করপোরেট কর: পোশাক খাতের দাবি ‘ভেবে দেখবেন’ মুহিত

তৈরি পোশাক শিল্পের করপোরেট কর হার কমিয়ে ১০ শতাংশ করার দাবি ‘ভেবে দেখার’ কথা জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 31 Jan 2016, 11:11 AM
Updated : 31 Jan 2016, 11:11 AM

বস্ত্র খাতের তিন সংগঠন বিজিএমইএ, বিকেএমইএ ও বিটিএমএর প্রতিনিধিরা রোববার অর্থমন্ত্রীর কার্যালয়ে গিয়ে তার কাছে ওই দাবির বিষয়টি তুলে ধরেন। 

শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, অর্থসচিব মাহবুব আহমেদ, বাণিজ্য সচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন, এনবিআর চেয়ারম্যান নজিবুর রহমান, শিল্পসচিব মোশাররফ হোসেন ভূইয়াও এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

২০১৪-১৫ অর্থবছর থেকে তৈরি পোশাক শিল্পে ৩৫ শতাংশ হারে করপোরেট কর আদায় করা হচ্ছে, যা চলতি ২০১৫-১৬ অর্থবছরও বহাল রয়েছে।

এর আগে ২০০৫ থেকে ২০১৪ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত সরকার ‘বিশেষ বিবেচনায়’ এই কর হার ১০ শতাংশে রেখেছিল।

শিল্পের ‘সক্ষমতা’ বেড়েছে বিবেচনা করে এরপর অন্যান্য খাতের মতো তৈরি পোশাক শিল্পও ৩৫ শতাংশ করপোরেট করের আওতায় আসে।

বিজিএমইএ সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, “৩৫ শতাংশ হারে কর দিতে হলে উদ্যোক্তাদের হাতে পুনঃবিনিয়োগ করার মত পর্যাপ্ত অর্থ থাকবে না। রপ্তানির যে বিশাল লক্ষ্য সরকার নির্ধারণ করেছে তা অর্জন সম্ভব হবে না।”

চলতি অর্থবছরের জন্য ৩ হাজার ৩৫০ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছে সরকার, প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ৭ দশমিক ৩৮ শতাংশ।

গত অর্থবছরের করও কমিয়ে দেওয়ার দাবি জানিয়ে সিদ্দিকুর রহমান বলেন, “সুতা, ডাইং, ফিনিশিং ও পাট শিল্পের হ্রাসকৃত কর (১০ শতাংশ) হারের মেয়াদ রয়েছে ২০১৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত। সেই বিবেচনায় তৈরি পোশাক শিল্পও এ সুবিধা পায়।”

চলতি অর্থবছরের বাজেট সংশোধনীতে এ বিষয়গুলো যুক্ত করার দাবি জানান বিজিএমইএ সভাপতি।

ব্যবসায়ী নেতাদের বক্তব্য শুনে অর্থমন্ত্রী বলেন, “২০১৪-১৫ অর্থবছরে যে কর নেওয়া হয়েছে সে বিষয়ে আর কিছু করা যাবে না। তবে চলতি অর্থবছরে কী করা যায় সেটা ভেবে দেখা যেতে পারে।”

কর কমানোর সিদ্ধান্ত নিলে তার প্রভাব কেমন হতে পারে- তা এনবিআর চেয়ারম্যান ও অর্থসচিবের কাছে জানতে চান অর্থমন্ত্রী।

তবে রাজস্ব আদায়ের দায়িত্বে থাকা প্রতিষ্ঠান এনবিআরের প্রধান নজিবুর রহমান এ বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো মন্তব্য করেননি।

ব্যবসায়ীদের এ দাবি মেনে নেওয়া হলে রাজস্ব আদায়ে তার কী প্রভাব পড়তে পারে বা রাজস্ব আদায় কতো টাকা কমতে পারে সে হিসাব কোনো পক্ষই আর দেয়নি।

অর্থমন্ত্রী ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক শেষ হলে এনবিআর চেয়ারম্যান, অর্থ ও বাণিজ্য সচিবের সঙ্গে আলাদা বৈঠক করেন।

বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ ব্যবসায়ীদের বিভিন্ন সমস্যার কথা তুলে ধরে তাদের দাবি পূরণের জন্য অর্থমন্ত্রীকে সুপারিশ করেন।

তিনি বলেন, “পোশাক রপ্তানিকারকরা অনেক সমস্যায় আছেন। অ্যাকর্ড, অ্যালায়েন্স আছে, কমপ্লায়েন্সের কারণে তাদের খরচ করতে হচ্ছে। এ সময় ব্যবসায়ীদের পাশে সরকারকে থাকতে হবে।”

বিকেএমইএ সভাপতি সেলিম ওসমান বলেন, “আমরা এক একটি কার্যাদেশ পাই যেখানে একধিক এলসিতে পণ্য সরবরাহের ব্যবস্থা থাকে। একটি ওয়ার্ক অর্ডারে অনেক সময় ৬/৭ মাস ধরে ৪/৫টি এলসিতে পণ্য সরবরাহ করা হয়। কিন্তু ওইসব রপ্তানির বিপরীতে নগদ সহায়তা নিতে আমাদের প্রত্যেকটি এলসি খোলার ১৮০ দিনের মধ্যে আবেদন করতে হয়।

“একটি ওয়ার্ক অর্ডারে যতগুলো এলসিই খোলা হোক, সব পণ্য রপ্তানি শেষে আমাদের ১৮০ দিন সময় দেওয়া হোক।”

নগদ সহায়তা নেওয়ার পরে নিরীক্ষার নামে ‘হয়রানি’ করা হয় অভিযোগ করে বিকেএমইএ সভাপতি বলেন, “এই অডিট বন্ধ করা হোক।”

তার সঙ্গে সহমত জানিয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, “হ্যাঁ, আমিও বিষয়টি জানি। গত চার মাস ধরে ব্যবসায়ীরা আমাকে জ্বালিয়ে মারছে। আমি বাংলাদেশ ব্যাংককে বলছি, কমার্স সেক্রেটারিকে বলছি, ফাইন্যান্স সেক্রেটারিকে বলছি। আমারতো এ বিষয়ে বলা ছাড়া কিছু করার নেই। এজন্য আজ আপনাকে (অর্থমন্ত্রীকে) বলছি। এর সমাধান করতে হবে।”