বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার সম্মেলনে বাংলাদেশের উন্নয়নের গল্প শুনিয়ে এসেছেন বলে জানালেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ।
Published : 21 Dec 2015, 04:15 PM
ডব্লিউটিও’র মন্ত্রী পর্যায়ের দশম সম্মেলনে শেষ করে ফেরার পর সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান তোফায়েল আহমেদ।
এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, “আসলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য দেশের মধ্যে অনেক পার্থক্য। ধরেন, হংকংয়ে মন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলনে ৯৭ শতাংশ ট্যারিফ নির্ধারণ করে ডিউটি ফ্রি দেওয়ার কথা ছিল। পৃথিবীর অনেক দেশ করেছে; আমরা নাম নিলাম না।
“সিঙ্গাপুরে বাজার সুবিধা প্রস্তাব আমরা স্বল্পোন্নত দেশ থেকে করেছিলাম। যারা সেদিন বিরোধিতা করেছিল, তারা ঘোষণপত্রে মেনে নিতে বাধ্য হয়েছিলে। সেই সব দেশ, পৃথিবীর বহু দেশ আমাদেরকে বাজার প্রবেশাধিকার দিয়েছে।”
তাজরীন ফ্যাশনসে অগ্নিকাণ্ড ও রানা প্লাজা ধসে সহস্রাধিক শ্রমিকের মৃত্যুর প্রেক্ষাপটে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী সংগঠন ‘আমেরিকান অর্গানাইজেশন অব লেবার-কংগ্রেস ফর ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন (এএফএল-সিআইও) এর আবেদনে ২০১৩ সালের ২৭ জুন বাংলাদেশের অগ্রাধিকারমূলক বাজার সুবিধা বা জিএসপি সুবিধা স্থগিত করা হয়।
তার আগে জেনারেলাইজড সিস্টেম অব প্রেফারেন্সেসের (জিএসপি) আওতায় বাংলাদেশ পাঁচ হাজার ধরনের পণ্য যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে শুল্কমুক্ত সুবিধায় রপ্তানি করতে পারত।
চলতি বছরের মাঝামাঝিতে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ১২২টি দেশের পণ্যে অগ্রাধিকারমূলক বাজার-সুবিধা (জিএসপি) নবায়ন করা হলেও সেই তালিকায় আসেনি বাংলাদেশ।
সম্মেলনে স্বল্পোন্নত দেশগুলোর নেতৃত্ব দেওয়া তোফায়েল আহমেদ সম্মেলনে নিজের অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে বলেন, “বাংলাদেশের সন্তান হিসাবে আমি পরিষ্কারভাবে বলেছি, আমরা নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে আছি। ভবিষ্যতেও দাঁড়াব। আমরা অন্যের দ্বারস্থ হব না। সেই কারণেই আমরা বাংলাদেশ বাংলাদেশ করি নাই।”
জিএসপি সুবিধা না দেওয়া বা স্থগিতের কথা সম্মেলনে তুলেননি জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, “কারণ আমি মন্ত্রী হিসাবে সম্মানিত একটা জাতির প্রতিনিধিত্ব করি। আছে না, দেখা হলেই বলে, আমাদেরকে এটা দেবেন না? আর কতদিন আটকাইয়া রাখবেন?
“বরং আমি বলেছি, আমাদের অর্থনীতি ভালো হচ্ছে। তোমাদের দেশেও আমরা বেশি পণ্য রপ্তানি করছি। এই বছর এটা ছয় বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে। তোমাদের দেশে আমাদের সবেচেয়ে বেশি পণ্য যায়।”
ওষুধ শিল্প নিয়ে আলোচনার প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, “ফার্মাসি নিয়ে আজ কথা হল, কেনিয়াতে একটা ফার্মাসিউটিক্যাল শিল্প প্রতিষ্ঠান আছে; ওই একটাই মনে হয়। যে কোনো স্বল্পোন্নত দেশ থেকেই বাংলাদেশের অবস্থান ভিন্ন।”
বাংলাদেশের অবস্থা এই মুহূর্তে পৃথিবীর যে কোনো দেশের চেয়ে ভালো দাবি করে তোফায়েল বলেন, “ভানুয়াতুর লোক সংখ্যা হয়তো এক লাখ হবে। মালদ্বীপ, লোকসংখ্যা ৫ লাখও হবে না।
“আবার আফ্রিকান দেশ নাইজেরিয়া। তাদের এক মন্ত্রীকে জিজ্ঞেস করলাম, তোমাদের রপ্তানি কত? বললেন, আমাদের রপ্তানি ৯০ মিলিয়ন ডলার ছিল। তেলের দামের কারণে এখন চল্লিশে নেমে এসেছে।”
২০১৪-১৫ অর্থবছরে বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি করে বাংলাদেশ আয় করেছে ৩১.২ বিলিয়ন ডলার।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন, অতিরিক্ত সচিব (মহাপরিচালক, ডব্লিউটিও সেল) অমিতাভ চক্রবর্তী প্রমুখ।