গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা ‘নরম’ হতে বলেছিলেন: মন্ত্রী

সিগারেটের প্যাকেটের গায়ে ছবিযুক্ত সতর্কবাণী দেওয়া বাধ্যতামূলক না করতে বিভিন্ন মহলের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা চাপ সৃষ্টি করেছিল বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 Sept 2016, 02:01 PM
Updated : 29 Sept 2016, 02:01 PM

বৃহস্পতিবার ঢাকায় এক গোলটেবিল বৈঠকে তিনি বলেন, ‘সব অনুরোধের পরও’ সিগারেটের প্যাকেটের গায়ে ক্ষতিকর ছবি দেওয়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

“গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা আমাকে অনুরোধ করেছে যে, ‘নাসিম ভাই, আপনি একটু নরম হন। তাহলে আমরা একটু কাজ করতে পারি।’ আমি বলেছি না আমি নরম হব না। আমাকে এটা করতেই হবে। শেষে আমি এটা করেছি।”

দৈনিক সমকাল ও বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাক যৌথভাবে ব্র্যাক ইন সেন্টারে ‘যক্ষ্মা এবং তামাক সেবন: দ্বৈত সমস্যা ও তার প্রতিকার’ শীর্ষক এই আলোচনার আয়োজন করে।

বিশ্বের অন্তত ৮০টি দেশে তামাকজাত দ্রব্য ও সিগারেটের প্যাকেটে ধূমপানের ফলে মানবদেহের কী কী ক্ষতি হতে পারে, সে সম্বলিত ছবি দেওয়া সতর্কবাণী মুদ্রণের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। সরকারের নির্দেশনা অনুসারে বাংলাদেশেও গত মার্চ থেকে এ ব‌্যবস্থা চালু হয়েছে।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, তামাক ও ধূমপান নিয়ন্ত্রণে আইন প্রয়োগের পাশাপাশি পারিবারিক সচেতনতাও গুরুত্বপূর্ণ।

তামাক চাষ বন্ধের আগে তামাকচাষীদের জন্য বিকল্প উপায় বের করার ওপর গুরুত্ব দেন তিনি।

“তামাক চাষ বন্ধ করতে পারি, তবে তাদের জন্য একটা বিকল্প ব্যবস্থা করতে হবে আমাদের। বিকল্প ব্যবস্থা করার পরই আমরা এটা বন্ধ করতে পারব। এটা যে লাভজনক, তা আমাদের মনে রাখতে হবে।”

এরপর তামাক নিয়ন্ত্রণ নিয়ে কোনো অনুষ্ঠান করার সময় তাতে আইনমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে আমন্ত্রণ জানাতে আয়োজকদের পরামর্শ দেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী।

“আমিও থাকব। সবাই মিলে কথা বলব। কারণ ধূমপান নিয়ন্ত্রণে অনেকগুলো কাজ আছে, যেগুলো আমার পক্ষে করা সম্ভব না।”

গোল টেবিল আলোচনায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির সমন্বয়ক ডা. মজিবুর রহমান।

তিনি বলেন, দেশের ২৩ শতাংশ মানুষ সরাসরি ধূমপানের সঙ্গে তামাক সেবন করে। এর মধ্যে ৪৪ দশমিক ৭ শতাংশ পুরুষ, ১ দশমিক ৫ শতাংশ নারী।

আর ২৬ দশমিক ৪ শতাংশ পুরুষ এবং ২৭ দশমিক ৯ শতাংশ নারী কোনো না কোনোভাবে তামাক ব্যবহার করেন।

অনুষ্ঠানে বক্তারা তামাকের ব্যবহার কমাতে জনসচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি তামাকজাত দ্রব‌্যের বিজ্ঞাপন প্রচার বন্ধ, উচ্চহারে কর আরোপ, তামাক উৎপাদন ও সরবারহ কমানো, কৃষককে তামাকের পরিবর্তে খাদ্যপণ্য উৎপাদনে সহযোগিতা করা, তামাকপণ্যে কর মওকুফ না করা, তামাকের বিক্রয় কেন্দ্র কমানো এবং জনসাধারণের চলাচলের স্থানগুলো শতভাগ ধূমপানমুক্ত করার সুপারিশ তুলে ধরেন।

ব্রাকের টিবি, ম্যালেরিয়া ও ওয়াশ কর্মসূচির পরিচালক মো. আকরামুল ইসলাম বলেন, দেশে প্রতিবছর যক্ষ্মা রোগীর সংখ্যা যে হারে কমা উচিত, দারিদ্র্য, পুষ্টিহীনতা, ঘনবসতি ও ধূমপানের কারণে ততোটা কমছে না।

তার মতে, পুষ্টিহীনতা ও দারিদ্র্য কিছুটা কমে এলেও ঘনবসতি ও ধূমপান বড় সমস্যা হিসেবে রয়ে গেছে