তাদের কেউ কেউ বলেছেন, তাদের কাছে প্রার্থী মুখ্য নয়। বরং নগরীর বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, নারীদের নিরাপত্তা, ছিনতাইয়ের ঘটনা দমন এবং রাস্তাঘাটের উন্নয়নে যিনি মনোযোগী হবেন তাকেই তারা বেছে নেবেন।
৩০ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা তরুণ উদ্যোক্তা আশফাক হোসেন ইভান যেমন বললেন, “ভবিষ্যৎ নগরপিতা যেই হোন না কেন তিনি যেন নগরের বিভিন্ন সমস্যা যেমন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সমস্যা, এবড়ো-থেবড়ো রাস্তাঘাট, জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করেন।”
অবিভক্ত ডিসিসির শেষ নির্বাচিত মেয়র ছিলেন বিএনপির সাদেক হোসেন খোকা। ২০০৭ সালে তার মেয়াদ শেষ হওয়ার পর আর নির্বাচন হয়নি। এরপর ২০১১ সালে ডিসিসিকে দুই ভাগ করা হয়।
আগামী ২৮ এপ্রিল ভোটের তারিখ রেখে বিভক্ত ঢাকার উত্তর ও দক্ষিণ নগরীতে ভোটের তফসিল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন।
এর মধ্যে ব্যবসায়ী নেতা আবদুল আউয়াল মিন্টু নব্বইয়ের দশকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘনিষ্টজন হিসাবে পরিচিত ছিলেন। তিনি প্রধানমন্ত্রীর পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা গওহর রিজভীর বেয়াই।
জাতীয় পার্টি বাহাউদ্দিন আহমেদ বাবুলকে সমর্থনের ঘোষণা দিয়েছে। আর বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সমর্থন পেয়েছেন আবদুল্লাহ আল কাফি রতন।
এছাড়া মনোনয়ন সংগ্রহ করেছেন গণসংহতি আন্দোলনের জুনায়েদ সাকি ও বিকল্প ধারার মাহী বি চৌধুরী।
ডিসিসি উত্তরের ২৮ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা মহিউদ্দিন তাহেরের (৫৫) চাওয়া, দলীয় সমর্থন দেওয়া হলেও নগরপিতার কাছে দলীয় বৃত্তের বাইরে থাকার মনমানসিকতা দেখতে চান তিনি।
তিনি বলেন, “ভবিষ্যত মেয়র যেই হোন, তিনি যেন নিজের ব্যক্তিগত ও দলীয় স্বার্থ না দেখে জনগনের স্বার্থ দেখেন।”
২৮ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা বেসরকারি চাকরিজীবী মওদুদ সাব্বির (৪০) নাগরিক ভোগান্তির পাশাপাশি দুর্নীতি দমনের দিকে নজর দেওয়ার কথা বললেন।
অবশ্য শ্রমজীবী মানুষ এসব নিয়ে মোটেও চিন্তিত নন; ভবিষ্যৎ মেয়র নগরবাসীর সুযোগ-সুবিধার কথা ভাবলেই তারা খুশি।
১২ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা ফুটপাতে মাটির তৈজসপত্র বিক্রেতা মোহাম্মদ শাহ আলম (৬০) বলেন, “যার কাছে গেলে আমরা উপকার পাব, আমার মনে হয় সেরকম কারো আসা উচিত। তিনি ব্যবসায়ী নাকি রাজনীতিবিদ এতে কিছু যায় আসে না। যেই আসুক মনে রাখতে হবে ভবিষ্যতে ভালো করতে হলে জনগণের ভালো করতে হবে।”
ভোট নিয়ে কেউ কেউ আবার বিরূপ মন্তব্যও করলেন। রিকশাচালক জামাল মিয়া (৪৫) যেমন বললেন, ভোটের আগে দেওয়া কথা নির্বাচিত হওয়ার পর কেউই রাখে না।
মিরপুর স্টেডিয়ামের সামনের চা বিক্রেতা মো. কালাম (২২) বলেন, “গরিবের কথা চিন্তা করে যে কাজ করবে, তাকেই ভোট দেব।”
অতীতের তিক্ত অভিজ্ঞতা থেকে কেউ কেউ ভোট না দেওয়ার সিদ্ধান্তের কথাও জানিয়েছেন।
এদেরই একজন মিরপুর ২ নম্বরের বাসিন্দা ফেরিওয়ালা কলিমুদ্দিনকে (৫৮) দেখা গেল মোবাইল ফোনে ওয়াজ শুনতে। ভবিষ্যৎ নগর পিতার কাছে কি চান জানতে চাইলে তিনি বলেন, “ভোট দেব না কারণ আমার ভোটে নির্বাচিত হয়ে তারা চুরি চামারি করবে এর দায়তো আমাকেও বহন করতে হবে। কেয়ামতের দিন আমি কি জবাব দেব। এজন্যই ভোট দিতে যাব না।”
নির্বাচন কমিশনের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ডিসিসি উত্তরের মোট ওয়ার্ড সংখ্যা ৩৬টি আর সংরক্ষিত ওয়ার্ড ১২টি।
নগরীর মোট ভোটার সংখ্যা ২৩ লাখ ৪৯ হাজার ৩১৩ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১২ লাখ ২৭ হাজার ৫৭১ জন এবং নারী ভোটার সংখ্যা ১১ লাখ ২১ হাজার ৭৪২ জন।