অনুশোচনা নেই কামারুজ্জামানের

একাত্তরে শেরপুরে যার কর্মকাণ্ডকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়কার নাৎসি বাহিনীর চেয়েও ভয়ঙ্কর বলে জানোয়ারের সঙ্গে তুলনা করেছে আদালত,  সেই মোহাম্মদ কামারুজ্জামানের মধ্যে সেসব কর্মকাণ্ডের জন্য কোনো অনুশোচনা নেই।    

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 Feb 2015, 07:40 AM
Updated : 21 Feb 2015, 08:11 AM

বরং বিচারের মুখোমুখি করে তাকে দেশবাসীর কাছে ভুলভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে বলে মনে করেন তিনি।

মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী দলটির সহকারী সেক্রেটারি জেনারেলের সঙ্গে শনিবার কারাগারে দেখা করার পর একথা জানিয়েছেন তার আইনজীবী তাজুল ইসলাম।

এদিন তাজুলের সঙ্গে চার আইনজীবী ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে যান কামরুজ্জামানের সঙ্গে দেখা করতে, মৃত্যুদণ্ডের চূড়ান্ত রায়ের পর মৃত্যু পরোয়ানার কথা ইতোমধ্যে জেনে গেছেন যিনি।

মৃত্যু পরোয়ানা শোনার পর কেমন আছেন এই জামায়াত নেতা- সাংবাদিকরা জানতে চাইলে আইনজীবী তাজুল বলেন, “তিনি মানসিকভাবে অত্যন্ত দৃঢ় আছেন। কোনো ভয়ভীতি নেই।”

একাত্তরে আল বদরের ময়মনসিংহ জেলা শাখা প্রধান কামারুজ্জামানকে ২০১৩ সালের ৯ মে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিল আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।

তার বিরুদ্ধে আনা সাতটি অভিযোগের মধ্যে তৃতীয় ও চতুর্থ অভিযোগে ট্রাইব্যুনাল তাকে ফাঁসির আদেশ দেয়। এর মধ্যে তৃতীয় অভিযোগে সোহাগপুর গণহত্যা ও ধর্ষণ এবং চতুর্থ অভিযোগে গোলাম মোস্তফা তালুকদারের হত্যার ঘটনা রয়েছে।

ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে যান কামারুজ্জামান।

২০১৪ সালের ৩ নভেম্বর আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি এসকে সিনহা নেতৃত্বাধীন চার সদস্যের বেঞ্চের রায়েও ১২০ জন পুরুষকে হত্যা ও বহু নারীকে ধর্ষণের মধ্য দিয়ে শেরপুরের সোহাগপুর গ্রামকে‘বিধবাপল্লীতে’ পরিণত করার অপরাধে তার মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখে।

আপিল বিভাগের রায়ে বলা হয়, “একমাত্র জানোয়ার ছাড়া আর কিছুর সঙ্গে অভিযুক্তের কর্মকাণ্ডের তুলনা চলে না।”

মো. কামারুজ্জামান

শেরপুরের বিধবারা

“হত্যা ও ধর্ষণের এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে তিনি সরাসরি সম্পৃক্ত ছিলেন। ওই ঘটনা ছিল অত্যন্ত নিষ্ঠুর, অমানবিক ও বর্বর। অপরাধ সংগঠনকারীরা কেবল পুরুষদেরকে হত্যা করেই ক্ষান্ত হয়নি, তাদের হাত থেকে বিধবারাও নিস্তার পাননি।

“এমনকি যে নারীরা অপরাধের ভয়াবহতা বুঝতে পেরে পালিয়ে গিয়ে ২-৩ দিন পর ফিরে এসেছিলেন, তারাও রেহাই পাননি।”

রায়ে বলা হয়, আলবদর বাহিনী গঠন এবং পরে সোহাগপুর গ্রামে গণহত্যা ও বিধবাদের ধর্ষণে কামারুজ্জামানের কার্যক্রম ছিল অমানবিক ও বিভীষিকাময়।

বিচারের কোনো পর্যায়ে কামারুজ্জামান তার এ ধরনের কাজের জন্য অনুশোচনা প্রকাশ তো করেনইনি, বরং আস্ফালন দেখিয়েছেন বলে পূর্ণাঙ্গ রায়ে বলা হয়।

আইনজীবী তাজুল ইসলাম

মুক্তিযুদ্ধের সময়কার কর্মকাণ্ডের জন্য তার কোনো অনুশোচনা আছে কি না- এ প্রশ্নে আইনজীবী তাজুল বলেন, “তার মধ্যে কোনো অনুশোচনা নেই। কারণ তিনি ওই সব কাজ করেননি, তিনি নির্দোষ। কারণ ওই সময় (একাত্তরে) তিনি এইচএসসির ছাত্র ছিলেন।”

তিনি আরও বলেন, “মৃত্যুদণ্ড হয়েছে সেজন্য তার কোনো দুঃখ নেই, কিন্তু তার দুঃখ দেশবাসীর কাছে তাকে ভুলভাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে।”

দেশবাসী ও দলের কর্মীদের কাছে তিনি দোয়া চেয়েছেন বলে জানান এই আইনজীবী। তাজুল আরও বলেন, আপিল বিভাগের রায় পুনর্বিবেচনায় (রিভিউ) আবেদন করতে বলেছেন কামারুজ্জামান।