ইন্টারনেট মূল্য হ্রাস: সুফল পাবে না গ্রাহক

শর্তসাপেক্ষে সরকার ইন্টারনেট ব্যান্ডউইডথের দাম কমালেও গ্রাহক পর্যায়ে এর প্রভাব পড়বে না বলে মনে করছে ইন্টারনেট গেটওয়ে এবং ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো।

শামীম আহমেদবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 Sept 2015, 02:34 PM
Updated : 2 Sept 2015, 01:01 PM

সোমবার ব্যান্ডউইডথের দাম ৪১ শতাংশ কমানোর ঘোষণা দেয় বাংলাদেশ সাবমেরিন কেবল কোম্পানি লিমিটেড (বিএসসিসিএল)। এ হিসেবে প্রতি এমবিপিএস (মেগাবিটস পার সেকেন্ড) ব্যান্ডউইডথের দাম দাঁড়ায় ৬২৫ টাকা, যা আগে ছিল ১ হাজার ৬৮ টাকা।

অবশ্য কেবল ১০ জিবিপিএস (গিগাবিটস পার সেকেন্ড) ব্যান্ডউইডথ স্ল্যাবের ক্ষেত্রে এই দাম প্রযোজ্য হওয়ার শর্ত দেওয়া হয়েছে।

মঙ্গলবার থেকে হ্রাসকৃত ব্যান্ডউইডথের মূল্য কার্যকর হয়েছে।

ইন্টারনেট গেটওয়েগুলো বলছে, মোট ৩৭টি ইন্টারনেট গেটওয়ে প্রতিষ্ঠানের মধ্যে দুয়েকটি প্রতিষ্ঠান ১০ জিবিপিএস স্ল্যাব নিয়ে থাকে; বাকিরা সর্বোচ্চ নিয়ে থাকে দুই থেকে পাঁচ জিবিপিএস।

ফলে আইআইজিগুলো দাম না কমালে গ্রাহকরা এর সুফল পাবে না বলেই মনে করছে গেটওয়েগুলো।

আইআইজি প্রতিষ্ঠান ফাইবার অ্যাট হোমের স্ট্রাটেজি অফিসার সুমন আহমেদ সাবির বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “দেশের আইআইজি প্রতিষ্ঠানগুলো বিএসসিসিল থেকে আড়াই থেকে পাঁচ জিবিপিএস ব্যান্ডউইডথ কিনে থাকে। বাকি ব্যান্ডউইডথ আইটিসি বা ইন্টারন্যাশনাল টেরিস্ট্রিয়াল ক্যাবলগুলো থেকে কেনে।”

১০ জিবিপিএস শর্তে কোন আইআইজি ব্যান্ডউইডথ কিনতে রাজি হবে না এবং গ্রাহক পর্যায়ে এর প্রভাব পড়াও সম্ভব নয় বলে মনে করেন সুমন আহমেদ সাবির।

ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার অ্যাসোসিয়েসন (আইএসপিএবি) সেক্রেটারি এমদাদুল হক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এ দাম কমানো বিএসসিসিএল এর শুভঙ্করের ফাঁকি বলে মনে করি।

“বিএসসিসিএল থেকে ১০ জিবিপিএস ব্যান্ডউইডথ কোন আইআইজি এককভাবে কিনে থাকে না। তাই গ্রাহক পর্যায়ে এর সুবিধাও আমাদের দেওয়া সম্ভব হবে না।

“এক জিবিপিএস এর ক্ষেত্রে বিএসসিসিএল মূল্য হ্রাস করে ৯০০ টাকা করেছে, এর চেয়ে কম দামে আইটিসি থেকে ব্যান্ডউইডথ কেনা হচ্ছে অনেক আগে থেকেই।”

বর্তমানে বাংলাদেশ একটি সাবমেরিন কেবল ছাড়াও ছয়টি বিকল্প সাবমেরিন কেবল (আইটিসি বা ইন্টারন্যাশনাল টেরিস্ট্রিয়াল ক্যাবল) সংযুক্ত রয়েছে, যেখান থেকে আইআইজিগুলো ব্যান্ডউইডথ কিনে থাকে।

বিটিআরসি এর হিসাবে চলতি বছর জুলাই শেষ নাগাদ আইএসপি ও পিএসটিএন ইন্টারনেট গ্রাহকসংখ্যা প্রায় ১৩ লাখ।

গ্রাহক সংখ্যার দিক থেকে দেশের সবচেয়ে বৃহৎ মোবাইল ফোন অপারেটর গ্রামীণফোনের চিফ করপোরেট অ্যাফেয়ার্স অফিসার মাহমুদ হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ব্যান্ডউইডথের দাম আমাদের ইন্টারনেট সেবা প্রদানের মোট খরচের একটি ক্ষুদ্র অংশ, তাই এর দাম কমলে তা খরচে তেমন পরিবর্তন ঘটায় না। তবুও এ বছর আমরা গড় ইন্টারনেট চার্জ ৫৬% হ্রাস করেছি।”

চলতি বছর জুলাই নাগাদ দেশে ইন্টারনেটের গ্রাহক সংখ্যা পাঁচ কোটি ছাড়িয়েছে। বিটিআরসির হিসাবে বাংলাদেশের ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের মধ্যে ৯৭ শতাংশ ব্যবহার করছে মোবাইল ইন্টারনেট।

এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়েছিল বাংলাদেশ সাবমেরিন কেবল কোম্পানি লিমিটেডের (বিএসসিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক মনোয়ার হোসেনের কাছে।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “মূলত ভারতে ১০ জিবিপিএস ব্যান্ডউইডথ রপ্তানির সাথে তুলনা করে এই দাম কমানো হয়েছে। ভারত ১০ জিবিপিএস ব্যান্ডউইডথ নেবে ১০ ডলার এমপিবিএস হিসাবে, সেই হিসাবে এখানে স্ল্যাব ধরে দাম কমানো হয়েছে।”

দেশে ইন্টারনেটের দাম নিয়ে ব্যবহারকারীদের মধ্যে অসন্তোষ রয়েছে। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোতেও ইন্টারনেটের দাম কমানোর দাবি উঠেছে বিভিন্ন সময়ে।

গত ৬ অগাস্ট ডিজিটাল বাংলাদেশ টাস্কফোর্সের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইন্টারনেট ব্যান্ডউইডথের দাম সাধারণ মানুষের নাগালের মধ্যে রাখার নির্দেশ দেন।

বর্তমানে ২০০ জিবিপিএস ব্যান্ডউইথসহ সাবমেরিন কেবলে (সি-মি-উই-৪) সংযুক্ত আছে বাংলাদেশ, যার মধ্যে প্রায় ৩০ জিবিপিএস ব্যবহৃত হচ্ছে। অব্যবহৃত থেকে যাচ্ছে ১৭০ জিবিপিএস।

আগামী বছর ডিসেম্বরে একটি কনসোর্টিয়ামের আওতায় সি-মি-উই-৫ বা দ্বিতীয় সাবমেরিন কেবলে সংযুক্ত হবে বাংলাদেশ। এর ফলে অতিরিক্ত ১ হাজার ৩০০ জিবিপিএস ব্যান্ডউইডথ পাওয়া যাবে।