ঈদের কেনাকাটা: ‘মন বেজার’ ফুটপাতের দোকানিদের

এবারের ঈদের বাজারে নানা পণ্যের ভিড়ে নজর কেড়েছে ‘বাহুবলী’ নামে মেয়েদের পোশাক। তার সঙ্গে গতবারের আলোচিত ‘কিরণমালা’ তো আছেই।

সুলাইমান নিলয় জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 June 2016, 04:20 PM
Updated : 25 June 2016, 04:20 PM

শনিবার স্বল্পআয়ের মানুষের ‘ভরসার জায়গা’ গুলিস্তানের ফুটপাতের দোকান ঘুরে এমন চিত্রই পাওয়া গেছে। তবে এখনও জমেনি এবাজার।  

ভারতীয় ধারাবাহিক নাটকের নামানুসারে গতবছর বাংলাদেশের ঈদ বাজারে এসেছিল ‘কিরণমালা’। আর এবার ভারতীয় সিনেমার নামে এসেছে ‘বাহুবলী’।

এক থেকে দুই হাজার টাকায় এসব পোশাক বিক্রি করতে দেখা যায় হকার শাহ আলমকে। ক্রেতাদের স্বল্প দামে ‘দামী’ পোশাক দিতে মাল উঠিয়ে এখন ‘বেতন আর ছুটির ফাঁদে’ লোকসানের আশঙ্কা করছেন এই বিক্রেতা।

তিনি বলেন, “আজ (শনিবার) ২৫ তারিখ। মানুষের হাতে টাকা নাই। যখন মানুষ বেতন পাবে, তখন তাদের গ্রামে যাওয়ার সময় হয়ে যাবে। এবারতো আবার লম্বা ছুটি। তাই গ্রামে বেশি কেনাবেচা হবে। ঢাকায় হয়তো আমাদের লোকসান দিতে হবে।”

অধিকাংশ দোকানেই ক্রেতাদের দেখা গেছে পোশাক পছন্দে ব্যস্ত। তবে দামে বনিবনা না হওয়ায় বেশিরভাগই ‘এ দোকান থেকে ও দোকানে’ ছুটছেন সাধ্যের মধ্যে পছন্দের পোশাকটি কেনার আশায়।

শাহ আলম যে মিথ্যা বলেননি তার প্রমাণও মিলল হাতে হাতে। দাম যাচাইয়ে এক দোকান থেকে অন্য দোকানে ছুটছেন ক্রেতারা।

ফুটপাতে ঈদের কেনাকাটা করতে আসা দিনমজুর আরিফ হোসেন বলেন, “সবার জন্য মার্কেট করতে আসছি। কিন্তু দাম বেশি চায়, তাই কিনতে পারতেছি না।”

৫ থেকে ১২ বছর বয়সী ছেলেদের প্যান্ট বিক্রি করছেন কেরানীগঞ্জের মো. মহসিন খান।

তিনি জানান, শুক্রবার থেকে ঈদ বাজারের উত্তাপ কিছুটা আঁচ করতে পারছেন তিনি। এর আগে একেবারেই কেনাবেচা ছিল না। শুরু যখন হয়েছে, তাতে সামনের দিনগুলোতে ভাল কেনাবেচার প্রত্যাশা তার।

জিন্সের এসব প্যান্টের দাম সাইজ ও মানভেদে দেড়শ থেকে পাঁচশ টাকা বলে জানান মহসিন।

আজিজুল হাওলাদার এবার ছোট থেকে ১৮ বছর বয়স পর্যন্ত ছেলেদের শার্ট বিক্রি করছেন। ষাটের কোটায় পা দেওয়া আজিজুল প্রায় ৪৫ বছর ধরে গুলিস্তানে হকারি করছেন বলে জানান।

আশপাশের লোকজন তাকে ডাকেন মামা বলে। দুইশ থেকে আড়াইশ টাকা দর তার প্রতিটি শার্টের।

কেনাবেচা কেমন জানতে চাইলে তিনি বলেন, কেনাবেচা টুকটাক হচ্ছে। এখনো বাজার জমেছে তা বলা যাচ্ছে না।

মেয়েদের থ্রিপিস সাজিয়ে বসা শাহাদাৎ হোসেন বলেন, “জামার পিস সাধারণ ১৫ রোজার মধ্যে বিক্রি শেষ হয়ে যায়। সেই হিসাবে আমাদের মৌসুমতো শেষ। কিন্তু আশা অনুযায়ী বিক্রি হয়নি। মানুষ আস্তে আস্তে এখনো আসতেছে।”

কেনাবেচা কম থাকায় পাঞ্জাবি বিক্রেতা আবদুস সালাম কিছুটা হতাশ হলেও এর চেয়েও বেশি বিরক্ত ‘পুলিশের বৈরী আচরণে’। বিষয়টি খুলে না বললেও বোঝার বাকি থাকে না।

তিনশ থেকে পাঁচশ টাকায় বিভিন্ন বয়সী মানুষের পাঞ্জাবি বিক্রি করছেন সালাম।

তিনি বলেন, “কি কমু, কওনও যায় না। সওনও যায় না। কেনাবেচা নাই। এরমধ্যেও চলতে হচ্ছে।”

একই এলাকায় জিতু মিয়া বিক্রি করেন বিভিন্ন সাইজের জুতা। তিনশ থেকে সাতশ টাকা দামের জুতা রয়েছে বলে জানান তিনি।

সাধারণত শেষের দিকে মানুষ জুতা কেনে জানিয়ে তিনি বলেন, ধীরে ধীরে মানুষ আসছে। তবে গতবারের চেয়ে বাজার এখনো খারাপ বলেই মনে হচ্ছে তার।

দুইশ থেকে আড়াইশ টাকায় পাজামা বিক্রি করতে দেখা যায় মো. নুরুল ইসলামকে। কেনাবেচা কেমন জানতে চাইলে ‘মুখ ভার’ করে মাথা নাড়েন।

মেয়েদের পোশাক বিক্রেতা আনোয়ার হোসেন বলেন, “আমরা এখানে স্বল্প দামে জিনিস বিক্রি করি। গরিব মানুষ তাদের অল্প সামর্থে সখ করে কিনতে আসে। তাই দরদাম যথাসম্ভব এড়িয়ে আমি কেনাবেচা করতে চাই।”

দেড়শ থেকে তিনশ টাকায় বিভিন্ন বয়সী মেয়েদের জন্য জামা ও প্যান্ট বিক্রি করছেন বলে জানান আনোয়ার।

আনোয়ার বলেন, “এত অল্প দামে ছাড়ছি, এরপরও মানুষ কেন কিনছে না- বুঝতে পারছি না।”

ফুটপাতের এই সারিতে ৩০০ থেকে ৫০০ টাকায় শাড়ি মিলছে বিভিন্ন দোকানে। তাদেরই একজন শাড়ি বিক্রেতা।

আব্দুল মজিদ বলেন, “শাড়ি ছাড়াতো মহিলাদের ঈদ হবে না।  মানুষ আসছেন। তবে যেভাবে আশা ছিল, সেই রকম বিক্রি হচ্ছে না। এখনো এক সপ্তাহ সময় আছে। দেখা যাক কী হয়।”