ব্রাজিলের গম আমদানির কাজে খাদ্য অধিদপ্তর থাকলেও এর দায় খাদ্য মন্ত্রণালয় এড়াতে পারে না বলে মনে করে খাদ্য মন্ত্রণালয় বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটি।
Published : 07 Jul 2015, 05:08 PM
মঙ্গলবার জাতীয় সংসদে কমিটির বৈঠকের পর মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন সভাপতি আবদুল ওয়াদুদ দারা।
সভায় আরও আলোচ্য বিষয় থাকলেও ব্রাজিলের গমের বিষয়টা সামনে চলে আসে জানিয়ে তিনি বলেন, “আমরা জানতে চেয়েছি, এ রকম আলোচনা হচ্ছে কেন? মন্ত্রণালয়ের জবাব আমাদের কাছে ঠিক আছে মনে হয়েছে।”
যাবতীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে এই গম আমদানি করা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “লাল রংয়ের গম আমাদের দেশের মানুষ একটু কম পছন্দ করে, সাদা রংয়ের গম বেশি পছন্দ করে। এটিও একটা কারণ হতে পারে বলে তারা বলছে। কিন্তু এর সব ইনগ্রেডিয়েন্টস ঠিক আছে।
“এখানে একটা লক্ষ্যণীয় বিষয়, খবরের কাগজগুলো বেশি করে মন্ত্রীকে জড়াচ্ছে। অবশ্য মন্ত্রী দায় অস্বীকার করতে পারে না। কারণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে ডিজি। টোটাল দায় দায়িত্ব ডিজির উপরে বর্তায়। আমরা ডিজিকেও প্রশ্নের সম্মুখীন করেছি।”
আমদানির আগে এই গম সম্পর্কে খাদ্যমন্ত্রী জানতেন কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “মন্ত্রীর অজ্ঞাতসারে সম্ভব এই কারণে যে, মন্ত্রণালয় একটা আদেশ দেয়- আমরা এই পরিমাণ গম এবার ক্রয় করতে চাই। এর দায়দায়িত্ব সম্পূর্ণ ডিজির উপরে বর্তায়।
“কিন্তু কোনো সমস্যা হলে সব কিছুতো মন্ত্রণালয় ভোগ করে। কিন্তু দায়িত্বটা হলো সেলফ ডিজির। ডিজি ক্রয় করবে, টেন্ডার আহ্বান করবে, পেমেন্ট ক্লিয়ার করবে। কিন্তু যেহেতু ডিজি মন্ত্রণালয়ের অধীনে, তাই মন্ত্রণালয় দায়িত্ব অস্বীকার করতে পারে না।”
ব্রাজিলের গম নিয়ে সব পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও ক্রয়সংক্রান্ত সব নথিপত্র যাচাইয়ের জন্য মন্ত্রণালয়ের কাছে চাওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
এর আগে সংসদে খাদ্যমন্ত্রী গম আমদানির দায় খাদ্য অধিদপ্তরের উপর চাপিয়ে বলেন, চূড়ান্ত বিলও খাদ্যমন্ত্রীরা চেক করে না।
সম্প্রতি একাধিক দৈনিকে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, ব্রাজিল থেকে আমদানি করা ওই গম ‘নষ্ট ও পচা’। পুলিশ, বিজিবি, আনসার, জেলখানা, ডিলার ও আটা কল ছাড়াও টিআর (টেস্ট রিলিফ) ও কাবিখাসহ (কাজের বিনিময়ে খাদ্য) বিভিন্ন কর্মসূচিতে ওই গম বিতরণ করা হচ্ছে। এ নিয়ে পুলিশ আপত্তিও তুলেছে।
পুলিশের আপত্তির বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর কাছে গেলে তিনি তদন্তের নির্দেশ দিলেও খাদ্য মন্ত্রণালয় ও খাদ্য অধিদপ্তর এ নিয়ে ‘লুকোচুরি’ শুরু করে বলে একটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
‘পচা গম’ আমদানির অভিযোগ উঠার পর বিএনপির পক্ষ থেকে খাদ্যমন্ত্রীর পদত্যাগও দাবি করা হয়।
তবে ওই গম ‘পচা নয়’ দাবি করে খাদ্যমন্ত্রী এর আগেও সংসদে কথা বলেন।
এরপর ‘নিম্নমানের’ গম আমদানি ও সরবরাহের অভিযোগ দুদককে দিয়ে তদন্তের আদেশ চেয়ে পাভেল মিয়া নামের এক আইনজীবী গত ২৮ জুন এই রিট আবেদন করেন।
এ বিষয়ে প্রাথমিক শুনানি করে ৩০ জুন হাই কোর্ট রুলসহ আদেশ দেয়। ওই গম মানুষের খাওয়ার উপযোগী কি না, সে বিষয়ে খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়।
ওই রিটের আদেশ অনুসারে, ব্রাজিল থেকে চারশ কোটি টাকায় আমদানি করা গম মানুষের খাওয়ার উপযোগী বলে উচ্চ আদালতে প্রতিবেদন দিয়েছে খাদ্য অধিদপ্তর। আগামী ৭ জুলাই পরবর্তী শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে।
আবদুল ওয়াদুদ দারা বলেন, আদালতের নির্দেশনার পর আমরা পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করব।