বিচারের নামে তামাশা: ফেলানীর বাবা

কুড়িগ্রাম সীমান্তে কিশোরী ফেলানী খাতুন হত্যার পুর্নবিচারেও অভিযুক্ত বিএসএফ সদস্য খালাস পাওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ফেলানীর বাবা নুরুল ইসলাম নুরু।

আহসান হাবীব নীলু কুড়িগ্রাম প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 July 2015, 08:45 AM
Updated : 3 July 2015, 07:14 PM

তিনি বলেছেন, “ভারত সরকার বিচারের নামে তামাশা করেছে।”

মামলার পুর্নবিচারে বৃহস্পতিবার গভীর রাত পর্যন্ত শুনানির পর বিএসএফের হাবিলদার অমিয় ঘোষকে দেওয়া খালাসের রায়ই বহাল রাখে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের নিজস্ব আদালত জেনারেল সিকিউরিটি ফোর্সেস কোর্ট।

মহাপরিচালকের অনুমোদন পাওয়ার পর বিএসএফের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে রায়ের বিষয়টি জানানো হবে।

রায়ের খবরে হতাশা প্রকাশ করে ফেলানীর বাবা শুক্রবার সকালে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমে বলেন, বিএসএফের আদালতে তিনি ‘ন্যায় বিচার পাননি’।

“এ রায় আমরা প্রত্যাখ্যান করছি। অমিয় ঘোষের ফাঁসি হওয়া উচিৎ ছিল।”

ফেলানীর মা জাহানারা বেগম প্রশ্ন করেন, “আমরা গরিব বলে আমাদের ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকার নাই?”

কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার দক্ষিণ রামখানা ইউনিয়নের বানার ভিটা গ্রামের নুরুল ইসলাম প্রায় ১০ বছর ধরে দিল্লিতে ছিলেন। সেখানে তার সঙ্গেই থাকতো ফেলানী।

দেশে বিয়ে ঠিক হওয়ায় ২০১১ সালের ৭ জানুয়ারি কুড়িগ্রামের অনন্তপুর সীমান্ত দিয়ে বাবার সঙ্গে ফেরার পথে কাঁটাতারের বেড়ায় কাপড় আটকে যায় ফেলানীর। এতে ভয়ে চিৎকার দিলে বিএসএফ তাকে গুলি করে হত্যা করে এবং পরে লাশ নিয়ে যায়।

কাঁটাতারের বেড়ায় ফেলানীর ঝুলন্ত লাশের ছবি গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলে বিশ্বজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি হয়। পরে বাংলাদেশ সরকার ও মানবিকার সংস্থাগুলোর কড়া প্রতিবাদে বিচারের ব্যবস্থা হলেও ২০১৩ সালের ৬ সেপ্টেম্বর বিএসএফের আদালত আসামি অমিয় ঘোষকে বেকসুর খালাস দেয়।

ফেলানীর পরিবারের আপত্তিতে বিএসএফ মহাপরিচালক রায় পুনর্বিবেচনার আদেশ দিলে ২০১৪ সালের ২২ সেপ্টেম্বর নতুন করে শুনানি শুরু হয়। কিন্তু পুনর্বিচারে একই আদালত তাদের পুরনো রায় বহাল রাখে। 

এ মামলায় দুই দফা কোচবিহারে গিয়ে সাক্ষ্য দেন ফেলানীর বাবা নুরুল ইসলাম। ন্যায় বিচারের জন্য আবারও ভারত সরকারের কাছে আবেদন করবেন বলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান তিনি।

এ মামলায় ফেলানীর পরিবারকে আইনি সহায়তা দেয়া কুড়িগ্রাম জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর আব্রাহাম লিংকন জানান, আনুষ্ঠানিক রায় ঘোষণার পর ফেলানীর পরিবার ভারতের আদালতে আপিলের সুযোগ পাবে। তবে এ ক্ষেত্রে মানবাধিকার সংগঠনগুলোর সহায়তা প্রয়োজন হবে।

রায়ের প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, “এই রায় ভারতীয় বিচার ব্যবস্থাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। এর ফলে সীমান্ত হত্যার ক্ষেত্রে বিএসএফ আরও বেপরোয়া হয়ে উঠবে। যা সীমান্ত ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে সংকট তৈরি করবে।”

এই রায় মানবাধিকার ও ন্যায়বিচারের ‘পরিপন্থি’ বলেও তিনি মন্তব্য করেন।

কুড়িগ্রাম বিজিবির পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল জাকির হোসেন এ ব্যাপাওে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

তিনি বলেন, “আদালতের রায় এখনও অফিসিয়ালি আমরা পাইনি। পেলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নেবে।”