বাড়ছে লবণের দাম

গত চার/পাঁচ বছরে নিত্যপ্রয়োজনীয় যে দ্রব্যের দামে হেরফের হয়নি এবার সেই লবণে খরচ বাড়ছে ক্রেতাদের।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 Jan 2016, 03:12 PM
Updated : 29 Jan 2016, 03:12 PM

এক সপ্তাহের মধ্যে রাজধানীর বাজারগুলোতে কেজি প্রতি লবণের দাম ২ থেকে ৭ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।

শুক্রবার রাজধানীর বাজারগুলোতে খোলা লবণ প্রতি কেজি ২০ থেকে ২২ টাকা এবং প্যাকেটজাত লবণ কোম্পানি ভেদে ২৫ থেকে ৩২ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে।

গত সপ্তাহ খোলা লবণ ১৮ থেকে ২০ টাকা এবং প্যাকেটের লবণ ২০ থেকে ২৮ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয় বলে ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন।

সরকারের বাণিজ্যিক সংস্থা টিসিবির তথ্য অনুযায়ী, এক মাসের ব্যবধানে লবণের দাম ২৫ শতাংশ বেড়েছে।

হঠাৎ লবণের দাম বাড়ার জন্য সরবরাহে ঘাটতি এবং আমদানির ওপর বাধার কথা বলছেন ব্যবসায়ীরা। আমদানির বিষয়ে সরকার নমনীয় না হলে দাম আরও বাড়তে পারে বলেও সতর্ক করেছেন তারা।

বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুঠির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) হিসাবে দেশে বছরে ১৬ লাখ ৫০ হাজার টন লবণের চাহিদা রয়েছে। গতবছর দেশে উৎপাদন হয়েছে ১২ লাখ টন।

চাহিদার তুলনায় উৎপাদন কম হওয়ায় গত বছরের অক্টোবরে এক বৈঠকে সাড়ে ৩ লাখ টন লবণ আমদানির সিদ্ধান্ত নেয় জাতীয় লবণ কমিটি।

তার বিপরীতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এক লাখ টন লবণ আমদানির অনুমোদন দেয় বলে  বাংলাদেশ লবণ মিল মালিক সমিতির সাবেক সভাপতি পরিতোষ কান্তি সাহা জানান।

পূবালী সল্টের মালিক পরিতোষ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সরকারের ভুল নীতির কারণে লবণের দাম বাড়ছে। সরকার লবণ আমদানির ওপর নিয়ন্ত্রণ তুলে না নিলে এই পণ্যটির দাম আরও বেড়ে যেতে পারে।”

তিনি বলেন, “আমরা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে বারবার চিঠি দিয়েছি, তারা কর্ণপাত করে না। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বলছে- সামনে মৌসুম আছে, তখন সরবরাহ ঠিক হয়ে যাবে। ৩০ টাকা লবণ চলছে, বৃষ্টি হলে এটা আরও বেড়ে ৩৫ টাকা হয়ে যেতে পারে।”

লবণ আমদানি নিয়ন্ত্রণে চাষী, মিল মালিক বা সাধারণ মানুষ- এদের কেউই লাভবান হচ্ছে না মন্তব্য করে তিনি বলেন, “ঊপকুলীয় এলাকার রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও প্রভাবশালীরাই এর ফল ভোগ করছে।”

গত চার/পাঁচ বছর ধরে লবণের দাম স্থিতিশীল জানিয়ে এসিআই সল্টের পরিচালক (বিজনেস) কামরুল হাসান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “গত মাসেও লবণের দাম ছিল প্রতি কেজি ২৫ টাকা। সেটা এখন ৩২ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। তাহলে প্রশ্ন হচ্ছে এখন কেন ৭ টাকা কেজিতে বাড়ল।

“এর কারণ হচ্ছে অপরিশোধিত লবণের সরবরাহে সংকট ছিল। নভেম্বরে বৃষ্টি হওয়ায় ভালো উৎপাদন হয়নি। এজন্য সরবরাহে কিছুটা ঘাটতি হয়। তবে এখন আবার কক্সবাজারে লবণের উৎপাদন হচ্ছে। সরবরাহ কিছুটা বেড়েছে।”

প্রধানত মার্চ থেকে মে মাস লবণ উৎপাদনের মৌসুম। প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে ওই সময়ে লবণের দাম কমে আসবে বলে মনে করেন কামরুল হাসান।

দাম বেড়েছে রসুন ও চিনির

শুক্রবার বাজারে দেশি রসুন ৯০ থেকে ১৪০ টাকা এবং আমদানি করা রসুন ১৫০ থেকে ১৬৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে, যেখানে গত সপ্তাহে দেশি রসুন সর্বোচ্চ ১১০ টাকা এবং আমদানি করা রসুন ১৫০ টাকায় পাওয়া গেছে।

টিসিবির হিসাবে এক মাসের ব্যবধানে দেশি রসুনের দাম ২০ শতাংশ এবং আমদানি করা রসুনের দাম ১৬ শতাংশ বেড়েছে।

দেশি রসুনের মৌসুম শেষ হওয়ায় দাম বেড়েছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

শ্যামবাজার কৃষিপণ্য আড়ৎ বণিক সমিতির যুগ্ম সম্পাদক কামরুজ্জামান পাটোয়ারি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “দেশি রসুনের মৌসুম শেষ। নতুন রসুন  বাজারে আসার সময় হয়েছে। এজন্য দাম বেড়েছে।”

এদিকে চিনির দামও গত সপ্তাহের তুলনায় কেজিতে ২ টাকা বেড়ে শুক্রবার ৫০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে।

গত সপ্তাহেও প্রতি কেজি খোলা চিনি ৪৬ থেকে ৪৮ টাকায় পাওয়া গেলেও শুক্রবার তা বিক্রি হয়েছে ৪৮ থেকে ৫০ টাকা।

ভোজ্যতেলের দাম কিছুটা কমেছে। শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেল ৮৪ থেকে ৮৫ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। গত সপ্তাহে এই তেলের দাম ছিল ৮৪ থেকে ৮৬ টাকা।

সম্প্রতি ভোজ্যতেল ব্যবসায়ীরা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করে সয়াবিনের দাম লিটারে ৫ টাকা কমানোর ঘোষণা দেন।