রিভিউ করতে বলেছেন কামারুজ্জামান

একাত্তরে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে ট্রাইব্যুনালের দেওয়া মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল রেখে আপিল বিভাগের চূড়ান্ত রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) জন্য আবেদন করবেন মোহাম্মদ কামারুজ্জামান।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 Feb 2015, 05:08 AM
Updated : 21 Feb 2015, 08:10 AM

শনিবার ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের অপেক্ষায় থাকা জামায়াতে ইসলামীর এই সহকারী সেক্রেটারি জেনারেলের সঙ্গে দেখা করে তার আইনজীবী তাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, “পূর্ণাঙ্গ রায়ের ১৫ দিনের মধ্যে রিভিউ করতে হয়। সেই সময় অতিক্রান্ত হওয়ার আগেই রিভিউ করা হবে।”

সকাল সাড়ে ১০টার দিকে তাজুল ইসলামসহ পাঁচ আইনজীবী কারাগারে কামারুজ্জামানের সঙ্গে দেখা করতে যান। তার সঙ্গে ছিলেন শিশির মনির, এহসান এ সিদ্দিক, মশিউল আলম ও মতিউর রহমান আখন্দ।

ঘণ্টাখানেক পর বেরিয়ে এসে সংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তাজুল বলেন, “একজন বিচারক তাকে নির্দোষ বলেছিলেন। সেই বিচারকের দেওয়া আদেশের খুঁটিনাটি বিষয়গুলো ধরে রিভিউ পিটিশন করতে বলেছেন।”

মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের অপেক্ষায় থাকা একাত্তরের যুদ্ধাপরাধী কামারুজ্জামানের সঙ্গে এদিন পরিবারের সদস্যদের দেখা করার কথা তার ছেলে হাসান ইকবাল শুক্রবার জানালেও সকালে তাদের কাউকে ওই এলাকায় দেখা যায়নি।

কামারুজ্জামানের ছেলে হাসান ইকবাল টেলিফোনে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, আইনজীবীরা আলোচনা করে জানানোর পরই তারা দেখা করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন।

“আজকে (শনিবার) দেখা করার কথা থাকলেও সে সম্ভাবনা নেই।”

একাত্তরে আল বদরের ময়মনসিংহ জেলা শাখা প্রধান কামারুজ্জামানকে ২০১৩ সালের ৯ মে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিল আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।

কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে মোট সাতটি অভিযোগ ছিল। এর মধ্যে তৃতীয় ও চতুর্থ অভিযোগে ট্রাইব্যুনাল তাকে ফাঁসির আদেশ দেয়। এর মধ্যে তৃতীয় অভিযোগে সোহাগপুর গণহত্যা ও ধর্ষণ এবং চতুর্থ অভিযোগে গোলাম মোস্তফা তালুকদারের হত্যার ঘটনা রয়েছে।

প্রথম অভিযোগে শেরপুরের নালিতাবাড়ির কালীনগরের বদিউজ্জামানকে হত্যা এবং সপ্তম অভিযোগে রোজার দিনে টেপা মিয়ার ছেলেসহ পাঁচজনকে হত্যার কথা রয়েছে। এ দুই অভিযোগে ট্রাইব্যুনাল তাকে যাবজ্জীবন দেয়।

এছাড়া শেরপুর কলেজের তৎকালীন ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের প্রভাষক সৈয়দ আব্দুল হান্নানকে নির্যাতনের ঘটনায় দ্বিতীয় অভিযোগে তার ১০ বছরের সাজা হয়। পঞ্চম ও ষষ্ঠ অভিযোগ থেকে কামারুজ্জামানকে খালাস দেয় ট্রাইব্যুনাল।

মো. কামারুজ্জামান

ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে যান কামারুজ্জামান।

২০১৪ সালের ৩ নভেম্বর আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি এসকে সিনহা নেতৃত্বাধীন চার সদস্যের বেঞ্চ চূড়ান্ত রায় দেয়। বেঞ্চের বাকি সদস্যরা হলেন- বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহহাব মিঞা, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ও  বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী।

আপিলের রায়ে প্রথম অভিযোগ থেকে কামারুজ্জামানকে খালাস দেয়া হয়। সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে দ্বিতীয় ও সপ্তম অভিযোগে সাজা বহাল থাকে। তৃতীয় অভিযোগে আসামির অপরাধের বিষয়ে চার বিচারপতি একমত হলেও মৃত্যুদণ্ডের রায় আসে সংখ্যাগরিষ্ঠের মতামতের ভিত্তিতে।

বিচারপতি ওয়াহহাব মিয়া সোহাগপুর গণহত্যায় কামারুজ্জামানকে অভিযুক্ত করলেও এ অভিযোগে তিনি তাকে যাবজ্জীবন দণ্ডের পক্ষে মত দেন। সেই সঙ্গে ১, ২, ৪, ৭ নম্বর অভিযোগে ট্রাইব্যুনালের দেওয়া দণ্ড থেকে কামারুজ্জামানকে খালাস দেওয়ার পক্ষে মত দেন তিনি।

সংখ্যাগরিষ্ঠতার মত প্রাধান্য পাওয়ায় এই অপরাধে আসামির দণ্ড হবে মৃত্যুদণ্ড।

চতুর্থ অভিযোগে সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে কামারুজ্জামানকে দোষী সাব্যস্ত করা হলেও মৃত্যুদণ্ডের সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন করা হয়।

অপর বিচারক এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী দণ্ডে একমত পোষণ করলেও ‘সুপিরিয়র রেসপনসিবিলিটির’ ক্ষেত্রে তার মত ‍দিয়েছেন।