বিএনপির ডাকা লাগাতার অবরোধের পাঁচ দিনে তিনটি নাশকতার ঘটনায় এলোমেলো হয়ে গেছে পূর্ব রেলের সময়সূচি।
Published : 10 Jan 2015, 10:23 PM
শনিবার সকাল থেকে চট্টগ্রাম ও ঢাকা থেকে বাতিল হয়েছে নির্ধারিত দুটি ট্রেনের যাত্রা। নিরাপত্তা জোরদারে গতি কমিয়ে এবং পাইলট ইঞ্জিনের ব্যবস্থা করেও থামানো যায়নি দুর্ঘটনা।
এর আগে ২০১৩ সালের ডিসেম্বর মাসেও বিএনপি-জামায়াতের নাশকতায় ভেঙ্গে পড়েছিল রেলের সময়সূচি।
এই বিপর্যয় কাটিয়ে ট্রেনের সূচি ঠিক করতে কমপক্ষে এক সপ্তাহ সময় লাগতে পারে বলে রেল কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
দেশব্যাপী অবরোধে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে সীমিত পরিসরে বাস চলাচল করায় ঢাকা ও চট্টগ্রামগামী ট্রেনে যাত্রীদের ভিড় উপচে পড়ছে গত কয়েকদিন ধরে।
নাশকতা ও ধীরগতির কারণে ট্রেনের সময়সূচিতে হেরফের হওয়ায় ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টেশনে উৎকণ্ঠিত যাত্রীদের পাঁচ থেকে সাত ঘন্টা পর্যন্ত প্ল্যাটফরমে অপেক্ষা করতে দেখা গেছে।
বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক আমজাদ হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, নিরাপত্তা এবং সময় একসঙ্গে রক্ষা করা সম্ভব নয়। সর্বোচ্চ গুরুত্ব এখন নিরাপত্তায়।
“এ কারণে সময়ের হেরফের হচ্ছে। কয়েকটি স্থানে পরপর দুর্ঘটনার কারণে সমস্যা হচ্ছে। সূচির সমস্যা সাময়িক, অবরোধ প্রত্যাহার হলেই সূচি ঠিক হয়ে যাবে।”
নিরাপত্তার বিষয়ে জোর দেওয়া হচ্ছে জানিয়ে আমজাদ বলেন, কুমিল্লার ঘটনায় লাইনের ক্ষুদ্র একটি অংশ কেটে রাখা হয়। পাইলট ইঞ্জিনসহ দুটি ট্রেন ওই এলাকা অতিক্রমও করে যায়। দুর্ঘটনায় পরে মহানগর গোধূলীর ইঞ্জিন এবং একটি বগি।
রেলে ৩ নাশকতা
মঙ্গলবার থেকে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ডাকা অবরোধ কর্মসূচির মধ্যে বুধবার থেকেই শুরু হয় রেল পথে নাশকতা।
বুধবার রাতে সিলেটের মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়ায় ফিশপ্লেট কেটে ২০ ফুট দীর্ঘ রেললাইন উপড়ে ফেলে দুর্বৃত্তরা। এতে রাত ৩টায় সিলেট থেকে চট্টগ্রামমুখী উদয়ন এক্সপ্রেসের ছয়টি বগি লাইনচ্যুত হয়ে আহত ১২ যাত্রী হন।
এতে ১৮ ঘণ্টা রেল যোগাযোগ বন্ধ থাকার পর বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে ট্রেন চলাচল শুরু হয়।
কুলাউড়ায় ট্রেন লাইনচ্যুতির ঘটনায় কর্তব্য অবহেলার অভিযোগে শ্রীমঙ্গলের উর্ধতন উপ-সহকারী প্রকৌশলী (পথ) আলী আজমকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়; মামলা করা হয় অজ্ঞাত পরিচয় ২৫ জনকে আসামি করে।
পরদিন বৃহস্পতিবার ভোরে জয়পুরহাট সদর উপজেলার উরি সেতুর কাছে রেল লাইনের প্যান্ডেল ক্লিপ ও ফিশপ্লেট খুলে প্রায় ৩৬ ফুট রেল লাইন উপড়ে ফেলা হয়।
এতে করে চার ঘণ্টা জয়পুরহাটের সঙ্গে ঢাকা, রাজশাহী, দিনাজপুর, পার্বতীপুর, সৈয়দপুর ও নীলফামারীর রেল যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ছিল।
এর আগে বুধবার রাতে সাড়ে ৯টার দিকে জয়পুরহাট সদরের পুরানশৈল এলাকায় রেল লাইনে নাশকতার চেষ্টার অভিযোগে ধারালো অস্ত্রসহ দুই কিশোরকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
