যি মারুতি শেষ পর্যন্ত অ্যা ম্বাসেডরের জন্যএ বড় ধরনের হুমকি তৈরি করতে পারেনি।

কিন্তু নব্বইয়ের দশক থেকে নিত্যনতুন বিদেশি ব্র্যান্ডের গাড়ি ভারতের বাজারে ঢুকতে শুরু করলে শুরু হয় অ্যাম্বাসেডরের পিছু হটার দিন।

প্রতিযোগিতায় টিকতে গাড়ির চেহারায় সামান্যে পরিবর্তনও এনেছিল হিন্দুস্তান মোটরস; কিন্তু ক্রেতাদের মন গলেনি। তরুণ ক্রেতাদের নতুন পছন্দ আর আধুনিক গাড়ির দাপটে অ্যাম্বাসেডরের চাহিদা কমতে কমতে তলানিতে ঠেকে।

আশির দশকের মাঝামাঝি সময়েও ‌অ্যাম্বাসেডরের বিক্রি ছিল বছরে ২৪ হাজারের মতো। ২০১৪ সালে তা মাত্র আড়াই হাজারে নেমে আসে। ওই বছর ২৪ মে বন্ধ হয়ে যায় অ্যাম্বাসেডর উৎপাদন।

নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝি সময়ে ভারতের বাজারে ব্যবসা শুরু করা পুজো অনেক দিন ধরেই সেখানে শক্ত ভিত গড়ার চেষ্টায় আছে।