মোবাইলে অর্থ লেনদেন: বাজারে প্রতিদ্বন্দ্বিতা চান প্রতিমন্ত্রী

প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য আর্থিক সেবা সহজলভ্য করতে সব মোবাইল অপারেটরকে ডিজিটাল আর্থিক সেবা খাতে সুযোগ দেওয়া উচিত বলে মনে করেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 August 2016, 01:58 PM
Updated : 30 August 2016, 02:43 PM

টেলিযোগাযোগ প্রতিবেদকদের সংগঠন টেলিকম রিপোর্টার্স নেটওয়ার্ক অব বাংলাদেশের (টিআরএনবি) আয়োজনে মঙ্গলবার ‘বাংলাদেশে আর্থিক অন্তর্ভুক্তি: সুযোগ, বিপত্তি ও ডিএফএস-এ ভবিষ্যৎ করণীয়’ শিরোনামের এক সেমিনারে তিনি একথা বলেন।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, “প্রান্তিক জনগোষ্ঠী, হার্ড টু রিচ এলাকায় যে জনগণ তাদেরকে ব্যাংকিং সেবায় অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। তার জন্য আমি মনে করি, বিকাশের পাশাপাশি যে মোবাইল সার্ভিস ব্যবহার করছি তারাও যেন যুক্ত হতে পারে।”

এ উদ্যোগে টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি ও বাংলাদেশ ব্যাংককে একসঙ্গে কাজ করতে হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

বিটিআরসি ও বাংলাদেশ ব্যাংক এ বিষয়ে একটি সমঝোতা স্মারক সই করে অগ্রহী ভূমিকা পালন করতে পারে বলেও মনে করেন তারানা হালিম।

মোবাইলে অর্থ লেনদেন (এমএফএস) ব্যবস্থায় অংশীদারিত্বের প্রয়োজন রয়েছে মন্তব্য করে তারানা হালিম বলেন, “পার্টনারশিপখুব সুদৃঢ়ভাবে কাজে লাগানো প্রয়োজন। তার সঙ্গে সঙ্গে আমি এটাও বলি, এখানে সরকার সৃষ্ট কোনো মনোপলি নেই। এখানে যোগ্যতার মাধ্যমে বিকাশ তার মনোপলি সৃষ্টি করেছে।

“আমরা যেটা করতে পারি, সেটি হচ্ছে মার্কের্টিং আর একটু প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক করতে পারি এবং প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক করতে হলে আমাদের পার্টনারশিপের ইকোসিস্টেমকে জোরদার করতে হবে।”

অনুষ্ঠানে এমএফএস সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান বিকাশের প্রশংসা করে তারানা হালিম বলেন, “এটা সত্য, ‘বিকাশ’ একটা বিপ্লব ঘটিয়েছে। সেটাকে কৃতিত্ব দিতে হবে এবং কৃতিত্বটা আমরা দিতে চাই।”

বর্তমানে এমএফএস সেবার ৯১ শতাংশ বিকাশের দখলে।

এই খাতে প্রতিযোগিতা থাকা উচিৎ মন্তব্য করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, “এখানে আমরা প্রতিযোগিতা দেখতে চাই, এটা ভবিষৎ। আমরা চাই একটা লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডে সবাই সর্ব শক্তি নিয়ে এসে একটা প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হোক।

“আমি নিরপেক্ষ জায়গা থেকে কথাগুলো বলছি। আমি সুস্থ প্রতিযোগিতায় বিশ্বাস করি এবং সেই প্রতিযোগিতাটা সুস্থ হতে হবে।”

টিআরএনবি সভাপতি রাশেদ মেহেদীর সভাপতিত্বে সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক শামীম আহমেদ।

বাংলাদেশের অর্থনীতিতে মোবাইলে আর্থিক সেবা কিংবা ডিজিটাল আর্থিক পরিষেবার ক্রমবর্ধমান গুরুত্ব এবং বিশ্বের অর্থনৈতিক পটভূমিতে ফিন-টেকের (ফিনান্সিয়াল টেকনোলজি) উত্থানের পরিপ্রেক্ষিতে সেমিনারটি আয়োজন করা হয়।

পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক শাহ আলম (ইকোনমিক ক্রাইম) এ খাতে বিভিন্ন ধরনের অপরাধ নিয়ে আলোচনা করেন।

এ খাতটি সুরক্ষায় আরও সচেতনতার প্রয়োজনীয়তার কথা বলেন তিনি।

অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ব্যাংকের পেমেন্ট সার্ভিস বিভাগের ডেপুটি ডিরেক্টর প্রজ্ঞা পারমিতা সাহা বলেন, “এ খাতে নতুন নীতিমালা নিয়ে কাজ করা হচ্ছে। মার্কেট বৃদ্ধির সাথে সাথে সম্ভাবনা কীভাবে কাজে লাগানো যায় সেভাবে এগিয়ে যাওয়া হচ্ছে।”

বর্তমানে এমএফএস গাইডলাইন ২০১১ এবং বাংলাদেশ পেমেন্ট সেটেলমেন্ট সিস্টেম রেগুলেশন ২০১৪ এর আওতায় এ খাত পরিচালিত হচ্ছে। ২০১৫ সালে একটি  গাইডলাইনের খসড়া করা হয়েছে, যাতে এই সেবায় ৭ জন অংশীদার থাকার কথা বলা হয়েছে।

বিটিআরসির সিস্টেমস অ্যান্ড সার্ভিসেস বিভাগের পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্ণেল জুলফিকার আলী বলেন, “এ খাতে পার্টনারশিপটা ওপেন করা উচিৎ। এখানে মার্কেট নির্ধারণ করবে কে ব্যবসা করবে, তখন মনোপলির কথাটা আসবে না।”

‘বিকাশ’র উপদেষ্টা দাশ গুপ্ত অসীম কুমার বলেন, “বিকাশ বর্তমানে যে অবস্থানে রয়েছে তা তাদের নিজেদের যোগ্যতায় অর্জন করেছে। এ সার্ভিসটাকে আরও কীভাবে আধুনিক করা যায় সে বিষয়ে কাজ হচ্ছে।”

গ্রামীণফোনের সিনিয়র স্পেশালিস্ট (ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস) রাশিদা সুলতানা বলেন, “ডিএফএসএর মাধ্যমে ব্যাংকিং সেবার বাইরে থাকা জনসংখ্যার জন্য ঋণ দান, সঞ্চয়পত্র, মার্চেন্ট পেমেন্ট এমনকি বীমা সুবিধাও দেওয়া সম্ভব। ব্যাংকিং সেবার বাইরে থাকা জনসংখ্যার জন্য বাংলাদেশে এ ধরনের সেবা সম্প্রসারণের প্রয়োজন রয়েছে।”  

অপারেটর রবির ডিজিটাল সার্ভিসের প্রধান মানজুর রহমান বলেন, “ভবিষ্যতে মার্কেটের অবস্থা কী হবে সে চিন্তা করেই নীতিমালা করা উচিৎ। এ খাতে নতুন নতুন উদ্ভাবনী থাকতে হবে।”

অনুষ্ঠানে অর্থনীতিবিদ মামুনুর রশীদ, গ্রামীণফোনের চিফ কর্পোরেট অ্যাফেয়ার্স অফিসার মাহমুদ হোসেন, ডিবিবিএল এমএফএস প্রধান আবুল কাশেম শিরিন, মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সল্যুশন সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান মাহিন্দ্রা কমভিবার কান্ট্রি ম্যানেজার রিয়াদ হাসনাইনসহ ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, মোবাইল অপারেটর প্রতিনিধিরা বক্তব্য রাখেন।