রোববার ঢাকায় জাতীয় রপ্তানি ট্রফি বিতরণ অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনা বলেন, “সীমিত পণ্যের ওপর দেশের রপ্তানি নির্ভরতা দেশের রপ্তানি বাণিজ্যের অন্যতম দুর্বলতা।
“রপ্তানি বাণিজ্যের এ সমস্যা দূর করার জন্য পণ্য তালিকায় নতুন নতুন পণ্যের সংযোজন এবং কম অবদান রাখছে- এমন পণ্যের রপ্তানি বৃদ্ধির প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।”
এজন্য ব্যবসায়ীদেরও উদ্যোগী হতে বলেন সরকারপ্রধান।
“আপনারা নতুন নতুন বাজার খুঁজে বেড়ান। কোন দেশে কী বাজার আছে। রপ্তানি পণ্যের বহুমুখীকরণ করতে হবে।”
ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে ২০১১-২০১২ এবং ২০১২-২০১৩ অর্থবছরের ‘জাতীয় রপ্তানি ট্রফি’ বিতরণ অনুষ্ঠানে অধিক মূল্য সংযোজিত পণ্য উৎপাদনে ও দেশজ কাঁচামাল নির্ভর রপ্তানি পণ্য উৎপাদনে ব্যবসায়ীদের মনোনিবেশ করার অনুরোধও জানান প্রধানমন্ত্রী।
রপ্তানি উন্নয়নে সম্ভাব্য সব খাতে ২০৪১ সালকে লক্ষ্য ধরে রোপম্যাপ প্রণয়ন করা হচ্ছে বলেও তিনি তার বক্তব্যে উল্লেখ করেন।
২০১১-১২ ও ২০১২-১৩ অর্থবছরে সর্বোচ্চ পণ্য রপ্তানি আয় করার স্বীকৃতি হিসাবে ১১৩টি প্রতিষ্ঠান ‘জাতীয় রপ্তানি ট্রফি’ পেয়েছে।
অনুষ্ঠানে প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতিনিধিদের হাতে জাতীয় রপ্তানি ট্রফি তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী।
২০১২-১৩ অর্থবছরের জন্য ২৬টি প্রতিষ্ঠান স্বর্ণ, ১৯টি প্রতিষ্ঠান রৌপ্য ও ১৫টি প্রতিষ্ঠান ব্রোঞ্জ ট্রফি পেয়েছে।
হা-মীম গ্রুপের রিফাত গার্মেন্ট, স্কয়ার ফ্যাশনস, স্কয়ার টেক্সটাইলস, নোমান উইভিং, জাবের অ্যান্ড জোবায়ের ফেব্রিকস, অ্যাপেক্স ফুডস, পপুলার জুট এক্সচেঞ্জ, আকিজ জুট, অ্যাপেক্স ট্যানারি, পিকার্ড বাংলাদেশ, এফবি ফুটওয়্যার, এগ্রি কনসার্ন, প্রাণ এক্সপোর্টস, রাজধানী এন্টারপ্রাইজ, কারুপণ্য রংপুর, বেঙ্গল প্লাস্টিক, ফার সিরামিকস, ইউনিগ্লোরি সাইকেল, তানভীর পলিমার, বেক্সিমকো ফার্মা, সার্ভিস ইঞ্জিন, ইউনিভার্সেল জিনস, শাশা ডেনিমস এবং মন ট্রিমস ২০১১-১২ অর্থবছরের স্বর্ণপদক পেয়েছে।
রৌপ্যপদক পেয়েছে অনন্ত অ্যাপারেলস, জিএমএস কম্পোজিট, মোশারফ কম্পোজিট, এনভয় টেক্সটাইল, সীমার্ক (বিডি), এফআর জুট, জনতা জুট, এসএফ ইন্ডাস্ট্রিজ, আরএমএম লেদার, ফার্ম ফ্রেশ, প্রাণ এগ্রো, ক্যাপিটাল এন্টারপ্রাইজ, কোর দ্য জুট ওয়ার্কস, এভারব্রাইট প্লাস্টিক, ট্রান্সওয়ার্ল্ড বাইসাইকেল, আল-হাবিব এন্টারপ্রাইজ, গ্রাফিক পিপল এবং জিনস-২০০০।
২০১২-১৩ অর্থবছরে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ পণ্য রপ্তানি করে স্বর্ণপদক পেয়েছে রিফাত গার্মেন্টস, জিএমএস কম্পোজিট, কামাল ইয়ার্ন, সাদ সান টেক্সটাইল, জাবের অ্যান্ড জোবায়ের, নোমান টেরিটাওয়েল, অ্যাপেক্স ফুডস, পপুলার জুট, আকিজ জুট, অ্যাপেক্স ট্যানারি, পিকার্ড বাংলাদেশ, এফবি ফুটওয়্যার, আল আজমী ট্রেড, প্রাণ ডেইরি, রাজধানী ইন্টারপ্রাইজ, কারুপণ্য রংপুর, বেঙ্গল প্লাস্টিক, ফার সিরামিকস, বিআরবি কেব্ল, মেরিন সেইফটি সিস্টেম, স্কয়ার ফার্মা, গ্রাফিক্স পিপল, ইউনিভার্সেল জিনস, শাশা ডেনিমস, মন ট্রিমসে এবং মীর টেলিকম।