সবশেষ শনিবার ভোর পৌনে ৫টার দিকে কুমিল্লার নাঙ্গলকোট রেল স্টেশনসংলগ্ন এলাকায় রেললাইন কেটে ফেলায় লাইনচ্যুত হয় চট্টগ্রামগামী মহানগর গোধূলী। কাটা লাইন মেরামত শেষে বেলা পৌনে ১১টায় ফের ট্রেন চলাচল শুরু হয়।
পরপর তিন দিন পূর্ব রেলের তিনটি পয়েন্টে নাশকতাজনিত দুর্ঘটনার পরই ভেঙ্গে পড়ে ট্রেনের সূচি।
ট্রেনসূচিতে বিপর্যয়
নাশকতায় রেলের দুর্ঘটনা রোধ করে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে মূল ট্রেনের সামনে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর থেকে চালু করা হয় পাইলট ইঞ্জিন।
ঘণ্টায় ৭০ কিলোমিটারের বদলে রাতের ট্রেন চলতে থাকে ৪০ থেকে ৪৫ কিলোমিটার গতিতে।
পূর্ব রেলের বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা ফিরোজ ইফতেখার বলেন, গতি কমানোয় এমনিতেই দেরিতে গন্তব্যে পৌঁছাচ্ছিল ট্রেন।
এরপর আবার শনিবারের নাশকতাজনিত দুর্ঘটনায় হেরফের হয়ে যায় রেলের সময়সূচি।
তিনি জানান, চট্টগ্রাম থেকে শনিবারে নির্ধারিত সকাল ছয়টা ৪০ মিনিটে সুবর্ণ এক্সপ্রেস ছেড়ে গেলেও ঢাকায় পৌঁছেছে তিন ঘণ্টা দেরিতে বিকাল চারটা ২০ মিনিটে।
রেলের নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, শুক্রবার রাতে ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা (নির্ধারিত সময়ের চার ঘন্টা পর) মহানগর গোধূলী ট্রেনটি শনিবার সকালে চট্টগ্রাম থেকে মহানগর প্রভাতী হিসেবে ছেড়ে যাওয়ার কথা ছিল।
দুর্ঘটনার পর চট্টগ্রাম থেকে সকাল ৭টায় নির্ধারিত মহানগর প্রভাতী ট্রেনের যাত্রা বাতিল করা হয়।
এদিকে চট্টগ্রাম ছেড়ে যাওয়া প্রভাতী ঢাকা থেকে মহানগর গোধূলী হয়ে আসার কথা। প্রভাতী চট্টগ্রাম থেকে না যাওয়ায় বাতিল হয় ঢাকা থেকে গোধূলীর যাত্রাও।
চট্টগ্রাম থেকে শনিবার ঢাকাগামী মহানগর গোধূলী ট্রেনটি বিকাল ৩টায় ছেড়ে যাওয়ার সময় নির্ধারিত থাকলেও রাত সাড়ে ৮টায়ও ট্রেনটি ছেড়ে যায়নি।
ঢাকা মেইলের নির্ধারিত সময় শনিবার রাত সাড়ে ১০টা হলেও সেটি ছেড়ে যাবে রাত ১২টার দিকে।
কুলাউড়ার দুর্ঘটনার কারণে সিলেট থেকে ট্রেন আসতে না পারায় সবচেয়ে দেরিতে ছেড়েছে সিলেটগামী উদয়ন এক্সপ্রেস ট্রেন।
শুক্রবার রাত ৯টা ৪৫ মিনিটে এটি চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে যাওয়ার কথা থাকলেও ট্রেনটি ছেড়েছে শনিবার সন্ধ্যা ৭টায়।
একইভাবে সুর্বণ এক্সপ্রেস ঢাকা থেকে শনিবার বিকাল ৩টায় ছাড়ার সময় থাকলেও ছেড়েছে বিকাল সাড়ে ৫টায়।
কমলাপুর থেকে মহানগর প্রভাতী সকালে ছেড়ে বিকাল পৌনে ৪টায় চট্টগ্রাম আসার কথা থাকলেও রাত সাড়ে ৮টায় সেটি ফেনী পর্যন্ত এসেছে।
ঢাকা থেকে রাত সাড়ে ১১টায় তূর্ণা ছাড়ার কথা থাকলেও তা নিশ্চিত নয়। চট্টগ্রাম থেকে যে ট্রেন মহানগর গোধূলী হিসেবে ছাড়ে সেটিই ঢাকা থেকে তূর্ণা হিসেবে আসে। কিন্তু শনিবার রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত গোধূলী চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে যায়নি।
ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম মেইল রাত সাড়ে ১০টায় ছাড়া সময় থাকলেও সেটি কবে নাগাদ ছাড়তে পারবে তা জানেন না রেল কর্মকর্তারাও।