সৎ সাংবাদিকতা করছে না প্রথম আলো: মতিয়া

কলের লাঙল কেনায় ভর্তুকির অর্থ বরাদ্দ নিয়ে প্রতিবেদনকে কেন্দ্র করে প্রথম আলোর বিরুদ্ধে অসৎ সাংবাদিকতার অভিযোগ করেছেন মতিয়া চৌধুরী।

সংসদ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 July 2015, 09:44 AM
Updated : 5 July 2015, 11:30 AM

ঝিনাইদহের এই বিষয়টিকে কেন্দ্র করে প্রথম আলোর প্রতিবেদকের রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার বিষয়টিও রোববার সংসদে ৩০০ বিধিতে দেওয়া এক বিবৃতিতে তুলে ধরেন তিনি।

কৃষিমন্ত্রী মতিয়া প্রথম আলোকে উদ্দেশ করে বলেন, “যতই বানোয়াট নিউজ ছাপান না কেন, এতে যে আমি খুব একটা উত্তেজিত হব, এমন না। তারা তাদের ইচ্ছামতো নিউজ করে এবং সেইভাবে পাঠকদের বিভ্রান্ত করে।

“আমি শুধু এটুকু বলবো যে মন্ত্রী বা এমপি হলে পার্লামেন্টে কথা বলতে পারি, তাও সেশন থাকলে। সাধারণ মানুষ কী করবে। সাধারণ মানুষের প্রতিকারের পথটা কী? এর নাম সৎ সাংবাদিকতা না। আই রিপিট, এর নাম সৎ সাংবাদিকতা না, এর নাম সৎ সাংবাদিকতা না।”

সাবেক রাজনৈতিক সহযোদ্ধা সম্পাদিত পত্রিকাটির সমালোচনা করে মতিয়া আরও বলেন, “আমি মন্ত্রী বলে সংসদে বিবৃতি দিয়ে প্রকৃত ঘটনা জানাতে পারছি। কিন্তু সাধারণ মানুষের ক্ষেত্রে অসত্য খবর প্রকাশিত হলে তার প্রতিকার কীভাবে পাবে? প্রতিবাদ দিলেও তারা তিন-চার লাইন দেন অথবা দেন না।”

ষাটের দশকে মতিয়া যখন বামপন্থি ছাত্র সংগঠন ছাত্র ইউনিয়নের নেতা ছিলেন, প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমানও তখন ছাত্র সংগঠনটির মধ্যম সারির নেতা ছিলেন। মতিউর রহমান পরে কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য ও দলটির মুখপত্র একতার সম্পাদক ছিলেন।

গত ২৭ মে প্রথম আলো পত্রিকায় ‘কলের লাঙলের ভর্তুকির বড় ভাগ সরকারি দলের নেতা-কর্মীদের পকেটে’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।

এর পরিপ্রেক্ষিতে ১৬ জুন সংসদে বিবৃতি দেন মতিয়া চৌধুরী। ওই বিবৃতির পরিপ্রেক্ষিত সংবাদ প্রকাশের পর আবারও বিবৃতি দেন মতিয়া।

সর্বশেষ গত ২ জুলাই পত্রিকাটি ‘প্রথম আলোর খবর অসত্য নয়, এখনো পাঁচজন লাঙল কেনেননি’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ করে।

কৃষি মন্ত্রণালয়ের তদন্ত প্রতিবেদনে সবাই কলের লাঙল কিনেছেন বলে উল্লেখ করা হলেও প্রথম আলো অনুসন্ধান চালানোর পর ২ জুলাইয়ের প্রতিবেদনে বলেছে, ওই ১৫ জনের মধ্যে নয়জন লাঙল কিনেছেন, ছয়জন কেনেননি।

“এখনও পাঁচজন বাকি আছেন। তারা পুরোনো লাঙল ধার করে এনে তদন্ত কমিটিকে দেখিয়েছেন।”

ভর্তুকিতে কলের লাঙল পাওয়ার জন্য রাজনৈতিক পরিচয় দেখে নির্বাচিত করা হয়নি বলে তদন্ত কমিটি উল্লেখ করার পরিপ্রেক্ষিত প্রথম আলো বলেছে, আটজনই যুবলীগের স্থানীয় বিভিন্ন কমিটির নেতা। একজন আওয়ামী লীগ নেতার ছেলে। বাকি ছয়জনের মধ্যে পাঁচজন যুবলীগের কর্মী। অন্যজন সক্রিয় রাজনীতি করেন না, তবে আওয়ামী লীগের সমর্থক।

সংসদে বিবৃতির পর অনুসন্ধান চালিয়ে প্রথম আলোর প্রতিবেদন প্রকাশের পর রোববার আবার সংসদে এনিয়ে কথা বলেন কৃষিমন্ত্রী।

প্রথম আলোর সংবাদের পরিপ্রেক্ষিতে গত ৩ জুলাই মন্ত্রণালয় আবার তদন্ত করেছে জানিয়ে তিনি বলেন, ওই তদন্তে প্রথম আলোর সংবাদ ‘অসত্য’ বলে প্রমাণিত হয়েছে।

ঝিনাইদহে প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদকের প্রসঙ্গে মতিয়া বলেন, “জনাব আজাদ রহমান ৯১-৯৬ সালে ঝিনাইদহ কালীগঞ্জ উপজেলা ছাত্রদলের সম্পাদক ছিলেন। ১৯৯৮-২০০০ মেয়াদে যুবদলের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। এছাড়াও তিনি প্রাক্তন মন্ত্রী তরিকুল ইসলামের লোকসমাজ পত্রিকার সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন।”

ভর্তুকি দেওয়া প্রসঙ্গে মতিয়া বলেন, “একজন কৃষক ৭৫ ভাগ টাকা জমা দিলে পরে কিনতে পারে। তাও কাগজপত্র নিশ্চিত হওয়ার পর সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানকে ভর্তুকির টাকা দেওয়া হয়। কোনো ব্যক্তিকে এই টাকা দেওয়া হয় না।

“মূলত এই বিষয়টি হয়ত প্রথম আলো কর্তৃপক্ষ বোঝে না, অথবা বুঝেও না বোঝার চেষ্টা করছে... অথবা এর পেছনে কোনো উদ্দেশ্য নিহিত আছে।”