সেবা নিতে চট্টগ্রামের মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রগুলোতে গিয়ে নির্যাতনে মৃত্যুর ঘটনাও ঘটছে। মাদকের আসক্তি দূর করার বদলে কয়েকটিতে মাদক বিক্রি চলছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।
Published : 02 Feb 2015, 03:23 PM
নগরীতে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম মেট্রো উপঅঞ্চলের অনুমোদিত মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্র নয়টি।
এগুলো হল- হালিশহর মধ্য রামপুরায় ‘তরী’, পশ্চিম রামপুরায় ‘ছায়ানীড়’, বৌবাজারের ‘সুন্দর জীবন’, হাউজিং এস্টেট এলাকায় ‘অংকুর’, সবুজবাগের ‘নয়ন’, দক্ষিণ খুলশীতে ‘দীপ’, কাতালগঞ্জে ‘আর্ক’, চান্দগাঁও আবাসিক এলাকায় ‘প্রশান্তি’, আগ্রাবাদ সিডিএতে ‘সময়’।
এগুলোর মধ্যে রোগীর মৃত্যুর পর বন্ধ হয়ে গেছে ‘ছায়ানীড়’ ও ‘সময়’।
গত ৩১ অক্টোবর ‘ছায়ানীড়’ থেকে নিজাম উদ্দিন (৩০) নামে এক যুবকের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। নিহতের পরিবারের অভিযোগ, নিজামকে পিটিয়ে হত্যা করেছে কেন্দ্রের সদস্যরা।
এ ঘটনায় নিহতের স্ত্রী কেন্দ্রের পরিচালক দুলাল সরকারসহ পাঁচজনকে আসামি করে মামলা করেছেন ডবলমুরিং থানায়।
এদিকে ‘সময়’ এ কর্মীদের মারধরে আহত সুজিত ধর নামে এক ব্যক্তির চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যাওয়ারও অভিযোগ রয়েছে।
গত বছরের ২১ ডিসেম্বর সুজিতকে ওই নিরাময় কেন্দ্রে ভর্তি করা হয়েছিল। ২৫ ডিসেম্বর গুরুতর আহত অবস্থায় সুজিতকে নগরীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হলে তার মৃত্যু হয়।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম মেট্রো উপঅঞ্চলের তত্ত্বাবধায়ক চৌধুরী ইসরুল হাসান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, এই দুটি কেন্দ্রের বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়ার পর তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে।
বর্তমানে প্রতিষ্ঠান দুইটির পরিচালকরা পলাতক বলে জানান তিনি।
সম্প্রতি ‘অংকুর’ এর বিরুদ্ধে নারী নির্যাতন, মাদক বিক্রিসহ বিভিন্ন অভিযোগ ওঠে। তবে তদন্তে কেন্দ্রটির বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছেন চৌধুরী ইমরুল।
সেবাগ্রহীতারা মাদকের জন্য অস্থির হয়ে উঠলে তাদের মারধর করা এবং যথাযথ কাউন্সিলিং না করারও অভিযোগ আছে কেন্দ্রগুলোর বিরুদ্ধে।
কিছু কেন্দ্রে মাঝে মাঝে দুর্ঘটনা ঘটার কথা স্বীকার করে এজন্য কর্মীদের অনভিজ্ঞতা আর অদক্ষতাকে দায়ী করেছেন ‘দীপ’ মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রে নির্বাহী পরিচালক এমএ ফয়েজ।
“অনেকসময় লোকজন না জেনেবুঝে ঢালাও অভিযোগ করে। তবে মাদকাসক্তদের কোন ধাপে কেমন চিকিৎসা দিতে হবে সে সম্পর্কে অনেক কর্মী পর্যাপ্ত জ্ঞান না রাখায় মাঝে মাঝে কিছু সমস্যা দেখা দেয়।”
তাছাড়া অনেক সময় রোগীর শারীরিক অবস্থার তথ্য পরিবার গোপন করায় তাদের অনেক সময় চিকিৎসা দিতে সমস্যা হয় বলে জানান ফয়েজ।
মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা চৌধুরী ইমরুল বলেন, “শর্তপূরণ সাপেক্ষে আমরা নিরাময় কেন্দ্রগুলোকে অনুমোদন দিয়ে থাকি। লোকমুখে আমরাও অনেক অভিযোগ পাই। কিন্তু কেউ লিখিতভাবে অভিযোগ করে না। লিখিত ও সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে তদন্ত করে যাথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রগুলো থেকে প্রতিমাসে তথ্য ও প্রতিবেদন নেওয়া বলেও জানান তিনি।