‘আমাদের আনন্দ প্রকাশের ভাষা নেই’

ভারতের রাজ্যসভায় স্থল সীমান্ত বিল পাশ হওয়ায় ছিটমহলগুলোতে বইছে আনন্দের বন্যা।

আহসান হাবীব নীলু কুড়িগ্রাম প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 May 2015, 03:51 PM
Updated : 6 May 2015, 03:51 PM

মন্ত্রিসভায় অনুমোদিত বিলটি বুধবার পার্লামেন্টের উচ্চ কক্ষ রাজ্যসভায় সর্বসম্মতভাবে পাস হয় বলে ভারতের সংবাদ মাধ্যমের খবরে বলা হয়।

বাংলাদেশের কাছে বহু প্রতীক্ষিত এই সীমান্ত বিল পাস হওয়ায় ছিটমহল বিনিময়ের পথ প্রশস্ত হলো।

মঙ্গলবার মন্ত্রিসভায় বিলটি অনুমোদনের পর থেকেই ছিটমহলবাসীদের মধ্যে উৎসব শুরু হয়। চলে কোলাকুলি, মিষ্টি বিতরণ।

বিকালে কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলায় অবস্থিত ভারতীয় ছিটমহল দাসিয়ার ছড়ার কালিরহাট বাজারে শত শত নারী-পুরুষ আনন্দে মেতে ওঠে।

দীর্ঘদিনের ছিটমহলে বসবাস করে মুক্তির এমন অনুষঙ্গে আত্মহারা হয়ে যায় তারা।

বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা উত্তোলন করে একে অপরকে জড়িয়ে ধরে উল্লাসে মেতে ওঠে শিশু-বৃদ্ধ-যুবক-যুবতী সবাই।  

বিকালে সরেজমিন দাসিয়ার ছড়ায় গিয়ে দেখা যায়, বিভিন্ন বাড়ির আঙিনায়, টং ঘরে, বাজারে, ক্ষেত-খামার, পথে-ঘাটে মানুষ সীমান্ত চুক্তি বিলটি অনুমোদনের বিষয় নিয়ে মেতে আছে। সকবার চোখেমুখে খুশির ঝিলিক। আলিঙ্গন করছে একে অপরকে।

ছিটমহলের বাসিন্দা আলতাফ হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এবার আমরা খাঁচার বন্দি জীবন থেকে মুক্তি পেতে যাচ্ছি। আমাদের আনন্দ প্রকাশের কোনো ভাষা নেই।”

আনন্দাশ্রু চোখে কৃষক সুরত আলী বলেন, “আমরা অতি তাড়াতাড়ি বাংলাদেশের নাগরিক হতে যাচ্ছি, এর চেয়ে ভালো খবর আর কী হতে পারে।”

স্কুলছাত্রী আয়েশা সিদ্দিকা বলেন, “এখন স্বাধীন নাগরিক হিসেবে বেঁচে থাকতে পারব। বুক উঁচু করে পরিচয় দিতে পারব। মিথ্যে পরিচয় দিয়ে স্কুল-কলেজ বা হাসপাতালে যেতে হবে না।”

বাংলাদেশ-ভারত ছিটমহল বিনিমিয় সমন্বয় কমিটি ভারত ইউনিটের সহ-সাধারণ সম্পাদক দীপ্তিমান সেনগুপ্ত সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, “আমরা আশা করছি দ্রুততম সময়ে বিলের সকল আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে ৬৮ বছরের বঞ্চনার অবসান করবে ভারত সরকার।”

বাংলাদেশ-ভারত ছিটমহল বিনিময় সমন্বয় কমিটি বাংলাদেশ ইউনিটের সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা বলেন, আইনি প্রক্রিয়া দ্রুত সময়ে শেষ করে ছিটমহল বিনিময় বাস্তবায়ন হবে এবার।

ছিটমহলের অবস্থান

ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের কোচবিহার জেলার অভ্যন্তরে বাংলাদেশের কুড়িগ্রাম জেলার ১৮টি এবং লালমনিরহাট জেলার ৩৩টি মিলে মোট ৫১টি ছিটমহল রয়েছে। এগুলোর আয়তন ৭ হাজার ১১০ একর। এতে বাংলাদেশের লোক সংখ্যা রয়েছে প্রায় ১৪ হাজার।

অপরদিকে বাংলাদেশের ভূখণ্ডের ভেতর ভারতের কোচবিহার জেলার অধীনে ১১১টি ছিটমহল রয়েছে, যার আয়তন প্রায় ১৭ হাজার ১৬০ একর।

এগুলোর মধ্যে কুড়িগ্রামে ১২টি, লালমনিরহাটে ৫৯টি, পঞ্চগড়ে ৩৬টি এবং নীলফামারী জেলায় ৪টি ভারতীয় ছিটমহল রয়েছে। এসব ছিটমহলে ভারতের লোকসংখ্যা প্রায় ৩৭ হাজার।