অনন্ত অ্যাপারেলস, স্কয়ার ফ্যাশনস, বাদশা টেক্সটাইল, এনভয় টেক্সটাইল, ইউনিলারেন্স টেক্সটাইল, সীমার্ক (বিডি), রেজা জুট, জনতা জুট, এসএফ ইন্ডাস্ট্রিজ, আরএমএম লেদার, লালমাই ফুটওয়্যার, মনসুর জেনারেল, প্রাণ এগ্রো, ক্যাপিটাল এন্টারপ্রাইজ, কোর দ্য জুট ওয়ার্কস, বেঙ্গল প্লাস্টিক, সার্ভিস ইঞ্জিন, প্যাসিফিক জিনস এবং জাবের অ্যান্ড জোবায়ের ২০১২-১৩ অর্থবছরের জন্য রৌপ্যপদক পেয়েছে।
ব্রোঞ্জ পদক পেয়েছে অ্যাপারেল গ্যালারি, ইন্টারস্টফ অ্যাপারেলস, মোশারফ কম্পোজিট, তালহা ফেব্রিকস, জালালাবাদ ফ্রোজেন ফুডস, উত্তরা জুট, সাদাত জুট, বেঙ্গল লেদার, এবিসি ফুটওয়্যার, ফুটবেড ফুটওয়্যার, এলিন ফুডস, প্রাণ ফুডস, হেলাল অ্যান্ড ব্রাদার্স, আরএফএল প্লাস্টিক এবং ইউনিনেগ্নারি পেপারস অ্যান্ড প্যাকেজিং।
এ সময়ে রপ্তানি আয়ের গড় প্রবৃদ্ধি প্রায় ১২ দশমিক ৫২ থাকার কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, পরিমাণগত দিক বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে বাংলাদেশ ৬.৯১ বিলিয়ন ইউনিট রপ্তানি করেছে, যা পূর্ববর্তী বছরে ছিল ২.৪৪ বিলিয়ন ইউনিট।
অর্থনৈতিক সাফল্যের পেছনে শিল্প-উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীদের কঠোর পরিশ্রম এবং উদ্ভাবনশক্তির পাশাপাশি সরকারের ব্যবসাবান্ধব উদারনীতিমালার সহায়ক হিসেবে কাজ করার কথাও বলেন প্রধানমন্ত্রী।
রপ্তানি বাণিজ্যের সহায়তায় গত সাত বছরে প্রায় ২১ হাজার কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে। ২০০৫-০৬ অর্থবছরে নগদ সহায়তার পরিমাণ ছিল ৬০২ কোটি টাকা। গত ২০১৪-১৫ অর্থবছরে চার হাজার কোটি টাকা নগদ সহায়তা দেওয়া হয়।
২০২১ সালে দেশের রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা ৬০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার নির্ধারণ করা হয়েছে। শুধু তৈরি পোশাক খাতেই ৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে।
বাণিজ্য সম্প্রসারণ ও রপ্তানি পণ্য প্রদর্শনীর জন্য চীনের সহায়তায় মুন্সিগঞ্জ জেলার বাউশিয়াতে প্রায় ৫৩১ একর জমির ওপর বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী প্রদর্শনী কেন্দ্র নামে একটি অত্যাধুনিক গার্মেন্টস শিল্প পার্ক নির্মাণ প্রক্রিয়াধীন থাকার কথাও বলেন শেখ হাসিনা।
এই গার্মেন্টস শিল্প পার্কের জন্য দেশের ব্যবসায়ীদের ‘আগ্রহ না থাকার’ কথা মনে করিয়ে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “এটা দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে। আপনারা ঢিলেমি করছেন। আশা করি, আগামীতে আপনারা উদ্যোগী হবেন।”
৭৯৬ কোটি টাকা ব্যয়ে এই কেন্দ্রের নির্মাণ কাজ ২০১৯ সালের জুন মাসের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা।
ডব্লিউটিও ট্রিপস চুক্তির মেয়াদ ২০৩২ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “এতে ঔষধ রপ্তানি বহুগুণ বৃদ্ধি পাবে।”
শ্রমঘন শিল্প প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হলে কেউ আর জঙ্গিবাদের দিকে ঝুঁকবে না।
বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি তাজুল ইসলাম, বাণিজ্য সচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন, এফবিসিসিআই সভাপতি আবদুল মাতলুব আহমেদ এবং রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর ভাইস চেয়ারম্যান মাফরুহা সুলতানা।