যত্রতত্র মূত্রত্যাগ ঠেকাতে আরবি ভাষা!

তিলোত্তমা ঢাকায় সরকার পর্যাপ্ত গণশৌচাগার দিতে পারেনি; তবে যত্রতত্র মূত্রত্যাগ ঠেকাতে ধর্ম মন্ত্রণালয় অভিনব এক উদ্যোগ নিয়েছে, যা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে চলছে তুমুল আলোচনা।  

সোশ্যাল মিডিয়া ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 May 2015, 05:00 AM
Updated : 27 June 2015, 11:27 AM

প্রকৃতির ডাকে ‘নিরুপায়’ যারা ‘নিষেধ’ লেখা দেখেও ফুটপাতে দাঁড়িয়ে যান, তাদের নিবৃত্ত করতে ধর্ম মন্ত্রণালয় ব্যবহার করছে ‘ধর্মীয় অনুভূতি’।

‘বাংলা’ নিষেধে কাজ না হওয়ায় ‘এখানে প্রস্রাব করা নিষেধ’ বাক্যটি লিখে দেওয়া হচ্ছে আরবি হরফে। মন্ত্রণালয়ের দাবি, এর ফলাফল ‘অভাবনীয়’।      

এ উদ্যোগ নিয়ে দুই মিনিটের একটি তথ্যচিত্র তৈরি করে ভিডিওশেয়ারিং ওয়েবসাইট ইউটিউবেও প্রকাশ করেছে ধর্ম মন্ত্রণালয়। অভিনব এ উদ্যোগকে সেই ভিডিওতে বলা হয়েছে ‘এ স্মার্ট সলিউশন টু আ ফাউল প্রবলেম’।

২ মে প্রকাশিত হওয়ার পর বুধবার সকাল ৯টা পর্যন্ত ১ হাজার ৪৯৬ জন ইউটিউবে দেখেছেন সেই ভিডিও। ফেইসবুকসহ সামাজিক যোগোযোগের বিভিন্ন মাধ্যমেও আলোচনার খোরাক যোগাচ্ছে সেটি।

ধর্ম মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ভিডিও আপলোডের পর থেকে ব্যাপক সাড়া পাওয়া গেছে। প্রধানমন্ত্রী ভিডিও দেখে ধর্মমন্ত্রীকে ফোন করে ধন্যবাদও জানিয়েছেন।”

ভিডিওতে বলা হয়, ৯৪ দশমিক ৪ শতাংশ মুসলমান-অধ্যুষিত বাংলাদেশে আরবি একটি ‘পবিত্র ভাষা’ হিসেবে বিবেচিত, যদিও খুব কম লোকই এ ভাষা বোঝেন। তাই প্রকাশ্যে মূত্রত্যাগ না করার বার্তাটি রাস্তার পাশের দেয়ালে লিখে দেওয়া হচ্ছে আরবি ভাষায়।

আরবি হরফে ওই বার্তার সঙ্গেই নগরবাসীকে ‘সঠিক ঠিকানা’ চিনিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। দিকনির্দেশক চিহ্ন দিয়ে বাংলায় লিখে দেওয়া হচ্ছে ‘১০০ হাত দূরে মসজিদ' অথবা ‘টয়লেট’। 

ভিডিওতে দেখা যায়, বসে পড়েও দেয়ালে আরবি হরফ দেখে কেউ কেউ ‘কাজ না সেরেই’ উঠে চলে যাচ্ছেন। আবার ‘কাজ সেরে ফেলার পর’ আরবি হরফ দেখে ‘অনুশোচনায়’ মাথা নাড়তেও দেখা যায় একজনকে।

ধর্ম মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা আনোয়ার হোসাইন মঙ্গলবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “একটি বিশেষ আইডিয়া নিয়ে মন্ত্রণালয় ডকুমেন্টরিটি বানিয়েছে, ব্যাপক সাড়াও পাওয়া যাচ্ছে।

“যেখানে-সেখানে প্রস্রাব না করতে জনগণের সচেতনতা বাড়ানোর পাশাপাশি ধর্মীয় অনুশাসনের ভিত্তিতে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতাকেও ডকুমেন্টরিতে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।”

এটি টেলিভিশনেও প্রচারের ব্যবস্থা হবে জানিয়ে আনোয়ার বলেন, বিষয়টি বাস্তবায়নের দায়িত্ব সিটি করপোরেশনের।

ফজরের নামাজের আজানের মধ্য দিয়ে শুরু এই তথ্য চিত্রে ঢাকার সংক্ষিপ্ত পরিচিতি তুলে ধরা হয়েছে ইংরেজিতে। ভিডিওতে দেখা যায়, রাস্তার ধারে ‘এখানে প্রস্রাব করা নিষেধ’ লেখা থাকার পরও প্রকাশ্যে দাঁড়িয়ে-বসে মূত্রত্যাগ করছেন অনেকে। আর পথচারীরা ওই এলাকা পার হচ্ছেন নাকে কাপড় চেপে।

ধর্মমন্ত্রী মতিউর রহমান তথ্যচিত্রে বলেন, “ঢাকা মসজিদের নগরী। আমি তো উপলব্ধি করতে পারি যে প্রতিটি মসজিদে বাথরুমের সুবিধা থাকা সত্ত্বেও যেখানে লেখা থাকে এখানে প্রস্রাব করা নিষেধ সেই জায়গাতে দেহি তারা অনেক সময় প্রস্রাব করে।”

এরপর ধর্ম মন্ত্রণালয়ের এই অভিনব উদ্যোগের বিষয়টি ভিডিওতে তুলে ধরা হয়। 

এতে দেখা যায়, ‘এখানে প্রস্রাব করা নিষেধ’ লেখা চুনকামে মুছে দিয়ে সেখানে আরবিতে লেখা হল ‘হুনা মামনু আততাবুল’।

এরপর কী ফল পাওয়া গেল, তার কিছু নমুনাও ভিডিওতে তুলে ধরা হয়েছে।

শেষে মন্ত্রীকে বলতে দেখা যায়, “এটা যদি কনটিনিউ করা হয়, তাহলে এটা প্রকৃতপক্ষেই একশ পারসেন্ট সাকসেসফুল হবে ইনশাল্লাহ।”

ইউটিউবে ওই ভিডিওর নিচে সৈয়দ প্রতীক মন্তব্য করেছেন- “হোয়াট অ্যান আইডিয়া স্যার জি”

নাফিউল আজিজ লিখেছেন, “পরিবর্তনের এইতো শুরু।”