বুধবার ঢাকায় স্পেনের রাষ্ট্রদূত এদুয়ার্দো দে লা ইগলেসিয়া ই দেল রোসাল দেখা করতে এলে তার মাধ্যমে এ আহ্বান জানান মন্ত্রী।
সচিবালয়ে রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে বৈঠকের পর তোফায়েল সাংবাদিকদের বলেন, “বাংলাদেশের ইপিজেডে স্পেনের উদ্যোক্তাদের বিনিয়োগ রয়েছে। বাংলাদেশে আরও বিনিয়োগ করার জন্য রাষ্ট্রদূতের মাধ্যমে দেশটির বিনিয়োগকারীদের আহ্বান জানিয়েছি। বস্ত্র, কৃষি প্রক্রিয়াকরণ, পাদুকা এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতে বিনিয়োগের জন্য বলেছি।”
“বাংলাদেশের সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগ (এফডআই) নীতি খুবই আকর্ষণীয়। এখানে বিনিয়োগ করে মুনাফা বা মূলধন ফেরত নেওয়ায় কোনো ধরনের জটিলতা নেই। নেই দ্বৈত করের(ডাবল ট্যাক্সেশন) জটিলতাও,” বলেন তিনি।
স্পেনের বিনিয়োগকারীরা এই সুযোগ নেবে বলে আশা করছেন বাণিজ্যমন্ত্রী।
বাংলাদেশ ১০০ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল (এসইজেড) করছে। এর মধ্যে ৩০টির কাজ শুরু হয়েছে।
“আমি রাষ্ট্রদূতকে বলেছি, স্পেনের বিনিয়োগকারীরা চাইলে এই ৩০টির মধ্যে যে কোনো একটি তাদের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হবে,” বলেন তোফায়েল।
বাংলাদেশের যুবকদের প্রশিক্ষণ দিতেও স্পেন সরকারকে অনুরোধ করেছেন তিনি।
বাংলাদেশে বিনিয়োগের বিষয়ে ইতিবাচক মনোভঙ্গী প্রকাশ করে স্পেনের রাষ্ট্রদূত বলেন, তার দেশের ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশের অবকাঠামো বিশেষ করে সেতু, কালভার্ট, বিদ্যুৎ কেন্দ্রে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী।
বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্ক আরও গাঢ় করার উপরও জোর দেন তিনি।
স্পেন বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যের অন্যতম প্রধান বাজার। যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি ও যুক্তরাজ্যের পরেই স্পেনে বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি পণ্য রপ্তানি হয়।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুযায়ী, স্পেনে বাংলাদেশের রপ্তানি ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে। ২০১১-১২ অর্থবছরে ১১৫ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছিল। পরের বছর ১৩০ কোটি ডলারে উন্নীত হয় রপ্তানি। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে রপ্তানির পরিমাণ ছিল ১৬১ কোটি ডলার।
আর সর্বশেষ ২০১৪-১৫ ইউরোপের দেশটিতে মোট রপ্তানির পরিমাণ দাঁড়ায় ১৭৫ কোটি ৩৮ লাখ ডলার, যা আগের বছরের তুলনায় ৭ শতাংশ বেশি।
চলতি অর্থবছরের চার মাসে (জুলাই-অক্টোবর) বাংলাদেশ থেকে স্পেনে ৫৭ কোটি ২৯ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। বছর শেষে এই অঙ্ক ২০০ কোটি ডলার হবে বলে আশা করছেন বাণিজ্যমন্ত্রী।
বাংলাদেশ থেকে স্পেন প্রধানত তৈরি পোশাক, হোম টেক্সটাইল, জুট ইয়ার্ন, পাটজাত পণ্য, চামড়ার জুতা, চিংড়ি, সুতা ও ওষুধ নেয়।
এই দেশটিতে বাংলাদেশ জিএসপি সুবিধা পায়, অর্থাৎ স্পেনের আমদানিকারকদের বাংলাদেশ থেকে আমদানিতে কোনো ধরনের শুল্ক দিতে হয় না।
গত অর্থবছরে স্পেন থেকে বাংলাদেশ আমদানি করেছিল ১৩ কোটি ডলারের পণ্য।
টিকফা
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে টিকফা বৈঠক নিয়ে কথা বলেন বাণিজ্যমন্ত্রী।
তোফায়েল আহমেদ বলেন,“জিএসপি সুবিধা ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য আমেরিকা যে ১৬টি শর্ত (জিএসপি প্ল্যান অব অ্যাকশন) দিয়েছিল, তার বাস্তবায়নে আমেরিকা বাংলাদেশের প্রশংসা করেছে। যেহেতু তারা (আমেরিকা) সন্তোষ প্রকাশ করেছে, সেহেতু আমরা আশা করছি জিএসপি স্থগিত আদেশ তুলে নেওয়া হবে।”
মঙ্গলবার বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সহায়তা ফোরাম চুক্তির (টিকফা)দ্বিতীয় বৈঠক শেষ হয়েছে। বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুনের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল যোগ দেয়।
এই প্রতিনিধি দল জিএসপি স্থগিত আদেশ প্রত্যাহারের পাশাপাশি আমেরিকার বাজারে শুল্ক ও কোটামুক্ত বাজার প্রবেশাধিকার সুবিধা চেয়েছে বলে জানান বাণিজ্যমন্ত্রী।
“আমরা পরিষ্কার বলে দিয়েছি, জিএসপি সুবিধা না পেলে টিকফা হবে অর্থহীন,” বলেন তোফায়েল।