পেট্রোল বোমা নিয়ে উৎকণ্ঠার মধ্যে আরাফাত রহমান কোকোর মৃত্যু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক বিরোধী দলীয় নেতা খালেদা জিয়ার মধ্যে সাক্ষাতের সম্ভাবনা আলোর মুখ না দেখায় হতাশা প্রকাশ করেছেন কয়েকজন ভাষ্যকার।
Published : 24 Jan 2015, 10:44 PM
শনিবার কোকোর মৃত্যুতে শোকগ্রস্ত সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে সমবেদনা জানাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার গুলশানের কার্যালয়ে গিয়ে ফটক বন্ধ পেয়ে ফিরে যান।
বিএনপি সমর্থক হিসাবে পরিচিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক এমাজ উদ্দিন আহমদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন “এটা খুবই বিব্রতকর পরিস্থিতি। কিন্তু আমার মনে হয় এর কারণ হলো ‘ল্যাক অফ কমিউনিকেশন।’ আমি নিজেও গিয়েছিলাম। এবং সেলিমা রহমান আমাকে বললেন, তিনি(খালেদা জিয়া) কথাও বলতে পারছেন না, অবস্থা খুব খারাপ। প্রধানমন্ত্রী আসবেন এরকম খবর আগে আগেই বেগম খালেদা জিয়াকে পৌঁছানো যেত। কিন্তু সেটা হয়নি।”
প্রধানমন্ত্রী যাবার প্রায় ঘণ্টা খানেক আগে থেকেই তো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার খালেদা জিয়ার গুলশান অফিসে যাওয়ার খবর গণমাধ্যমগুলো প্রচার করছিল, এই সময়টা কি প্রস্তুতির জন্য যথেষ্ট ছিল না?
এমন প্রশ্নে এমাজ উদ্দিন বলেন, “না না আরও আগে থেকে জানানো দরকার ছিল। আর তা না হওয়ায় বিব্রতকর পরিস্থিতিই তৈরি হয়েছে। এটা তো রাজনৈতিক ইস্যু না, এখানে তো রাজনীতির ব্যাপার নেই। এটা ৪৫/৪৬ বছর বয়সী ছেলেকে হারানো মায়ের কষ্ট, বেদনা।”
রাজনীতির বাইরে ‘সামাজিক-মানবিকতা’ বোধের সম্পর্কগুলোর চর্চা কী তাহলে বড় দলগুলোর সংস্কৃতি থেকে বিদায় নিয়ে ফেলল! -এরকম বিস্ময় প্রকাশ করেন জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক মোজাম্মেল হোসেন মঞ্জু।
সকালের খবর পত্রিকার সম্পাদক মঞ্জু বলেন, “শেখ হাসিনা সঠিক কাজ করেছেন, কিন্তু খালেদা জিয়া যা করলেন, তাতে এক কথায় ভালো কাজ করেননি। আমার মনে হয়েছে বিএনপি’র এই আচরণ অসৌজন্যমূলক এবং অমানবিক।
“মৃত্যু এবং রাজনীতি দুটোই সম্পূর্ণ আলাদা ব্যাপার। মনে রাখতে হবে যে আরাফাত রহমান কোকো সাজাপ্রাপ্ত আসামি এবং তিনি সাজা এড়াতে পালিয়ে ছিলেন দেশের বাইরে। কিন্তু তার মৃত্যু চলমান রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার মধ্যে পুরো জাতির আশান্বিত হবার একটা সুযোগ তৈরি করে। দুজনেই সন্তানের মা। বিষয়টিকে রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখার বিষয়টি আমার কাছে ঠিক মনে হয়নি।”
“তিনি গেইট পর্যন্ত গেলেন এবং ইনি গেইট খুললেন না- এইটা জাতির জন্য খুবই দুঃখজনক ঘটনা। আমরা মর্মাহত”- এইভাবেই প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক হারুন-উর-রশিদ।
তিনি বলেন, “দেশের মানুষ আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছিল, অন্তত দুই নেত্রীর পরস্পরের সাথে দেখা করার সুযোগ ছিল। খালেদা জিয়া যদি অনুকূল সাড়া দিতেন, সারা দেশের মানুষ খুশি হত। এ থেকে বোঝা গেল, বিএনপি রাস্তার শক্তির ওপর তাদের কর্মকাণ্ড চালিয়ে যেতে চান।”
হারুণ-উর-রশিদ বলেন, “দেশে বিদ্বেষ প্রতিহিংসার রাজনীতি যে কোথায় গিয়ে ঠেকেছে-এই ঘটনাই তার প্রমাণ দিয়ে গেল।”