দীর্ঘ জটলা আর মানুষের ঢল- একুশে বইমেলা ঘিরে বিগত বছরগুলোতে এমন দৃশ্য ছিল নিয়মিত। রাজনৈতিক অস্থিরতায় গত ঊনিশ দিন সে দৃশ্যের দেখা না মিললেও নির্দ্বিধায় বলা যায়, শুক্রবার যারা এই তল্লাটে ঢুঁ মেরেছেন তাদের হতাশা অন্তত নব্বই ভাগ মিলিয়ে গেছে।
Published : 20 Feb 2015, 07:30 PM
হ্যাঁ, ঠিকই ধরেছেন। মহান একুশের আগের বিকেলে দর্শক উপস্থিতির পুরোনো চিত্র খুঁজে পেয়েছে অমর একুশে গ্রন্থমেলা।
বিকাল থেকেই স্থানে স্থানে দীর্ঘ জটলা ঠেলে সামনে এগোতে হচ্ছিল বইপ্রেমীদের।
পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী ছুটির দিনে সকাল ১১টা থেকেই খুলে দেওয়া হয় মেলার দ্বার। তবে সকালের দিকে দর্শনার্থীদের উপস্থিতি স্বাভাবিক থাকলেও বিকালে তা আর সামাল দেওয়া যায়নি।
দুই অংশ বিভক্ত হওয়ার আগে কেবল বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণকে ঘিরে বইমেলার স্টলগুলো সাজানো হত। তখন টিএসসি থেকে একাডেমি চত্বর জুড়ে তৈরি হতো মানুষের জটলা।
তবে গত বছর থেকে মেলার বড় একটি অংশ চলে গেছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। এ বছর উদ্যান অংশের পরিসরও বাড়িয়ে প্রায় দ্বিগুণ করা হয়েছে।
একদিকে হরতাল-অবরোধ অন্যদিকে বিস্তৃত পরিসরের কারণে ক্রেতাদর্শকদের উপচেপড়া ভিড়ের সেই চিত্রটির দেখা পাচ্ছিলেন না প্রকাশকরা। এবছর ছুটির দিনগুলোতে দর্শক সমাগম কিছুটা বাড়লেও শুক্রবারের উপস্থিতি আগের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে- এমন মন্তব্য এল কয়েকজন প্রকাশকের কাছ থেকে।
প্রকাশনা সংস্থা নন্দিতার প্রকাশক বি ভি রঞ্জন জানান, মেলায় আগেও ছুটির দিনগুলোতে কমবেশি দর্শক সমাগম হয়েছিল। তবে আজকের ক্রেতা উপস্থিতিতে বেশ লক্ষণীয়। ক্রেতারা যারা আসছেন সবাই বই কিনেই ফিরছেন।
একই ধরনের মূল্যায়ন চিত্রা প্রকাশনীর স্বত্ত্বাধিকারী শাম্মী আক্তারের।
“অন্যান্য দিনের তুলনায় আজকে বিক্রি ভালো। দর্শক উপস্থিতিও অনেক। মেলা শেষ হওয়ার আগ পর্যন্ত এই ধারা অব্যাহত থাকবে বলে আশা করছি।”
গার্মেন্টস ব্যবসায়ী মাসুদ স্ত্রী-মাসহ পরিবারের ছয় সদস্য নিয়ে মেলায় এসেছেন। সন্ধ্যার আগে আগেই দুই হাতভর্তি বই নিয়ে উত্তরায় নিজের বাসায় ফেরার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন।
কী বই কিনেছেন- জানতে চাইলে তিনি বলেন, “ছেলে-মেয়েরা জাফর ইকবাল, আনিসুল হক, সুমন্ত আসলামকে খুব পছন্দ করে। আমি অবশ্য গতানুগতিক এই ধারার একটু বাইরে বই পছন্দ করি।”
প্যারিচাঁদ মিত্রের আলালের ঘরের দুলাল, শহীদুল্লাহ কায়সারের একটি সমগ্র ও কাজী নজরুল ইসলামের কয়েকটি বই কিনেছেন মাসুদ।
মেলায় কথা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুণ শিক্ষক দিদারুল ইসলামের সঙ্গে। এ বছর তৃতীয়বারের মতো মেলায় এসেছেন তিনি।
দিদার জানান, আজকের মতো ভিড় এবছর তিনি দেখেননি। মানুষের উপচে পড়া ভিড় ঠেলে মেলায় ঢুকতে তার বেশ বেগ পেতে হয়েছে।
আশা প্রকাশ করলেন, ২১ ফেব্রুয়ারি এই ভিড় আরো কয়েকগুণ বাড়বে। কারণ মেলা খুলে দেওয়া হবে সকাল ৮টায়।
মেলার ২০তম দিনে বেচাকেনার মন্দাভাব যে অনেকটা কেটেছে তা জানা গেল সাকী প্রকাশনীর বিক্রয়কর্মী লিয়নের মুখেও। উদ্যানের পূর্ব কোণের নির্জন স্থানে তার স্টলে ৫ ফেব্রুয়ারিতে একটি বইও বিক্রি হয়নি বলে এর আগে অভিযোগ করেছিলেন তিনি।
ভিড়ের কারণে এদিন জনপ্রিয় লেখকদেরও সহযোগিতাও চাইতে দেখা গেছে মেলার আয়োজকদের। লেখকরা যাতে ভক্তদের অটোগ্রাফ দেওয়ার জন্য একটু প্রশস্ত স্থানে অবস্থান করেন, মাইকে সেই অনুরোধ আসছিল বার বার।
লেখক মুহম্মদ জাফর ইকবাল অন্যান্য দিনের মতো মেলার প্রবেশ পথের বটগাছটির নিচে বসে পাঠকদের সঙ্গে কথা বলেন, অটোগ্রাফ দেন। সময়ের জনপ্রিয় এই লেখকের অটোগ্রাফ পেতে সেখানে দীর্ঘ লাইনে দেখা গেছে নানা বয়সী দর্শনার্থীদের।