দিদার বলীই চ্যাম্পিয়ন

চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী আব্দুল জব্বারের বলী খেলায় দশম বারের মতো চ্যাম্পিয়ন হয়েছে কক্সবাজারের দিদার বলী।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 April 2015, 02:21 PM
Updated : 25 April 2015, 03:20 PM

শনিবার আয়োজিত এই খেলায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অলী বলিকে সহজেই হারিয়ে শিরোপা ধরে রাখেন তিনি। 

বিকালে ঢোলের তালে তালে শুরু হয় জব্বারের বলী খেলা। এসময় হাজারো দর্শকের করতালিতে মুখর ছিল পুরো লালদীঘি মাঠ।

এর আগে সেমিফাইনালে গতবারের রানার্স-আপ নারায়ণগঞ্জের হাবিবুর রহমানকে সহজেই পরাজিত করে ফাইনালে উঠেন দিদার। আর মহেশখালীর হাশেম বলীকে পরাজিত করে ফাইনালে আসেন অলি।

২০১২ সালের চ্যাম্পিয়ন অলীর সঙ্গে এবছর দিদারের ফাইনাল খেলাটি জমজমাট ও উত্তেজনাকর হওয়ার প্রত্যাশা ছিল দর্শকদের কাছে।

কিন্তু মল্লযুদ্ধে সাড়ে চার মিনিটেই অলীকে ধরাশায়ী করে ঐতিহ্যবাহী বলী খেলায় দশমবারের মতো শিরোপা জিতে নেন দিদার।

২০০২ সালে কক্সবাজারের উখিয়ার ছিদ্দিক বলীর সাথে যুগ্মভাবে চ্যাম্পিয়ন হয়ে প্রথম চ্যাম্পিয়ন হন দিদার।

এরপর ২০০৪ থেকে ২০০৬ এবং ২০০৮ ও ২০০৯ সাল খাগড়াছড়ির মর্ম সিংয়ের সঙ্গে যৌথভাবে চ্যাম্পিয়ন হন দিদার। ২০০৭ সালে মর্ম সিংকে হারিয়ে প্রথম একক শিরোপার স্বাদ পান দিদার।

মাঝে ২০১০ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত বহিষ্কৃত ছিলেন তিনি। ২০১৩ সালে পুনরায় অংশ নিয়ে ২০১৫ সাল পর্যন্ত টানা চ্যাম্পিয়ন হন দিদার।  

এই খেলায় প্রধান অতিথি ছিলেন গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন।

চ্যাম্পিয়ন দিদার ও রানার্স আপ অলীর হাতে ক্রেস্ট এবং যথাক্রমে ১৫ ও ১০ হাজার টাকার চেক তুলে দেন প্রধান অতিথি।

এছাড়া প্রথম রাউন্ডে জয়ী প্রত্যেককে ক্রেস্ট ও এক হাজার টাকা করে পুরস্কার দেয়া হয়।  

জব্বারের বলী খেলায় ১০৬তম আসরে এবার ৭৮ জন প্রতিযোগী অংশ নেন। এদের মধ্যে ৭৪ জন নক-আউট পদ্ধতিতে খেলেন এবং চারজন সরাসরি সেমিফাইনালে খেলেন।

এবছর থেলায় ষাটোর্ধ্ব বেশ কয়েকজন বলী অংশ নেন। এদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বয়সী ছিলেন রাঙ্গুনিয়ার সরফভাটা ইউনিয়নের মো, নুরুচ্ছফা। ৭৯ বছর বয়সে খেলতে আসা এই বলী এর আগেও ৩০ বছর অংশ নিয়েছেন বলে দাবি করেন। 

ছয় সন্তানের জনক নুরুচ্ছফা ছিলেন পেশায় নৌকাচালক। গত কয়েক বছর ধরে নৌকা চালানো ছেড়ে দিলেও বলীতে অংশ নিচ্ছেন তিনি।

চট্টগ্রামের বেসরকারি প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয় ইলেট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের শিক্ষার্থী ফাহাদুল ইসলামও অংশ নেন বলী খেলায়। তবে শখের বশে বলী অংশ নেওয়ার কথা জানান ফাহাদুল।

ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে যুবকদের উদ্বুদ্ধ করতে ১৩০৬ বঙ্গাব্দের ১২ বৈশাখ এই বলী খেলার আয়োজন করেন স্থানীয় আব্দুল জব্বার সওদাগর। সে থেকে বৈশাখ মাসের ১২ তারিখ অনুষ্ঠিত হয় এই বলী খেলা।

বলী খেলার সঙ্গে মেলা

বলী খেলাকে ঘিরেই প্রতি বছর লালদীঘি মাঠের চারপাশে বসে বৈশাখী মেলা। আর গৃহস্থালি উপকরণ কিনতে সারা বছর এ মেলার অপেক্ষায় থাকেন নগরবাসী।

শনিবার ভোরে মেলায় যাওয়া নগরীর মোমিন রোডের গৃহিনী ফেরদৌস বেগম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সারা বছর অপেক্ষায় থাকি। মেলা থেকেই ফুলদানি, দা-বটি, ঝাড়ু এসব কিনে নিই।”

লালদীঘি মাঠের পাশের সড়ক হয়ে কোতোয়ালির মোড়, কে সি দে সড়ক, সিনেমা প্যালেস, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, জেল রোড, হাজারী গলি পর্যন্ত ছড়িয়ে বসে এই মেলা।

কাঠের আসবাব, জ্যান্ত পশু পাখি, মাটির তৈরি ফুলদানি, গাছের চারা, মাটির হাড়ি-পাতিল-ব্যাংক, মুখোশ, শো-পিস, কাঠের তৈরি খেলনা, বাঁশি, দা-বটি-ছুরি, ঝাড়ু, প্লাস্টিকের সামগ্রী, গহণা এসবের পসরা সাজিয়ে বসেন দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা ব্যবসায়ীরা।

সঙ্গে যোগ হয় বৈশাখে তৈরি গ্রাম বাংলার খাবার মুড়ি, মোওয়া, বাতাসা, গজা, নারকেল ও ছোলায় তৈরি নানা উপকরণ।

আগ্রাবাদ থেকে আসা গৃহিনী রাশেদা খাতুন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “জব্বরের বলিখেলার মেলায় মাটির তৈরি প্লেট, জগ, মগ, গহনা, খেলনাসহ এমন অনেক কিছুই পাওয়া, যা সাধারণত বাজারে পাওয়া যায় না।”

তবে এবার সিটি নির্বাচনের ব্যস্ততার কারণে মেলায় লোক সমাগম গত বারের তুলনায় কম বলে দাবি বিক্রেতাদের।

চাঁদপুর থেকে আসা খাদ্যদ্রব্য ব্যবসায়ী মজ্ঞুর মুন্সি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন  “হরতাল নাই, অবরোধ নাই তারপরও কেন ব্যবসা জমছে না বুঝতেসি না।”

লাকসাম থেকে নাগরদোলা নিয়ে আসা ব্যবসায়ী ফখরুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম বলেন “ কালকে থেকে এখন পর্যন্ত মাত্র আটশ টাকার ব্যবসা হয়েছে। এমনে চলতে থাকলে গাড়ি ভাড়াও তুলতে পারব কি না সন্দেহ।”