বছরের শুরুতেই হরতাল-অবরোধের মতো রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে বাংলাদেশের সামগ্রিক পরিবহন ব্যবস্থা।
Published : 17 Jan 2015, 11:45 PM
পরিবহন ব্যবসায়ীরা বলছেন, গাড়ি চালাতে না পারার পাশাপাশি ভাংচুর-অগ্নিসংযোগে তারা কোটি কোটি টাকার লোকসানে পড়েছেন।
গত ৫ জানুয়ারি থেকে লাগাতার অবরোধ চলছে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলের। নির্বাচনের বছর পূর্তির ওই দিনটির আগেই সংঘাতের আশঙ্কায় বন্ধ হয়ে যায় বাস চলাচল।
১২ দিনের অবরোধে অবরোধকারীদের দেওয়া আগুনে পুড়েছে কয়েকশ’ গাড়ি; ভাংচুর হয়েছে অসংখ্য।
টানা অবরোধে ট্রেন, লঞ্চ ও বিমান চলাচল করলেও বিঘ্নিত হচ্ছে দূরপাল্লার বাস চলাচল।
অবরোধ শুরুর কয়েকদিন পর পুলিশ-বিজিবি পাহারায় বাস চলাচল শুরু হলেও রংপুরে বাসে আগুন দিয়ে পাঁচজনকে পুড়িয়ে হত্যার পর যাত্রীরা সড়ক পথে নিরাপদ বোধ করছেন না।
ঢাকার আন্তঃজেলা বাস টার্মিনালগুলো ঘুরে পরিবহনকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, চট্টগ্রাম, খুলনা, বরিশাল ও সিলেট রুটে কিছু বাস চলাচল করলেও উত্তরাঞ্চলে বাস চলছে না বললেই চলে।
“বিরোধী দল গাড়ি চালাতে নিষেধ করে। সরকারি দল বলে গাড়ি রাস্তায় নামাও। আমরা তো ভাই বিপদে,” চলমান পরিস্থিতি তুলে ধরে বলেন কমলাপুরে ইউনিক পরিবহনের কাউন্টারের কর্মী আব্দুল হক।
তিনি বলেন, আতঙ্কের কারণে যাত্রীরা বাসে যেতে আগ্রহ দেখাচ্ছে না। আবার বাস ছাড়লেও পথে ভাংচুর-আগুনের ভয় নিয়েই থাকতে হচ্ছে।
আব্দুল হক জানান, যাত্রী পেলে রাতে তাদের চার থেকে পাঁচটি বাস সিলেট ও চট্টগ্রামের উদ্দেশে ছেড়ে যাচ্ছে।
শনিবার সায়দাবাদ, মহাখালী, কল্যাণপুর ও গাবতলী এলাকায় ঘুরে দেখা যায়, এসব এলাকায় অধিকাংশ কাউন্টার তালাবদ্ধ। হাতেগোনা দু-চারটি খোলা থাকলেও সেখানে যাত্রী সংখ্যা নগন্য।
গাবতলী থেকে উত্তরবঙ্গে চলাচলকারী রোজিনা পরিবহনের টিকিটম্যান সবুর মিয়া বলেন, “রংপুরের ঘটনার পর যাত্রীর সংখ্যা একেবারেই কমে গেছে।”
তিনি অভিযোগ করেন, মাঝরাতের তাদের দু’একটি বাস ঢাকা ছাড়লেও সরকারের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী পুলিশি নিরাপত্তা পাচ্ছেন না তারা।
তবে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক এনায়েত উল্লাহ দাবি করেন, পুলিশি পাহারায় দূরপাল্লার গাড়ি চলাচল করছে।
চলমান পরিস্থিতিতে সংগঠনের পক্ষ থেকে কী করছেন- জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আমরা সমাবেশ করে যানবাহনকে অবরোধের আওতামুক্ত রাখার দাবি জানিয়েছি।”
হানিফ পরিবহনের কমলাপুর কাউন্টারের ব্যবস্থাপক জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, প্রতি রাতে চট্টগ্রামের উদ্দেশে তাদের একটি বাস ছেড়ে যাচ্ছে। তবে উত্তরবঙ্গের রুটে কোনো বাস ছাড়ছে না।
শ্যামলী পরিবহনের গাবতলী কাউন্টারের কর্মকর্তা আলমগীর হোসেনও বলেন, উত্তরবঙ্গের পথে গাড়ি চালানো আপাতত বন্ধ রেখেছেন তারা।
এ কে ট্রাভেলসের ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা মোহাম্মদ সুলতান জানান, শুক্রবার শুরু হওয়া দ্বিতীয় দফায় ইজতেমা উপলক্ষে খুলনা-বাগেরহাট, কুষ্টিয়া এবং উত্তরবঙ্গের কয়েকটি জেলায় তারা সীমিত আকারে বাস পাঠাচ্ছেন। তবে যাত্রী পাওয়া যাচ্ছে না।
বরিশাল অঞ্চলের পথে চলাচলকারী সাকুরা পরিবহনও দিনে কয়েকটি বাসই চালাচ্ছে।
সোহাগ পরিবহনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আনোয়ার তালুকদার শিমুল বলেন, নাশকতার আশঙ্কায় যাত্রী পরিবহন বন্ধ রাখলেও সারাদেশে ১২৭টি কাউন্টারে চাকরিরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন ঠিকই দিতে হচ্ছে তাদের।
“গাড়ি বন্ধ থাকলেও আমাদের খরচ থেমে নেই, ব্যাংক ঋণ মাফ নেই। প্রতিমাসে পৌনে তিন কোটি টাকা স্টাফ স্যালারি দিতে হচ্ছে।”
এছাড়া বিভিন্ন স্থানে সোহাগ পরিবহনের ১৮টি গাড়ি ভাংচুর করা হয়েছে বলেও জানান শিমুল।
রাজনীতিকদের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, “সরকারি দল আর বিরোধী দল উভয়ে বলছে, নিজেরা সঠিক পথে আছে। অথচ লোকসান গুনছি আমরা, তাহলে যত দোষ আমাদের!”